Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীর নামে মামলা, গ্রেফতার

নেতাকর্মীরা আতঙ্কিত, বাড়িছাড়া পুলিশ বলছে নাশকতার অভিযোগ, বিএনপির দাবি রাজনৈতিক হয়রানি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ। সমাবেশকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এদিকে সমাবেশ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার। খুলনায় ২৬ জন গ্রেফতার, টাঙ্গাইলে ২৫৩ বিরুদ্ধে মামলায় ৫০ জন গ্রেফতার, নারায়ণগঞ্জ ৫০ জন গ্রেফতার, ঝালকাঠি ৭৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতার তথ্যের এ প্রতিবেদনÑ

খুলনা ব্যুরো জানান, বিশেষ অভিযানের নামে খুলনায় বিনা কারণে ২৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নেতৃবৃন্দ। বিশেষ অভিযানের নামে গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। গতকাল দুপুরে প্রেসব্রিফিংয়ের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতদের নামের তালিকা তুলে ধরেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শফিকুল আলম মনা। কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, দেশ আজ এক কঠিন সঙ্কট সময় অতিক্রম করছে। প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের কর্তব্য হলো মুক্তিকামী ১৮ কোটি মানুষের বিপক্ষে না দাঁড়িয়ে, অবৈধ নিশিরাতের সরকারের অন্যায় হুকুম তামিল না করে, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করা। পুলিশ বিশেষ অভিযানের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, পরিবারের সদস্যদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ ২৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত সমাজবিরোধী অপশক্তিকে দমনের পরিবর্তে পুলিশ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপির ত্যাগী পরিক্ষীত রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, গণহারে গ্রেফতার এবং গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার ও ঢাকায় বিএনপির গণ সমাবেশে অংশ নিলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে যা মোটেই কাম্য নয়। অ্যাড. মনা বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণ-সমাবেশ বানচাল করতে বিশেষ অভিযানের নামে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি-বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে ধারাবাহিকভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপি। গত ২ সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশের দায়েরকৃত ১০টি মামলায় ২৫৩ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৬ শতাধিককে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর রিমান্ড এবং কারাগারে পাঠানো হয়েছে ৫০ নেতাকর্মীকে।

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ করে বলেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য পুলিশ এসব ‘গায়েবি’ মামলা দায়ের করছে। ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্থ করতেই এ মামলা। তারা গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরে থাকতে পারছেন না তারা। তবে বিএনপি নেতাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা পুলিশ। তাদের দাবি, নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতিসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এসব মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।
জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্থ করতেই পুলিশ ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা গায়েবি মামলা দায়ের করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য বাড়ি ঘরে হানা দিচ্ছে। পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ কোথাও কোনো ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। কাউকে বাড়ি থেকে, কাউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। মামলার কোনো সত্যতা নেই। অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। শত বাধা সত্বেও টাঙ্গাইল জেলা থেকে বিএনপির ২০ থেকে ২৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিবো আশা করছি।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয়। ককটেলও উদ্ধার করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। এখন মন্তব্য করা সঠিক হবে না।

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সমাবেশকে ঘিরে উজ্জীবিত ছিল নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। রীতিমত নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথ দখল করে রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে বিরাজ করছে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক। নারায়ণগঞ্জের সাত থানায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নতুন ও পুরাতন মামলায় নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে দিনে ও রাতে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চালাচ্ছেন গণ গ্রেফতার। এতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে পরিবারগুলো। ফলে গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এদিকে গত ১৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার সাতটি থানায় নতুন করে মোট ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিস্ফোরক আইনে করা প্রতিটি মামলাতেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ৮টি মামলার বাদী পুলিশ এবং দু’টি মামলায় ছাত্রলীগের দুই কর্মী ও একটিতে শ্রমিক লীগের নেতা বাদী হয়েছেন।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি যাতে ফের সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য নতুন করে মামলা ও গ্রেফতারের কৌশল নেয়া হয়েছে। গণসমাবেশকে বানচাল করতেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী সমর্থক পেশাজীবীদেরও মামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে। নেতাকর্মীদের আশঙ্কা-সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগে বাড়তে পারে আরও গ্রেফতার ও মামলা।

এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে আওয়ামী পুলিশ। সারাদেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়ে গেছে। গণসমাবেশকে ঘিরে উজ্জীবিত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির গণজোয়ার দেখে সরকার দিশেহারা।

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির নলছিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৭৯ নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধরণ সম্পাদক জুয়েল খান বাদী হয়ে নলছিটি থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান হেলাল ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম গাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম শরীফসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাত ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।

মামলায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল আলম গিয়াস, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি তৌহিদ আলম মান্না, সাধারণ সম্পাদক সাইদুল কবির রানা, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পলাশ সজ্জন, বর্তমান সভাপতি সাইদুল ইসলাম রনি ও সাধারণ সম্পাদক সুজন খানকেও আসামি করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ