পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় আগাম শীত পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত বেশ ঝেঁকে বসেছে। সাধারণত তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রিতে নেমে এলে শীত অনুভূত হয়। গতকাল সারাদেশে তাপমাত্রা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশ হ্রাস পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলে পুরোপুরি শীত নেমেছে। তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১২.৪ ডিগ্রী। রাজধানীতে ছিল সর্বনি¤œ ১৯ ডিগ্রি। তাপমাত্রা ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি আগাম শীতের বার্তা দিচ্ছে। সাধারণত দেশে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীত ঝেঁকে বসতে শুরু করে। এ হিসেবে, এবার আগেই শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত অনেকের কাছে প্রিয় হলেও এর কিছু উপসর্গ রয়েছে। বিশেষ করে নি¤œবিত্ত ও খেঁটে খাওয়া মানুষের সমস্যা দেখা দেয়। ঠান্ডাজনিত রোগবালাই থেকে শুরু করে শীতবস্ত্র সঙ্কটে পড়ে। ভালো দিক হচ্ছে, এ সময়ে ব্যাপকহারে শীতের শাক-সবজি ও রবি শস্যর আবাদ হয়। কৃষকরা দেশের খাদ্যের সবচেয়ে বড় উৎস বোরো ধানের অবাদে নিয়োজিত হয়। ফলে শীতের মৌসুমটি ধান-চাল ও শাক-সবজি উৎপাদনের সবচেয়ে ভাল সময়। দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা সামনে রেখে এ সময়টিকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগাতে হবে।
এবার আমনের তেমন একটা ভাল ফলন হয়নি। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। প্রথমত বিদ্যুৎ, সার ও জ্বালানি সঙ্কট এবং দামবৃদ্ধির কারণে কৃষক অনেকটা নিরুৎসাহী হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত অসময়ে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ব্যাপক ফসল হানি হয়। এই দুই কারণে আমনের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এর মধ্যেই দেশে খাদ্য সঙ্কট ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে উঠছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকশছোঁয়া হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তারা খাদ্য তালিকা থেকে মাছ-গোশত বাদ দিচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক ধাক্কা দিয়েছে। আমদানি-রফতানি ব্যহত হচ্ছে। আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় ডলার সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। এ সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এমনকি সরকার ব্যাপকহারে খাদ্য আমদানি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। লক্ষ্য অনুযায়ী, খাদ্য আমদানি করতে পারছে না। অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে। এ দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষিতে, দেশের খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গা আবাদের আওতায় আনার জন্য আহŸান জানিয়েছেন। কোনো জমি যাতে অনাবাদী না থাকে এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কৃষকদেরও খাদ্যশস্য উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে, খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য যে মৌলিক উপকরণের প্রয়োজন, তার তীব্র সঙ্কট রয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, সার ও জ্বালানি তেলের সঙ্কট এবং উচ্চদাম এ ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে আছে। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ফসলের দাম না পাওয়ার অভিজ্ঞতা কৃষকদের রয়েছে। ফলে এই উচ্চমূল্যের বাজারে উৎপাদনে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় সবার আগে কৃষকদের সুরক্ষা দিতে হবে। তারা যাতে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যে পায় এ ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। যদিও ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন ৪২ লাখ প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেয়া এবং কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে ৪ পার্সেন্ট সুদে ঋণ দেয়া। এগুলো ভাল উদ্যোগ। তবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, সরকারের প্রণোদনার ক্ষেত্রে এন্তার দুর্নীতি হয়েছে। যাদের প্রণোদনা পাওয়ার কথা, তারা না পেয়ে সচ্ছলরা পেয়েছে। এ দুর্নীতির কথা মন্ত্রীরাও স্বীকার করেছেন। চলমান এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার যেসব প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সেক্ষেত্রে যদি আগের মতো দুর্নীতি হয়, তাহলে কোনোভাবেই সঙ্কট মোকাবেলা করা যাবে না। বোরো মৌসুমে যদি কৃষক প্রণোদনা এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, সার ও জ্বালানি তেল না পায়, তাহলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘিœত হবে।
দেশে শুধু খাদ্য সঙ্কটই নয়, শীত মৌসুমে নি¤œ ও প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে শীত ও রোগবালাই থেকে রক্ষার ব্যবস্থা আগেভাগেই নেয়া জরুরি। তা নাহলে, খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় শীত মৌসুমকে ভালভাবে কাজে লাগানোর ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। এ সময়ে কৃষক যে শাক-সবজি ও রবি শস্য ফলায়, তা যাতে অধিক হারে উৎপাদিত হয়, এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বোরো আবাদে যাতে কৃষক কোনো ধরনের সঙ্কটের মুখোমুখি না হয় এজন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, সার ও বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বলা বাহুল্য, আমদানি করে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা করা যাবে না। এজন্য খাদ্য উৎপাদনের দিকে সবচেয়ে জোর দিতে হবে। এ কথাও স্মরণে রাখতে হবে, এখন কৃষক, মৎস্যচাষী ও পশু খামারিসহ খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িতদের কাছে নগদ অর্থ নেই। অর্থ সঙ্কটের কারণে অনেকে হাত গুটিয়ে বসে আছে। এদেরকে উৎপাদনমুখী করতে হলে নগদ অর্থ তাদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মোট কথা, সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।