Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জ্বালানি সঙ্কট ও লুটপাটের অর্থনীতি

তারেকুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ আবারও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের যুগে ফিরে গেল। এতদিন নানা বাগাড়ম্বরে মাতিয়ে রাখা হয়েছিল আমাদের। অথচ, এখন ফাঁপা বেলুনগুলো একে একে চুপসে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দুর্ভিক্ষ আসছে, যে যা পারেন উৎপাদন করেন’ (১২ অক্টো. ২০২২, ইত্তেফাক)। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটাই একমাত্র সত্য নয়। বরং রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা, অদূরদর্শিতা ও লুটপাটমুখী নীতিই আমাদের দুর্দশাকে ত্বরান্বিত করেছে। গত ১৫ বছরে বেসরকারি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে কথিত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’-এর নামে ৭০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেয়া হয়েছে। অথচ ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই অলস পড়ে ছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বসে বসে তারা ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে চুক্তি অনুসারে। যৌক্তিক কারণেই এ ধরনের বিতর্কিত চুক্তি বাতিল করা জরুরি হলেও উল্টো বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে গত বছর চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। ফলে অব্যবহৃত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখন দেশের অর্থনীতির জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১০ সালে বিদ্যুতের ঘাটতি দ্রুত পূরণের জন্য সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যয়বহুল রেন্টাল-কুইক রেন্টালের অনুমোদন দেয় সরকার। সে সময় দায়মুক্তির একটি আইনও পাস করা হয় সংসদে, যাতে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা কিংবা এর কোনো নির্দেশ-আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা না যায়। অভিযোগ আছে, ক্ষমতাসীনদের দলীয় ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী লোকেরাই এসব ভাড়াভিত্তিক অস্থায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৮ সালে দেশের একটি ব্যবসায়িক গ্রুপের চেয়ারম্যান সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় স্থান পান। তার মূল ব্যবসা বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি। ২০১৮ সালে ১৬ আগস্ট প্রথম আলোর এক রিপোর্টে জানা যায়, সিঙ্গাপুরে তার পরিবার ও তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯১ কোটি মার্কিন ডলার। এটি মাত্র একটি উদাহরণ। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে কী পরিমাণ হরিলুট ও অর্থপাচার হয়েছে তা কল্পনাতীত। এ ছাড়া চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ থাকা সত্ত্বেও গত বছর সমস্ত সমালোচনা উপেক্ষা করে রেন্টাল-কুইক রেন্টালের জন্য করা বিশেষ আইনের মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। এটা যে দলীয় ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের স্বার্থেই, তা বলাবাহুল্য।

অন্যদিকে, জ্বালানি সঙ্কটের কারণে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হল। ডলার খরচ বাঁচিয়ে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জরুরি এলএনজি ও জ্বালানি তেল কেনা হ্রাস করার নীতি নিয়েছে। বিদ্যুৎ রেশনিং করে বর্তমান জ্বালানি সঙ্কট সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। যদি আমরা গত দশ বছরে বাপেক্সকে কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ গ্যাস ও কয়লা উত্তোলন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতাম, তাহলে আজ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক সঙ্কটকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা নিঃসন্দেহে সুবিধাজনক পর্যায়ে থাকতাম। কিন্তু স্বনির্ভরতার পরিবর্তে সিঙ্গাপুরের ‘স্পট মার্কেট’ থেকে উচ্চমূল্যে তেল-গ্যাস কেনার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। গ্যাসের ক্ষেত্রে উৎপাদনমুখী না হয়ে আমদানিমুখী নীতির কারণেই এই সঙ্কট তীব্র হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর আমদানি মানেই তো কমিশনভোগ ও লুটপাটের অবাধ সুযোগ। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম. শামসুল আলম বলেছেন, ‘গ্যাস সংকটের কারণে কম দামে সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে। অথচ সেই গ্যাস ব্যক্তিখাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দিয়ে সেখান থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। নিজস্ব গ্যাস ও কয়লা সাশ্রয়ী মূল্যে উত্তোলন ও ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে আমদানিকৃত কয়লা, এলএনজি ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কৌশলে বিদ্যুৎ খাতের এমন সব উন্নয়ন হয়েছে, যা ভোক্তা বা গণবান্ধব নয়, অসাধু ব্যবসাবান্ধব’ (১৭ জুলাই ২০২২, দেশ রূপান্তর)। আমরা যদি অনেক আগেই একটি জনস্বার্থবান্ধব জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করতে পারতাম, তাহলে আজ সঙ্কট উত্তরণের আশা করা যেত। কিন্তু লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে কতটুকু সমাধান আসবে সে ব্যাপারে সন্দিহান হওয়া ছাড়া উপায় নেই। লোডশেডিং নিয়মিত চলতে থাকলে জনজীবনে দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হবে। শিল্পকারখানার উৎপাদন কমে যাবে ও ব্যয় বাড়বে। এর ফলে কর্মী ও শ্রমিক ছাঁটাই অনিবার্য হয়ে পড়বে। ফলে বেকারত্ব সমস্যা আরো জটিল হবে। এ ছাড়া গ্যাসের অভাবে দেশের সার কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কৃষিকাজ ব্যাহত হবে এবং কৃষকরা চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়বে।

অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশেও এখন লোডশেডিং হচ্ছে এমন মিথ্যাচার ছড়িয়ে নিজেদের অদূরদর্শিতা ও অযোগ্যতা ঢাকার অপচেষ্টা দেখা গেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, আগের মতো ফাঁপা বুলি ছেড়ে কিংবা যেন-তেন বুঝিয়ে নিজেদের দায় ও ব্যর্থতা চাপা দেয়া সম্ভব নয়। দেশের মানুষকে ‘শ্রীলঙ্কাভীতি’ পেয়ে বসেছে। সরকারও রিজার্ভ রক্ষা করতে মরিয়া। ৩৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে রিজার্ভের পরিমাণ। ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না। ডলার বাঁচাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বিলাস-পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। অপব্যয়, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও লুটপাটের লাগাম টেনে ব্যয় সঙ্কোচনের নীতি আরো আগেই সরকারের নেয়া উচিত ছিল। এ বছরের মে মাসে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)-এর প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, গত দশ বছরে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলেই দেশের বাইরে সাড়ে ছয় লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে (২৬ জুন ২০২২, ডয়চে ভেলে)। সম্প্রতি হাইকোর্ট ‘ব্যাংক খাতের বড় বড় অপরাধ দেশটাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন। অর্থপাচারে জড়িতরা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় দেশে লুটপাটের অর্থনীতি গড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে।

আমাদের রিজার্ভ গড়ে ওঠে সাধারণত রপ্তানি আয়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে। পক্ষান্তরে, রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার ব্যয় হয় আমদানি, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ও বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে আমদানি ব্যয় অতিরিক্ত হয়ে গেলে কিংবা আমদানি ব্যয়ের বিপরীতে রপ্তানি আয়ে বেশি ঘাটতি (বাণিজ্য ঘাটতি) দেখা দিলে সেটা রিজার্ভের জন্য অশনিসঙ্কেত। রিজার্ভ কমে যাওয়া মানে একটি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমে যাওয়া। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে একটি দেশের রিজার্ভের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য থাকতে হয়। আমাদের এখন তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে আমদানি খরচ বাড়ার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ নিম্নমুখী। অর্থনীতিবিদদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে রিজার্ভ থেকে এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার, যা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (৫১৬০০ কোটি টাকা), পায়রা বন্দর (৫১৬৮ কোটি টাকা) ও শ্রীলঙ্কাকে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ ঋণ বাবদ (১৭২০ কোটি টাকা) দেয়া হয়েছিল (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, যুগান্তর)। সরকারের নেয়া এই ঋণ বাদ দিলে রিজার্ভের পরিমাণ আরো কম দেখাবে। এ ছাড়া খোলাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বিপরীতে টাকার মানও কমছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। রিজার্ভের চাপ বহুমুখী সঙ্কট তৈরি করেছে।

ইতোমধ্যে সরকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে এ-বি-সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে কম গুরুত্বপূর্ণগুলো স্থগিত করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থার কাছে ঋণের জন্য ধর্না দিচ্ছে। সরকার যে অর্থাভাবে দিশেহারা, তা সুস্পষ্ট। আরো বড় বিপদের কারণ হলো, বাংলাদেশের কাঁধে বিদেশি ঋণের বিশাল বোঝা চেপে বসেছে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ৯৬ হাজার টাকা। প্রতি বছরই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এ মাথাপিছু ঋণ। কথিত উন্নয়নের নামে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্য দেশের মানুষকে উচ্চসুদে ঋণের জালে ফেলা হয়েছে। সুদসহ এই ঋণগুলো আগামী বছর থেকে পরিশোধ করা শুরু করতে হবে। এখন থেকে রিজার্ভের পরিমাণ আশানুরূপ বৃদ্ধি না পেলে তখন অবস্থা হবে ভয়াবহ। সরকার ইতোমধ্যে আইএমএফ ও এডিবির কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কারো থেকে সহসাই ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা মেলেনি। বিদেশি ঋণ পেলে রিজার্ভ একটু উঠে দাঁড়াবে বটে। কিন্তু বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমে বাড়তে থাকলে, ডলারের দাম চড়া হতে থাকলে এবং অর্থপাচার রোধ করা সম্ভব না হলে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে, সন্দেহ নেই।
যাই হোক, পরিকল্পিত লোডশেডিং দিনে এক ঘণ্টার কথা বলা হলেও বাস্তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের সময় দিনদিন বাড়তে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাত আটটার পর দোকানপাট ও শপিং মল বন্ধ করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও সার্বিকভাবে এগুলো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য আমাদেরকে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যেতে হবে। এ জন্য আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের বিকল্প নেই। কিন্তু গত দুই দশকেও অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলার এক রিপোর্ট। এমনকি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে দিয়েও গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো আগ্রহ বা তৎপরতা দেখা যায়নি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের। অন্যদিকে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ২০ হাজার মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হলেও দেশের পাঁচটি কয়লাখনির সবগুলোই উত্তরাঞ্চলে। ফলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেশীয় কয়লা ব্যবহার হওয়ার সুযোগ কম। বরং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কয়লা ব্যবহার হবে। অথচ, দেশের যে পাঁচটি কয়লাখনি রয়েছে, সেগুলোতে প্রায় ৩০০ কোটি টন কয়লা মজুদ রয়েছে। সন্দেহ নেই, দেশি-বিদেশি বেনিয়াগোষ্ঠীর স্বার্থেই কয়লাখনির উৎসমুখে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরূল ইমাম এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘খনির উৎসমুখে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা গেলে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কয়লার ব্যবসা যারা করতে চায়, তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই খনিমুখে বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়নি। কারণ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় কয়লা উত্তোলন করা হলে সেখানে দেশি ও বিদেশি কমিশনভোগীরা কোনো ভাগ পাবে না’ (১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো)।
এ ছাড়া রিনিউয়েবল এনার্জি বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ব্যয়বহুল রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও উচ্চমূল্যে জ্বালানি তেল-গ্যাস আমদানির ওপর নির্ভর করতে গিয়ে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০১৫ সালে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করলেও তা অর্জিত হয়নি। কারণ আমাদের বিদ্যুৎ নীতিনির্ধারণী মহলে এ ব্যাপারে সুদূরপ্রাসারী বাস্তবভিত্তিক উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অথচ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারত এখন অনেক অগ্রসর। ভারতের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৫ শতাংশ এখন উৎপাদিত হয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। ২০৩০ সালের মধ্যেই অজীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘোষণাও দিয়েছে দেশটি। সাশ্রয়ী বিদ্যুতের জন্য বিকল্প জ্বালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বিশ্বব্যাপী সুবিদিত। এতে পরিবেশ দূষণও হয় না। আমাদেরকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনে বিদেশি প্রযুক্তি-সহায়তাও নেয়া যেতে পারে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জ্বালানি সঙ্কট ও লুটপাটের অর্থনীতি
আরও পড়ুন