Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যত খুশি ঋণ কতটা যৌক্তিক?

| প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘণীভূত হয়েছে। ব্যাংকগুলো যখন খাদ্য, জ্বালানি ও মূলধনী পণ্যসহ জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপণ জারি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগকারিদের যত খুশি তত ঋণ গ্রহণের সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারি কর্মপরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এক ধরণের অস্থিরতার বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। করোনা মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক নীতিগত পরিবর্তনের কারণে গত বছর থেকে দেশে বাস্তবায়নাধীন ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছিল। এক দশকেরও বেশি সময় আগে অনুমোদন পেলেও এসব বিদ্যুতকেন্দ্র উৎপাদনে যেতে না পারায় অনুমোদন বাতিল করা হয় বলে বলা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বৈশ্বিক ইনিশিয়েটিভে নিজেদের কমিটমেন্টও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভ‚মিকা রাখে। গতবছর জুন মাসে সচিবালয়ে ১০টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্তকে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায়‘ নতুন চিন্তা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এরমধ্যে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় বৈশ্বিক কোনো পরিবর্তন না ঘটলেও বাংলাদেশে হঠাৎ ঘটা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ব্যাংক থেকে আগামী ৫ বছর ধরে যত খুশি লোন গ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ দেয়ার বাস্তবতা কিছুটা বিষ্ময়করই বটে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানিব্যবস্থাপনা দেশের শিল্পায়ণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে জীবাশ্ম জ্বালানির সর্বব্যাপী দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় অপেক্ষাকৃত কম দূষণ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবস্থাপনা টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। এই নীতি মেনেই সরকার অনুমোদন পাওয়া বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দেড় বছরের মাথায় দেশের ব্যাংকগুলো যখন ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি-রফতানিতে এলসি মার্জিনের দায় শোধ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে, তখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যত খুশি তত ঋণ নেয়ার সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বেপরোয়া সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচিত হচ্ছে। গত একযুগ ধরে বিদ্যুৎখাতের ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার রাস্তা বন্ধ করতে আইনগত ইনডেমনিটি দেয়া হলেও এ খাতে লক্ষকোটি টাকার অগ্রাধিকারমুলক বাজেট বাস্তবায়ন করে বিদ্যুৎখাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে আগামী বছর একটি দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় সরকার সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতার নীতি গ্রহণ করেছে। কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যত খুশি ঋণ দেয়া-নেয়ার এই সিদ্ধান্ত বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে কতটা কাজে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা না থাকলেও এটি সরকারের নীতি এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।
সরকার এতদিন ধরে উন্নয়নের জিগির তোলার পর এখন দেশের অর্থনীতিতে এক ধরণের দেউলিয়াদশা দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টের বরাতে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, দেশের ২০টি ব্যাংক ডলার সঙ্কটের কারনে এলসি খোলা বন্ধ রেখেছে। অর্ধশতাধিক রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশিরভাগই অলস বসে আছে এবং ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় নীতিগত কারণে গত বছর বন্ধ করে দেয়া কয়লাবিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগকারিদের যত খুশি তত ঋণ নেয়ার সুযোগ ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা আরো দুর্বল করে তুলতে পারে। সেই সাথে বায়ুদূষণ ও পরিবেশের ভয়ানক হুমকি সৃষ্টিকারী কয়লা বিদ্যুৎখাতে নতুন বিনিয়োগ জলবায়ু ইনিশিয়েটিভে বৈশ্বিক ও জাতীয় নীতির সাথেও সাংঘর্ষিক। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন জরুরি। তবে তা হতে হবে সময়োপযোগী ও পরিবেশবান্ধব। দেশের অফশোর গ্যাস উত্তোলন ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগের বদলে পরিত্যক্ত ও পরিত্যাজ্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সীমাহীন ঋণসুবিধার সুযোগ গহণযোগ্য নয়। ব্যাংক প্রবিধি আইন ১৯৯১-এর খ(২৬) অনুসারে ব্যাংকগুলো সংরক্ষিত মূলধণের ২৫ শতাংশের ঊর্ধ্বে ঋণ দিতে পারেনা। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণসুবিধা দিতে এ সীমা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সামগ্রিক বাস্তবতাকে সামনে রেখেই এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৫ বছরের জন্য যত খুশি তত ঋণ সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান অনেকটাই অস্বচ্ছ এবং অবাস্তব। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের সক্ষমতা ও চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল।

 



 

Show all comments
  • hassan ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৫:১০ পিএম says : 0
    বাংলার জনগন স্বাধীনতার যুদ্ধে যেভাবে তোমরা জেগে উঠেছিলেন এবারও সে ভাবে জেগে ওঠো এই দেশদ্রোহী উল্লাহ সরকার আমাদের দেশটাকে একদম ধংস করে দিয়েছে আমাদেরকে ভাতে মাছে পানিতে মারছে গুলি করে মারছে গুম করে মারছে আমাদের ট্যাক্সের টাকা সব লুটপাট করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে আর কথায় কথায় বলে দেশ উন্নত করেছে দেশটাকে দেখলে মনে হয় ময়লার ভাগাড় রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা যেখানে-সেখানে বিল্ডিং তোলা হয়েছে নদী-নালা-খাল-বিল ভরাট করে দেশদ্রোহী সরকারেরা দখলে নিয়েছে কৃষকদের জমি দখলে নিয়েছে মিথ্যা প্লট বিক্রি করছে আরো যে কত ধরনের অন্যায় অবিচার অত্যাচার করছে সেটাই ভাষা প্রকাশ করা যায় না
    Total Reply(0) Reply
  • hassan ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৫:০৭ পিএম says : 0
    আমরা বাংলাদেশি জনগণ যদি ভাল হতাম দেশপ্রেমিক' হতাম আল্লাহ প্রেমিক হতাম তাহলে ইবলিশের আমাদের দেশ আজ 50 বছর ধরে শাসন করতে পারতোনা এদেশটাকে একদম ধংস করে দিয়েছে এমন কোন দিন নাই যে দেশটাকে ধ্বংস করা হয় না মানুষের নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করে দিয়েছে যিনা-ব্যভিচার সিনেমা-নাটক গান-বাজনা নর্তকী খেলাধুলা ইন্ডিয়ার কাছে আমাদের দেশটা বিনা পয়সায় বিক্রি করে দিয়েছে ইন্ডিয়া থেকে লোক আসে বিলিয়ান বিলিয়ান টাকা ইনকাম করে নিয়ে যায় আর আমাদের দেশের লোকেরা সব বেকার বসে থাকে কারণ শিক্ষাব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবেই ধ্বংস করেছে আমাদের দেশের জনগণ কত কষ্ট করে মিল ফ্যাক্টরি বানিয়েছে এগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে কেননা বিদেশ থেকে পণ্য কিনে আনলে অনেক লাভ আবার বিদেশে টাকা পাচার করা যায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন