মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপর্যন্ত সফল হলেও, ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে তার নিজ দল ডেমোক্রেটের অভ্যন্তরীণ জোটে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেইসাথে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য মধ্যবর্তী মার্কিন নির্বাচনের জয়লাভের সম্ভবনাতেও সংশয় দেখা দিয়েছে বাইডেনের। তীব্র জ¦ালানী সঙ্কটের কারণে কঠিন শীতের দারপ্রান্তে থাকা ইউরোপ, মার্কিন বাজারে গ্যাসের উচ্চ মূল্য, লাগাতার অর্থ মন্দা এবং পুতিনের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি রিপাবলিকানদের পাশাপাশি ডেমোক্রেটদেরও শঙ্কিত করে তুলেছে। প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতা এবং সম্ভাব্য মার্কিন স্পীকার কেভিন ম্যাক্কার্থির মতো আরও অনেকে ইউক্রেনকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা গত সপ্তাহে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, রিপালিকানা কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসলে ইউক্রেনকে সহায়তা কমিয়ে দেবে। এরমধ্যে, সোমবার হোয়াইট হাউসে ৩০ জন ডেমোক্রেটের পাঠানো একটি খোলা চিঠি ইউক্রেনকে সহয়াতার বিরুদ্ধে বাইডেনের উপর আরও চাপ তৈরি করেছে। চিঠিতে বাইডেনের দলীয় সতীর্থরা ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে কৌশল পরিবর্তন করতে এবং রাশিয়ার সাথে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাইডেনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
এই প্রথমবারের মতো বাইডেনের নিজের দলের বিশিষ্ট সদস্যরা তাকে ইউক্রেনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার জন্য চাপ দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে রাশিয়ার সাথে নিয়মিত সংলাপে জড়িত হচ্ছে না। চিঠিতে কংগ্রেসনাল প্রগ্রেসিভ ককাসের প্রধান প্রমিলা জয়পালের নেতৃত্বে ৩০ জন ডেমোক্র্যাট ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তার সাথে একটি সক্রিয় কূটনৈতিক ধাক্কা দিতে বাইডেনকে আহ্বান জানিয়েছেন, যা যুদ্ধবিরতির জন্য বাস্তবসম্মত কাঠামো খোঁজার প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে পারে। তারা উল্লেখ্য করেছেন যে, যুদ্ধের বিপর্যয়কর পরিণতি ইউক্রেনের বাইরেও ক্রমবর্ধমানভাবে অনুভূত হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে মস্কোর একটি পারমাণবিক হামলার সম্ভাবনার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর খাদ্য ও গ্যাসের দাম এবং গম, সার ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি তৈরি করেছে।
ডেমোক্রেটেদের উদ্বেগের পিছনে আরও একটি বাস্তবতা হ’ল যে, যুদ্ধ কেবল দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে এবং পুতিনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি বাইডেনকে সতর্ক করার জন্য প্ররোচিত করেছে যে, বিশ্ব ৬০ বছরের মধ্যে আর্মাগেডনের সবচেয়ে গুরুতর সম্ভাবনার মুখোমুখি। কিন্তু যুদ্ধের প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র কতদিন হাজার কোটি ডলার ঢালবে, জানতে চাইলে, বাইডেন এবং তার শীর্ষ সহযোগীরা প্রায়শই বলেছেন, ‘যতদিন লাগে।’ কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন যে, রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই সরাসরি যুদ্ধে জয়ী হতে সক্ষম নয়। ফলে, যদি অদূর ভবিষ্যতে এই সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে হয়, তাহলে পরিস্থিতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন ঘটানোর প্রয়োজন হবে। সিআইএ-র রাশিয়া বিশ্লেষণ দলের সাবেক পরিচালক এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা জর্জ বিবে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন বেশ সঠিকভাবে বলেছেন যে, যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কটের পর থেকে আমরা সম্ভবত সবচেয়ে বিপজ্জনক সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাহলে প্রশ্ন হল, এটা নিয়ে আমরা কী করব?’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ইউক্রেনের উপর নির্ভর করে বলার মাধ্যমে দায়িত্ব ত্যাগ করা বোঝায়। মার্কিন নেতাদের এই সমস্ত কিছুতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
মার্কিন কংগ্রেস সম্মিলিতভাবে এখন পর্যন্ত হোয়াইট হাউসকে ইউক্রেনের জন্য অনুরোধ করা প্রায় সমস্ত অর্থ এবং অস্ত্র সরবরাহ করেছে। তবে সমীক্ষাগুলি বলছে যে, ইউক্রেনের প্রতি জন্য জনসমর্থন ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। রিপাবলিকান বাইরেডনের ইউক্রেন নীতিকে চ্যালেঞ্জ করছেন। ব্যাপক খরচের কারণে কিছু রক্ষণশীল এখন ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন এবং কেউ কেউ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের প্রতি স্পষ্ট সহানুভূতি প্রকাশ করছেন। পিউ রিসার্চের একটি জরিপে দেখা গেছে যে, ইউক্রেনের পরাজয়ের বিষয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিনিদের সংখ্যা ভাগ মে মাসের ৫৫ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে ৩৮ শতাংশে নেমে এসেছে। রিপাবলিকান এবং রিপাবলিকানপন্থী স্বতন্ত্রদের মধ্যে মার্চ মাসে ৯ শতাংশ থেকে উন্নীত হয়ে সেপ্টেম্বরে ৩২ শতাংশ বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের জন্য মাত্রাতিরিক্ত সমর্থন দিচ্ছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আপাতত তারা ইউক্রেন সহায়তা প্যাকেজগুলিকে সমর্থন করবেন, তবে বাইডেন শীঘ্রই একটি কূটনৈতিক পথ অনুসরণ না করলে, এটি অব্যাহত থাকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত যে, সার্বভৌম সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইউক্রেনের সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য এটি আমেরিকার জায়গা নয়। কিন্তুআমরা বিশ্বাস করি যে, যুদ্ধে সামরিক সহায়তার জন্য মার্কিন করদাতাদের কয়েক হাজার কোটি ডলার ব্যয়ের জন্য দায়বদ্ধ আইনপ্রণেতা হিসেবে এই যুদ্ধে এই ধরনের সম্পৃক্ততা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমস্ত সম্ভাব্য উপায়গুলি গুরুত্ব সহকারে অন্বেষণ করার দায়িত্ব তৈরি করে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।