Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কীভাবে এত ক্ষমতাধর হয়ে উঠলেন চীনের প্রেসিডেন্ট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ২:১৭ পিএম

শি জিনপিং এখন চীনে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা। কমিউনিস্ট চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাওজেদংএর পর কেউই তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হননি - যা শি জিনপিং হতে যাচ্ছেন। চীনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। আর এসব বৈঠকে যে সিদ্ধান্তগুলো হয় - তা জানানো হয় এমন এক ভাষায় যার আসল অর্থ উদ্ধার করা সহজ নয়।

এ কারণেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কীভাবে কাজ করে, বা তাদের নেতা শি জিনপিংই বা কী করতে চাইছেন - এগুলো বোঝা অনেকসময়ই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের কাজের ধারা সম্পর্কে অভিজ্ঞ যারা তারা বলেন, পার্টির ওই শুষ্ক প্রচারণার ভাষার মধ্যে এমন অনেক ইঙ্গিত থাকতে পারে যাতে নেতার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আন্দাজ করা সম্ভব। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সবচেয়ে বড় সংবাদপত্র হচ্ছে দ্য পিপলস ডেইলি। এই দৈনিকটির পুরনো সংখ্যাগুলো খুঁজে বিবিসি এমন কিছু সাংকেতিক শব্দ চিহ্নিত করেছে - যা শি জিনপিংএর শাসনামলকে বুঝতে সহায়ক হবে।

দ্য 'কোর' বা প্রাণকেন্দ্র

নেতৃত্বের একটা কেন্দ্রবিন্দুর ধারণা প্রথম তুলে ধরেছিলেন মাও জেদং - কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম নেতা। তিনি এই "কোর" কথাটা ব্যবহার করেছিলেন ১৯৪০এর দশকে - ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি চীনে ক্ষমতাসীন হবার আগেই। সেটা ছিল এমন এক সময় যখন মাও পার্টির ভেতরে তার ক্ষমতা সংহত করার চেষ্টা করছিলেন। এজন্য তিনি দলে 'শুদ্ধি অভিযান' চালিয়ে আর বিরোধীদের উচ্ছেদ করছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টিতে সেটাই প্রথম শুদ্ধি অভিযান ছিল না, এবং তার পরেও যে হয়নি তাও নয়। কিন্তু ইতিহাসবিদরা মনে করেন - ওই সময়কালটি থেকেই মাও 'কাল্ট' বা তার প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং ব্যক্তিপূজার সূচনা।

শি জিনপিংকে ঘিরে এই "কোর" শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ২০১৬ সাল থেকে। এর পর এই শব্দটির ব্যবহার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শি জিনপিং ২০১২ সালে ক্ষমতাসীন হবার আগে - তার চার পূর্বসূরীর তিনজনকেই পার্টির "কোর" অভিধা দেয়া হতো। এরা ছিলেন, মাও জেদং - আধুনিক চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা, দেং শিয়াওপিং - যিনি বিশ্বের জন্য চীনের দরজা খুলে দিয়েছিলেন, আর জিয়াং জেমিন - যিনি ১৯৯০এর দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত চীনের উত্তরণে নেতৃত্ব দেন। জিয়াংএর উত্তরসূরী এবং শি জিনপিংএর ঠিক আগে যিনি চীনের নেতা ছিলেন সেই হু জিনতাওকে কখনোই পার্টির "কোর" হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।

তিনি ঠিক একচ্ছত্র নেতা বা 'স্ট্রংম্যান' ছিলেন না বরং ঐকমত্য গড়ে তোলার পথ নিয়েছিলেন। দেং শিয়াওপিংএর সময়ই পার্টিতে যৌথ নেতৃত্বের নীতি প্রচলিত হয় আর হু জিনতাওএর সময় এটাই স্বাভাবিক কার্যপদ্ধতিতে পরিণত হয়েছিল - অন্তত লোকে তাই ভাবতো। বিশ্লেষকরা বলেন, শি যেভাবে দ্রুতগতিতে নিজের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন - তাতে তিনি যে এক সময় নিজেকে পার্টির "কোর" হিসেবে তুলে ধরবেন এটা প্রায় অবধারিত ছিল।

'চায়না মিডিয়া প্রজেক্ট' সংস্থার পরিচালক ডেভিড বান্ডুরস্কি বলছেন, "শি জিনপিংএর দরকার ছিল মুখে ক্ষমতা সংহত করার কথা বলা - যা বাস্তবে ক্ষমতা সংহত করার প্রায় সমতুল্য।" তার কথায়, "চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এখন স্পষ্টতই এক ব্যক্তির নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিপূজার দিকে এগিয়ে চলেছে।" মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষক লি ইউয়ানও বলছেন, শি-র চীন পেছন দিকে হাঁটছে এবং একক নিয়ন্ত্রণের যুগ শুরু হতে যাচ্ছে।

তিনি বলছেন, এক দশক আগে যখন শি জিনপিং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হয়েছিলেন তখন দেশটির রাজনীতি, বাণিজ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের এলিটরা আশা করেছিলেন যে তিনি চীনকে আরো উন্মুক্ত, ন্যায়বিচারসম্পন্ন এবং সমৃদ্ধ করে তুলবেন। লি ইউয়ান বলছেন, কিন্তু এখন তাদের অনেকেই মনে করেন যে শি একটি একক কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র গড়ে তুলেছেন।

শি এখন চীনের তিনটি সর্বাধিক ক্ষমতাধর পদে আছেন - চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক, দেশটির সশস্ত্রবাহিনীর চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডেন্ট। চীনের প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষেত্রেও আগে এমন নিয়ম ছিল যে এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। চীনের সংস্কারক নেতা দেং শিয়াও পিং এটা করেছিলেন এই জন্য যেন চীনে আর কখনো মাও জেদংএর মত একক নেতৃত্বের উত্থান না হয়। কিন্তু শি জিনপিংএর সময় সে নীতি বাতিল করা হয়েছে।

কীভাবে শি জিনপিং এত ক্ষমতাধর হলেন?

মাওজেদংএর একটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, "রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হচ্ছে বন্দুকের নল।" গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর মাও এটা নিশ্চিত করেছিলেন যে চীনের সেনাবাহিনী বা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নিয়ন্ত্রণ করবে পার্টি - রাষ্ট্র নয়। তা ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টির নেতাই তখন হতেন কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনেরও (সিএমসি) চেয়ারম্যান। ক্ষমতায় আসার পর শি জিনপিংও সামরিক বাহিনীর ভেতরে থাকা তার বিরোধীদের উচ্ছেদ করতে কোন বিলম্ব করেননি।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাগুলো ঘটেছিল ২০১৪ ও ২০১৫ সালে, যখন সিএমসির ভাইস চেয়ারম্যান শু কাইহু এবং পিএলএর সাবেক জেনারেল গুও বক্সিওংএর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এরা যদিও তখন অবসর নিয়েছিলেন, কিন্তু শি এই পদক্ষেপের মাধ্যমে একটা জোরালো বার্তা দিয়েছিলেন যে সামরিক অফিসারদের কেউ যদি তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়, তাহলে তার পরিণাম ভালো হবে না - বলছেন পেন্টাগনের অর্থে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ফেলো জোয়েল উটনাও।

২০১৫ সালে শি সামরিক বাহিনীর কাঠামোতে পরিবর্তনে এনে চারটি হেডকোয়ার্টার ভেঙে দেন, এবং ১৫টি ছোট ছোট এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে সিএমসির পক্ষে সরাসরি সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে আদেশ পাঠানো সম্ভব হলো - এবং শির প্রতি আনুগত্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি জোরদার হলো। মার্কিন থিংক ট্যাংক র‍্যান্ড কর্পোরেশনের সিনিয়র প্রতিরক্ষা গবেষক টিমোথি হীথ বলছেন, পার্টির প্রতি চীনা সামরিক বাহিনীর আনুগত্যের মানে হচ্ছে "তাদের কর্তব্য হবে পার্টি এবং বিশেষ করে শি-কে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা।"

'আনুগত্য' হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

'বন্দুকের নলে'র পর প্রয়োজন ছিল 'ছুরি' অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা। শি ক্ষমতায় আসার দু বছর পর দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন সাবেক অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান ঝু ইয়ংকাং। তিনি ছিলেন শি জিনপিংএর আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী বো শিলাই-এর ঘনিষ্ঠ। এই তদন্ত চীনে রাজনৈতিক জগতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হবার মত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কারণ এতদিন সবার ধারণা ছিল যে চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সিদ্ধান্তগ্রহণকারী সংস্থা পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির কোন সদস্যের বিরুদ্ধে কখনো ফৌজদারি অপরাধের মামলা হবে না।

নিল টমাস বলছেন, শি জিনপিং এমন একজন কঠোর এবং তীক্ষ্মবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ যার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার গতি এবং মাত্রা দেখে হয়তো কমিউনিস্ট পার্টির বয়স্ক নেতারাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। পর্যবেক্ষকরা বলেন - গত এক দশকে চীনে দুর্নীতিদমন কর্তৃপক্ষ ৪৭ লক্ষ লোকের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে এবং শির প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দিতে এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ব্যবহৃত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রাজনীতিবিজ্ঞানী ভিক্টর শিহ বলছেন, গত দুবছরে শি এমন অনেক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়েছেন যারা শুরুতে তার ক্ষমতায় আসাকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলছেন, এখন চীনের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো যারা চালাচ্ছেন তারা অতীতে কোন না কোন সময় শি-র ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং যাদেরকে তিনি বিশ্বাস করেন। নিল টমাস বলছেন, এখন সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে শিজিনপিংএর অনুগতদের।

তার কথায়, ৩১টি প্রাদেশিক স্তরের পার্টি সচিব পদের ২৪টিতেই আছেন শির সহযোগীরা - যারা তার পারিবারিকভাবে পরিচিত, তার সাথে লেখাপড়া করেছেন, তার অধীনে বা তার ঘনিষ্ঠ কোন সহযোগীর অধীনে কাজ করেছেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কমিউনিস্ট পার্টির প্রাদেশিক স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোর ২৮১ জন সদস্যের প্রায় সবাইকে পদোন্নতি দিয়েছেন শি। এ ছাড়া ২০১৮ সালে শি জিনপিংএর "নতুন যুগের জন্য চীনা বৈশিষ্টসমৃদ্ধ সমাজতন্ত্র বিষয়ক চিন্তাধারা" চীনের সংবিধানেও যুক্ত হয়েছে। মাওজেদংএর পর আর কোন চীনা নেতার 'চিন্তাধারা' এভাবে সংবিধানের অংশ হয়নি। চীনের আধুনিকায়নের স্থপতি দেং শিয়াওপিংএর অবদান যুক্ত হয়েছে শুধু একটি 'তত্ত্ব' হিসেবে।

"লাল দেশ"

এই শব্দবন্ধটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে 'লাল নদী ও পর্বতমালা' - এবং উদ্ভব হয় ১৯৬০এর দশকে। চীনের সমাজে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সেসময়কার 'সাংস্কৃতিক বিপ্লব।' সন্দেহবাতিকগ্রস্ত মাও জেদং সেসময় যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তাতে - চীনা বিপ্লবের সাথে প্রতারণা করেছে বলে কাউকে মনে হলেই তার বিরুদ্ধে সহিংস পন্থা নেবার আভাস ছিল। সেসময় শ্লোগান ছিল "এটা নিশ্চিত করুন যেন দেশের রঙ কখনো বদলাতে না পারে" - এবং এটা ছিল কঠোর পদক্ষেপ নেবার এক মারাত্মক আহ্বান।

তবে মাওএর মৃত্যুর পর চীন অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ নিলে এই প্রবণতা ঝিমিয়ে পড়েছিল। বিশ্বের জন্য চীনের দরজা খুলে যাবার পর মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে পার্টির ভুমিকা অনেক পেছনে চলে গিয়েছিল, এবং এই 'লাল' দেশের কথা প্রায় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শি ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে । উনিশশ আশির দশক থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পিপলস ডেইলির পাতায় লাল দেশের উল্লেখ পাওয়া যায় ২০-টিরও কম। কিন্তু এখন কথাটা আবার ফিরে এসেছে। শুধু গত বছরই এর উল্লেখ করা হয়েছে ৭২ বার।

"এই শব্দটার পুনরুত্থান দেখে বোঝা যায় শি জিনপিং চান যে চীনা রাজনীতি ও সমাজে কমিউনিস্ট পার্টিকেই হতে হবে কেন্দ্রীয় শক্তি" - বলছিলেন নিল টমাস, ইউরেশিয়া গ্রুপের একজন সিনিয়র চীন বিশ্লেষক। শি অনেকবার তার দেশের মানুষের প্রতি "তাদের হৃদয় ও রক্তে লাল জিনকে সঞ্চালিত করার" আহ্বান জানিয়েছেন - যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে "লাল দেশকে কায়েম রাখা যায়।"

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এখন মানুষের জীবনের প্রতি স্তরে ফিরে এসেছে, এবং তা যে শুধু "লাল দেশ" শব্দবন্ধটি দিয়েই বোঝা যাচ্ছে তা নয়। চীনে তালিকাভুক্ত প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে এখন তাদের প্রতিষ্ঠানে কমিউনিস্ট পার্টির শাখা খুলতে হয়। পার্টির শতবার্ষিকীর সময় এমনকি বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও পার্টির ইতিহাসভিত্তিক কুইজে অংশ নিয়েছিলেন। সিনেমাতেও এখন দেশপ্রেমমূলক চলচ্চিত্রগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে।

"শি জিনপিং এমন একজন ব্যক্তি যার পার্টির মিশন এবং চীনের পুনরুজ্জীবনে তার ভূমিকার ওপর প্রকৃত বিশ্বাস রয়েছে " - বলছেন নিল টমাস। তিনি বলছেন, এই মিশনের অংশ হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে চীনকে পুনপ্রতিষ্ঠিত করা, এবং শি একে একটি ঐতিহাসিকভাবে উজ্জ্বল অবস্থান বলেই মনে করেন।

'চীন-বিরোধী শক্তিসমূহ'

এই কথাটি ব্যবহার করা হয় পশ্চিমা বিশ্ব এবং চীনের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থানের সমালোচনা করার সময়। এটি চালু আছে বহু দশক ধরেই। পিপলস ডেইলিতে এই শব্দটি সচরাচর দেখা যায়না। তবে হঠাৎ কখনো কখনো এর ব্যবহার অনেক বেড়ে যায় - বিশেষ করে যখন চীনের কোন পদক্ষেপ দেশে বা বিদেশে সমালোচনা সৃষ্টি করে বা পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তাদের কোন বিবাদ তৈরি হয়। ইদানীং যুক্তরাষ্ট্র বা সার্বিকভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে চীনের সম্পর্কের অবনতি হবার ফলে এই শব্দটির ব্যবহার বেড়ে গেছে।

ওয়াশিংটনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধ, শিনজিয়াং বা অন্যত্র চীনের মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ, হংকংএর ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ, বা তাইওয়ানের ব্যাপারে চীনের কথাবার্তা নিয়ে নানা খবরের প্রেক্ষাপটে এই 'চীন-বিরোধী শক্তি' কথাটার ব্যবহার হতে দেখা যায়। চীনের ভেতরে জাতীয়তাবাদী মনোভাবও এখন বাড়ছে। মকেউ সরকারের সমালোচনা করলেই তাকে চীন-বিরোধী আখ্যা দেয়া হয়, তা ছাড়া লোকজনকে উৎসাহও দেয়া হয় - যেন কেউ এধরনের আচরণ করলে তা তারা কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করে।

চীনের ব্যাপারে নেতিবাচক মত প্রকাশ করলে তা চীনের স্বার্থের হানি ঘটায় বলে মনে করা হয়। মি. বান্ডুরস্কি বলছেন, শি এবং তার পার্টি এখন যে কোন সমালোচনার ব্যাপারে অনেক বেশি স্পর্শকাতর এবং সন্দেহপ্রবণ। বেইজিং প্রায়ই অভিযোগ করে যে ওয়াশিংটন চীনের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার চেষ্টা করছে। এ কারণে, বান্ডুরস্কি বলছেন - শি বিদেশী শক্তির অনুপ্রবেশের ভয়ে থাকেন, এবং যে কোন বিরোধিতাকেই বৈদেশিক বলে চিত্রিত করাটাকে তিনি পাল্টা আঘাত হানার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর পন্থা মনে করেন।

'দ্য গ্রেট স্ট্রাগল' বা 'মহান সংগ্রাম'

এই সংগ্রাম কথাটা মাওএর যুগের এবং তিনি প্রায়ই এ কথাটাকে তার পেছনে জনসমর্থন তৈরির জন্য ব্যবহার করতেন। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় এই সংগ্রামের কথা বলে মাও সমর্থকরা শ্রেণী শত্রুদেরকে অপমান এবং কখনো কখনো সহিংস আক্রমণ করতো। শিও এখন 'মহান সংগ্রাম' কথাটাকে নিজের করে নিয়েছেন - যা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০২১ সালে পিপলস ডেইলিতে এ কথাটা যতবার ব্যবহৃত হয়েছে - তা ২০১২ সালের তুলনায় (যখন শি ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন) ২২ গুণ বেশি। ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক জেং জিংহান বলছিলেন, এ শব্দটি ব্যবহার করার পেছনে আছে মাওয়ের সময়কার স্মৃতি জাগিয়ে তোলা এবং কমিউনিস্ট পার্টির মূল চেতনার ব্যাপারে আবেদন সৃষ্টি করার প্রয়াস।

দেশের ভেতরেই হোক বা বাইরেই হোক - চীনের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে তা নিয়ে আলোচনার সময় এই 'মহান সংগ্রাম'-এর কথা বার বার ঘুরেফিরে আসে। "শি জিনপিংএর নেতৃত্বাধীন পার্টি যে এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিল করত সক্ষম সেই আত্মবিশ্বাস ও আনুগত্য সৃষ্টি করার জন্যও এ শব্দটি একটি অস্ত্র" - বলছিলেন নিল টমাস। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ