মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা স্মরণে চলতি মাসের ১ অক্টোবর দেশটি তার ৭৩তম জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষে ১-৭ অক্টোবর পর্যন্ত গোল্ডেন উইক নামে পরিচিত সপ্তাহব্যাপী ছুটিও চলেছে দেশটিতে।
তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, চীনের মূল ভূখণ্ডে এই উৎসবগুলো পালন করা হলেও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলোতে এই সরকার দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। সম্প্রতি ওই অঞ্চলগুলোর বিষয়ে নতুন একটি তথ্য সামনে এসেছে। আর তা হলো চীন অবৈধভাবে তিব্বতি, উইঘুর এবং কাজাখদের ডিএনএ সংগ্রহ করছে।
হিউম্যান জেনেটিক্স নামে একটি বিজ্ঞান জার্নাল থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ওই জার্নাল একটি গবেষণাপত্রের বিষয়ে জানিয়েছে, যেখানে তিব্বতিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটা মোটামুটি সুস্পষ্ট যে ওই গবেষণায় ভুক্তভোগী কারও থেকে কোনও সম্মতি নেওয়া হয়নি। এই গবেষণা জমা দেওয়ার সময় লেখকরা বলেছিলেন, যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সম্মতি নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে নেওয়া হয়েছিল কি না, তা পুরোপুরি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
কিভাবে এসব ডিএনএ ডাটাবেসগুলো সরকার নজরদারির জন্য অপব্যবহার করে সে সম্পর্কে জাতিসংঘের একজন বিশেষ প্রতিবেদক জানিয়েছেন, এসব ডাটা কোন ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন এবং পিতৃত্ব শনাক্তকরণের কাজে ব্যবহার হয় এবং এতে ন্যায়বিচার অঙ্কুরেই মরে যায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের সম্মতি না নিয়ে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে তিব্বতি জনগণ, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করছে। তাদের প্রতিবেদনে ওই এলাকায় ‘অপরাধ সনাক্তকরণ’ কর্মসূচির আড়ালে ব্যাপক ডিএনএ ডাটাবেস সংগ্রহের প্রমাণও রয়েছে। ১৯৫০-এর দশকে অবৈধ দখলদারিত্বের পর থেকে চীন সর্বদা তিব্বতের সম্পূর্ণ জাতিকে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করেছে। তারা ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে তিব্বতের জনগণকে নিপীড়ন করেছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তিব্বতে সেখানকার জনগনের কোন মৌলিক মানবাধিকার নেই, সবসময় তারা কমিউনিস্ট পার্টির কঠোর নজরদারির অধীনে থাকে। যদি তারা কোন চীনা নীতি এবং এজেন্ডা মেনে না চলে তবে তাদের শাস্তি বা কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, তিব্বতের নাইমো কাউন্টিতে চীনা কর্তৃপক্ষ তিনটি কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু এই ব্যাপারে ওই শিশুদের মা-বাবার সম্মতি নেওয়া হয়েছিল, এমন কোন তথ্য ছিল না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডিএনএ অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সম্মতিক্রমে এই তথ্য সংগ্রহ করা না হলে তার অপব্যবহারের ঝুকি থাকে।’
চীনের পুলিশ গত ছয় বছরে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতে প্রায় ১.২ মিলিয়ন ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই সংখ্যাটি তিব্বতের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলেছে কীভাবে চীনা কর্তৃপক্ষ পদ্ধতিগতভাবে পিতামাতার কোনো কথা বা সম্মতি ছাড়াই ৫ বছর বয়সী শিশুদের রক্ত থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর তিব্বত বলছে, চীনের তিব্বতীদের গণ ডিএনএ সংগ্রহের বিষয়টি আপত্তিজনক কিন্তু চীনের জন্য এটি বিস্ময়কর নয় কারণ অবৈধ দখলদারিত্বের মাধ্যমে তিব্বতকে তাদের সামাজিক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পরীক্ষাগার হিসাবে ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রমাগত গণ নজরদারি, বৌদ্ধ বিহার এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চীনা সৈন্যদের জোরপূর্বক প্রবেশ এবং তিব্বতিদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে তাদের দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করানোর প্রচেষ্টা।
চীনের এই নিপীড়নমূলক পদ্ধতি কখনই হ্রাস পায়নি বরং এর বর্বরতার পরিপ্রেক্ষিতে বেড়েছে। নতুন কিছু প্রতিবেদনে এমন তথ্য রয়েছে যা প্রমাণ করে নমুনা সংগ্রহ অপরাধী বা সন্দেহভাজনদের জন্য করা হচ্ছে না। এটি বছরের পর বছর ধরে চলছে এবং সংগৃহীত ডিএনএ নমুনাগুলো এমন পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের যারা কোনকালেই অপরাধী বা সন্দেহভাজন ছিল না।
যে মিথ্যা কর্মসূচির অধীনে এই পুরো ডিএনএ সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিলো তা এখন অর্থহীন কারণ পুলিশ নির্দিষ্ট কোন সক্রিয় গোষ্ঠী বা সরকারেএ সমালোচকদের টার্গেট করছে না বরং পুরো সম্প্রদায়ের কাছ থেকেই এই নমুন সংগ্রহ করা হচ্ছে। সবচেয়ে বাজে বিষয় হলো শিশুদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ।
চীন ২০১০ সাল থেকে নির্বাসিত তিব্বত সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপ বা আলোচনার জন্য রাজি হয়নি। কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, কীভবে দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনা এই সমস্যাকে দূর করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই তিব্বত-চীন বিরোধ সমাধান আইনের প্রচার চীনকে আলোচনার টেবিলে আসার জন্য চাপে রাখবে।
তিব্বত ইস্যুগুলোর জন্য মার্কিন বিশেষ সমন্বয়কারী উজরা জেয়া এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তিব্বতে অনিচ্ছাকৃত, গণ ডিএনএ সংগ্রহ এবং তা নথিভুক্ত, বিশেষকরে শিশুদের ক্ষেত্রে যেটা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো খুবই বাজে। আমরা পিআরসিকে এই দমনমূলক নীতি বন্ধ করার এবং তিব্বতিদের মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান করার আহ্বান জানাই।’
তিব্বতিদের জন্য এটা সবসময় আশাব্যঞ্জক যখন তারা এই ধরনের সমর্থন পায় এবং এই সমর্থনে এটাই দৃশ্যমান হয় যে তারা ন্যায়বিচার পেতে পারে। আর চীনকে যদি এখনই জবাবদিহিতার আওতায় না আনা হয়, তবে তিব্বতের অনন্য পরিচয় এবং সমগ্র তিব্বতি জাতিসত্তাকে মুছে ফেলার চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে চীন এই নৃশংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।