Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তৃতীয় দফায় আবারো ক্ষমতার দোরগোড়ায় শি জিনপিং

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০২২, ১১:১৮ এএম

চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস শুরু হচ্ছে ১৬ই অক্টোবর রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে। ধারণা করা হচ্ছে কম্যুনিস্ট পার্টি ওই সভায় শি জিনপিংকে তৃতীয় দফায় আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রস্তাব অনুমোদন করবে। সেটি হলে চীনের রাজনীতিতে তা হবে একটি রেকর্ড।
চীনে শি জিনপিংকে দেখা হয় মাও সে তুংয়ের পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর চীনা নেতা হিসাবে। তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হতে পারলে চীনের ক্ষমতায় তার নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত হবে। অনেকেই মনে করেন এমনও হতে পারে যে ৬৯ বছরের শি আজীবনের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখবেন।
ধারণা করা হচ্ছে দলের আসন্ন কংগ্রেসেও (প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়) শি তার প্রথম দুটো পদ ধরে রাখবেন।

চীনের পার্টি কংগ্রেসে কী ঘটে?
বেইজিংয়ের তিয়েনানমেন স্কোয়ারের গ্রেট হলে কম্যুনিস্ট পার্টির ২৩০০ ডেলিগেট বা প্রতিনিধি এক সপ্তাহের জন্য জড়ো হবেন। তাদের মধ্যে ২০০ জনের মত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হবেন। আরও ১৭০ জন হবেন বিকল্প সদস্য।
কেন্দ্রীয় কমিটি দলের পলিটব্যুরোর ২৫ জন সদস্য নির্বাচন করবে। তারপর পলিটব্যুরোর সদস্যরা পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়োগ করবেন। এরাই দলের ক্ষমতাধরদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর গোষ্ঠী। বর্তমানে পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা সাত, যার মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল শি জিনপিং। তাদের সবাই পুরুষ।
কংগ্রেসেই যেসব সিদ্ধান্ত হয় তা নয়। কংগ্রেসের মূল অধিবেশন শেষ হওয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বসবে।
লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ সাং বলেন, 'শির শাসনাধীনে চীন পুরোমাত্রায় একটি একনায়ক রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মাও সে তুংয়ের সময় যেমন একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি তেমন না হলেও চীন সেদিকেই এগুচ্ছে।'
অধ্যাপক সাং বলেন, কম্যুনিস্ট পার্টির আসন্ন কংগ্রেসে দলের সংবিধান বদল করা হতে পারে। তিনি মনে করেন শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারাই দলের জন্য অনুসরণীয় দর্শন হয়ে পড়বে।
চীনা সমাজতন্ত্রের স্বরূপ কী হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে শি জিনপিংয়ের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা রয়েছে। তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শনের মূলে রয়েছে দৃঢ় জাতীয়তাবাদ। ব্যক্তিখাতের ব্যবসা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তার শাসনামলে চীনা কর্তৃপক্ষ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের খুবই বড় কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর চড়াও হয়েছে।
প্রফেসর সাং বলেন, 'যদি তেমনটি হয় (তার চিন্তাভাবনাই দলের দর্শন হয়ে পড়ে) তাহলে দলই তাকে একজন স্বৈরাচারীতে পরিণত করবে।'
কংগ্রেসে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্ব চীনের জন্য বহু নতুন নতুন নীতি তুলে ধরবে। চীন আগামী দিনগুলোতে কোনে পথে যাবে সে ব্যাপারে যে কোনো ইঙ্গিতের দিকে বাকি বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি এবং পরিবেশ নিয়ে চীনের ভবিষ্যত চিন্তাভাবনা বাকি বিশ্বের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
গত কয়েক দশকে চীনের অর্থনীতিতে বিশাল উন্নতি হয়েছে। তবে হালে ঘনঘন করোনা লকডাউনের কারণে ব্যবসা বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ হয়েছে, দেশের ভেতর মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং সেইসাথে আবাসন নির্মাণ খাতে বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিণতিতে চীনা অর্থনীতি বেশ বেকায়দায় পড়ে গেছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেওয়ার যে আশংকা তৈরি হয়েছে তাতে চীনা অর্থনীতির ওপরও ভরসা কমছে। শির গত দু দফার শাসনামলে চীনা অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির মাত্রা তার দুই পূর্বসুরি জ্যাং জেমিন এবং হু জিনতাওয়ের সময়ের তুলনায় কমেছে।
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে চীনে কোনো কম্যুনিস্ট সরকারের বৈধতা অনেকটাই নির্ভর করে সেই সরকার মানুষের আয় বাড়াতে পারছে কিনা, কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে কিনা তার ওপর। ফলে, আগামী পাঁচ বছর শি যদি এসব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হন, বড়রকম রাজনৈতিক সমস্যায় পড়বেন তিনি।

জিরো কোভিড
চীনের জিরো কোভিড নীতি শির অন্যতম প্রধান একটি নীতি। যেখানে বাকি বিশ্ব স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে, সেখানে একমাত্র চীন করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখনও এলাকা ধরে লকডাউনসহ কঠোর কড়াকড়ি অব্যাহত রেখেছে। এখনও গণহারে কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে, মানুষজনকে দীর্ঘ সময় ধরে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে শেনজেন এবং চেংডুসহ ৭০টিরও বেশি শহরে আংশিক এবং পুরোপুরি লকডাউন দেয়া হয়েছে। ফলে, লাখ লাখ মানুষের এবং প্রচুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। শি বলেছেন তার কোভিড নীতিকে 'বিকৃত' করে তুলে ধরা হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তবে কংগ্রেস শুরুর আগে দেশের ভেতর বড় কোন কোভিড সংক্রমণ তার সরকারের দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করবে। অনেকে ধারণা করছেন তাদের কংগ্রেস থেকে কম্যুনিস্ট পার্টি কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয় ঘোষণা করতে পারে এবং জিরো কোভিড নীতি বাদ দিতে পারে।
আবার, দল হয়তো এমন কথাও বলতে পারে যে চীন অন্যান্য অনেক দেশের মত নয়, তারা অর্থনৈতিক স্বার্থের চাইতে জনগণের জীবনের মূল্য বেশি দেয়।

তাইওয়ান এবং পশ্চিমা বিশ্ব
শি সবসময় পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে শক্ত অবস্থানের পক্ষে, বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুতে। আগস্ট মাসে মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ানে এক সফরের পর ক্রুদ্ধ চীন তাইওয়ানের চারদিকে সাগরে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায়।
চীন কখনই তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব মানে না এবং শি একাধিকবার বলেছেন ২০৪৯ সালের মধ্যে অবশ্যই তাইওয়ানকেও চীনের অংশ করে নিতে হবে। সেজন্য তিনি শক্তি প্রয়োগও নাকচ করেননি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন তাইওয়ান চীনের অংশ হলে বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি মারাত্মক পোড় খাবে।
সে কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে তাইওয়ানের কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে তথাকথিত যে 'ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইনের' অংশ হিসাবে বিবেচনা করে, সেই বলয়ের মধ্যে বেশ কতগুলো দেশ এবং অঞ্চল রয়েছে যেগুলো গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। সূত্র: বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ