পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মক্কা মুয়াযযমার তিন মাইল দূরে হেরা গুহা নামে একটি পর্বত গুহা ছিল। হুজুরে পাক (সা.) সেখানে বসে ধ্যান, উপাসনা করতেন। সাথে করে নিয়ে যেতেন কয়েকদিনের পানাহার সামগ্রী। মোরাকাবা শেষ করে আবার গৃহে ফিরে আসতেন। পুনরায় সেখানে চলে যেতেন। এভাবেই মাসের পর মাস অতিবাহিত হচ্ছিল। বুখারী শরীফে আছে, রাসূলে কারীম (সা.) হেরা গুহায় যে সাধনা ও উপাসনা করতেন তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করে শরহে বুখারী আইনি গ্রন্থে বলা হয় যে, তা ছিল ধ্যান, গবেষণা ও নছীহত কবুল করা। এই ইবাদত ছিল তাঁর পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীমের ইবাদতের মতো, যা তিনি নবুয়ত লাভের পূর্বে করতেন। তারকার চমক, চাঁদের কিরণ ও সূর্যের আলো দেখে তিনি বিস্ময়াভিভূত হয়েছিলেন; কিন্তু এগুলো অস্তমিত হলে তিনি বলতেন, আমি লয়শীল বস্তুকে পছন্দ করি না এবং পরক্ষণেই বললেন, আমি আমার মুখমÐলকে সেই স্রষ্টার সামনে আনত করেছি যিনি জমিন ও আসমানের স্রষ্টা। একজন পাশ্চাত্য ঐতিহাসিক রাসূলে কারীমের হেরা গুহার উপাসনা সম্পর্কে বলেছেন, চলাফেরা ও নির্জন অবস্থানের কালে মুহাম্মদ (সা.)-এর মনে অগণিত প্রশ্ন ভিড় জমাত। যেমনÑ আমি কে? এ বিশাল জগত কি? নবুয়ত কি বস্তু? আমি কোন বস্তুর প্রতি আস্থা স্থাপন করব? তবে কি হেরা পাহাড়ের পাথর রাশি তূর পাহাড়ের আকাশচুম্বী শৈল শিখর ও সমতল মাঠ এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছিল? না, দেয়নি, বরং স্উুচ্চ গম্বুজ, দিবা-রাতের আগমন-প্রত্যাগমন, জ্যোতির্ময় নক্ষত্র, বর্ষণ-মুখর বৃষ্টি কোনো কিছুই উত্তর দিতে সক্ষম হয়নি। নবুয়তের সূচনা ছিল এই যে, রাসূলে কারীমের প্রতি স্বপ্নে গোপন তত্ত¡ প্রকাশ পেতে লাগল। তাঁর স্বপ্নগুলো হুবহু রূপায়িত হতো। একদিন তিনি হেরা গুহায় ধ্যাননিবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একজন গায়েবী ফেরেশতা অবলোকন করলেন। ফেরেশতা বললেন, পড়–ন! পড়–ন সেই প্রতিপালকের নামে যিনি সারা জাহানের স্রষ্টা, যিনি মানুষকে মাংসপিÐ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। পড়–ন! আপনার প্রতিপালক মহান যিনি মানুষকে কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন সেই কথা যা তারা জানত না। এর পর হুজুরে পাক (সা.) গৃহে ফিরে এলেন। আল্লাহর মাহাত্ম্যে তখর তাঁর অন্তর পরিপূর্ণ। তিনি খাদিজার কাছে সবকিছুই খুলে বললেন। খাদিজা তাকে ওয়ারাকার নিকট নিয়ে গেলেন। তিনি হিব্রæ ভাষা জানতেন এবং তাওরাত ও ইঞ্জিলে অভিজ্ঞ ছিলেন।
তিনি রাসূলে পাক (সা.)-এর ঘটনা শুনে বললেন, এ হলো হযরত মূসার নিকট আগত নামুসের ঘটনা। রাসূলে কারীম (সা.) ভয় পেয়েছিলেন। খাদিজা তা দেখে বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না। আল্লাহ আপনাকে ছেড়ে যাবেন না। ওয়ারাকা তাঁর নবুয়তের সাক্ষ্য দিলেন। মূলত রাসূলে কারীমের ভয়, শঙ্কা ও কম্পন ছিল আল্লাহর মহত্ত¡ ও নবুয়তের জিম্মাদারির বহিঃপ্রকাশ। ছহীহ বুখারীর বাবুত তা’মীর অধ্যায়ে আছে, কিছুদিনের জন্য অহী আগমন বন্ধ হলো। এমতাবস্থায় রাসূলে কারীম পর্বত শৃঙ্গের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিতে চাইলেন। এমনি সময় জিব্রাইল এসে বললেন, হে মুহাম্মদ (সা.)! সত্যিই আপনি আল্লাহর নবী। শুনে, রাসূলের মনে শান্তি এলো; কিন্তু পরে আবার অহী বন্ধ হলে তিনি পাহাড়ের উপর থেকে পতিত হবার ইচ্ছে করলেন। এরূপ অবস্থায় জিব্রাইল তাঁকে এসে বলে সান্ত¦না দিতেন, হে মুহাম্মদ (সা.)! আপনি যে সত্যিই আল্লাহর নবী। হাফেজ ইবনে হাজার উল্লেখিত হাদিসের প্রথমাংশের প্রতি আপত্তিকারীদের বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেন, একজন নবী কি করে নবুয়তের ব্যাপারে সন্দেহ করতে পারে? তারপর এক বিখ্যাত হাদিস বিশারদের বক্তব্য উদ্ধৃত করেন, “নবুয়ত এক বিরাট দায়িত্ব। এ দায়িত্ব বহলে সক্ষম হওয়া প্রথমেই সম্ভব নয়। এ জন্য রাসূলকে স্বপ্নের মাধ্যমে এর গুরুত্ব অবহিত করা হয়েছে। তারপর সহসা ফেরেশতা অবলোকন করায় মানবসুলভ প্রকৃতিবশে তিনি ভীতিবোধ করেছিলেন।
হযরত খাদিজা তাঁকে সান্ত¦না দিয়ে ওয়ারাকার কাছে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি পূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করলেন।” উক্ত মুহাদ্দিস বলেছেন, তিনি ওয়ারাকার কথা শুনলেন, তখন তার পূর্ণ ইয়াকীন হলো। উক্ত মুহাদ্দিস আরো লিখেছেন যে, অহীর আগমন বার বার বন্ধ হওয়া রাসূলে কারীম (সা.)-এর সহনশীলতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করারই কারণ ছিল। তিরমিযি শরীফে উল্লেখ আছে যে, নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে রাসূলে কারীম (সা.) সিরিয়া ভ্রমণকালে বসরা নগরে উপনীত হয়ে যখন একটি বৃক্ষের নীচে বিশ্রাম করছিলেন, তখন তার শাখা-প্রশাখা, পল্লব প্রভৃতি আনত হয়ে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। এ বিস্ময়কর ঘটনা দেখে বুহাইরা পাদ্রীর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, তিনি আল্লাহর নবী। তাছাড়া মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে যে, রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন, আমি এ পাথরটিকেও চিনি, যা নবুয়তের পূর্বে আমাকে সালাম করেছিলে। আরো উল্লেখ আছে যে, নবুয়তের পূর্বে ফেরেশতাগণ তাঁর বক্ষ বিদারন প্রাক্কালে শরীরের একটি অংশ বের করে ফেলে দিয়েছিলেন। এতদসত্তে¡ও এসব বর্ণনাকারী কি করে বলতে পারেন যে, জিব্রাইলকে দেখে তিনি ভীত হয়েছিলেন ও তাঁর দেহ-মনে কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল? এমনকি তিনি নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দিতে চাইলেন এবং বার বার জিব্রাইলের সান্ত¦না দেয়ার প্রয়োজন হলো? কোনো নবী কি কখনও প্রথম পর্র্যায়ে অহীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করতেন? হযরত মূসা যখন বৃক্ষ থেকে আওয়াজ শুনলেন, আমিই আল্লহ! তা শুনে কি তিনি সন্দেহ করেছিলেন? না, করেননি। রাসূলে কারীম (সা.)-এর বেলায়ও এমন বিশ্বাস করাই শ্রেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।