Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাব্য সঙ্কটে দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : পূর্ণ শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই নাব্য সঙ্কটে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল বন্দরের সামনে কীর্তনখোলা নদীর বেসিনে ভাটার সময় মাত্র ৫ ফুট গভীরতায় মাঝারি থেকে বড় মাপের নৌযানগুলো আটকে যাচ্ছে। যদিও বিআইডব্লিউটিএ গত সপ্তাহ থেকে এ নদী বন্দরের নাব্য উন্নয়নের ড্রেজার নিয়োগ করেছে, কিন্তু চাহিদানুযায়ী বেসিনটিকে ১২ ফুট  গভীরতায় উন্নীত করে নদী বন্দরটির অচলাবস্থা দূর করতে অন্তত দু’মাস সময় লাগবে। ততদিনে কীর্তনখোলার নাব্য আরো সংকটে পড়তে পারে। এ বন্দর থেকে প্রায় দেড় লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণের লক্ষে একটি বেসরকারি ড্রেজার নিয়োগ করা হয়েছে।
পলি পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে বরিশাল-ভোলা নৌপথের শাহেবের হাট চ্যানেলের বরিশাল প্রান্তের মুখসহ বরিশাল-ইলিশা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের পাতারহাট বন্দরের সমনের বিশাল এলাকা। গত কয়েক বছর ধরেই শাহেবেরহাট চ্যানেলের বরিশাল প্রান্ত শুষ্ক মৌসুমে ভাটির সময় বন্ধ হয়ে গেলেও বিআইডব্লিউটিএ বিষয়টি নিয়ে খুব একটা নজর দিতে পারেনি। এমনকি লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও গত কয়েকটি শুষ্ক মৌসুমেই আনুষ্ঠানিকভাবে শাহেবের হাট চ্যানেলে ও পাতারহাট বন্দরের নাব্য উন্নয়নে ড্রেজিং-এর অনুরোধ করা হচ্ছে।
কিন্তু গত বছর কোনো প্রকারে পাতারহাট বন্দরÑ বেসিন ও সন্নিহিত এলাকায় কিছু ড্রেজিং করা হলেও তা ছিল খুবই সীমিত। ফলে বছর ঘোরার আগেই ঐ এলাকা নাব্য হারিয়েছে। শাহেবের হাট চ্যানেলটি ড্রেজিং করা হয়নি। এখন ভাটার সময় পাতার হাট বেসিন ও শাহেবের হাট চ্যানেলেটির বরিশাল প্রান্তে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকছে। এর ফলে বরিশালের সাথে ভোলার নৌপথে দূরত্ব  ও চলাচলের সময় বাড়ছে। বন্ধ হয়ে গেছে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপুর হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাটিও।
একটি বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে বরিশাল নদী বন্দরে গত ১ ডিসেম্বর থেকে নাব্যতা উন্নয়নের কাজ শুরু হলেও শুধুমাত্র রাতেরবেলা এ ড্রেজিং চলছে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল মহলের মতে, ‘বন্দর এলাকায় দিনেরবেলা নৌযান চলাচলের সংখ্যাধিক্যের কারণে ড্রেজিং করা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় শুধুমাত্র রাতের বেলাতেই নাব্য উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। এমনকি বন্দরের মূল টার্মিনালের ৬টি লং পন্টুন সরিয়ে সেখানে ড্রেজিং করা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং ও বন্দর বিভাগের দায়িত্বশীল মহল। ফলে কিছুটা বাড়তি সময় লাগছে।
তবে বন্দর ব্যবহারকারী  নৌযান মালিক ও চালকদের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত বরিশাল বন্দরের নাব্য উন্নয়নসহ পাতারহাট বেসিন ও শাহেবের হাট চ্যানেল দুটির নাব্য উন্নয়নের দাবি জানান হয়েছে।
অপরদিকে বরিশাল-মোংলা-খুলনা নৌপথে ‘বাংলার সুয়েজখাল’ হিসেবে খ্যাত গাবখান চ্যানেলটির অবস্থাও ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। আসন্ন পূর্ণ শুষ্ক মৌসুমে অতি গুরুত্বপূর্ণ এ চ্যানেলটির নাব্য ১২ ফুটের নিচে নেমে আসার আশঙ্কা করছেন নৌযানের চালকগণ। ফলে মংলা ও খুলনাতে পণ্য এবং জ্বালানি পরিবহন মারাত্মক সঙ্কটে পড়তে পারে। এমনকি চ্যানেলটির ঝালকাঠি প্রান্তের মুখে ও বাংলাদেশ-চীন ৫ম মৈত্রী সেতুর পশ্চিম পাশে এর প্রশস্ততাও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। গত বছরও চ্যানেলটির নাব্য উন্নয়নে সংরক্ষণ ড্রেজিং করা হয়। ২০০৫-০৬ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিপূর্ণ উন্নয়ন ড্রেজিং-এর মাধ্যমে চ্যানেলটি ডবল ট্রাফিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা হলেও নিয়মিত সংরক্ষণ ড্রেজিং না করায় বছর তিনেক পরেই তার নাব্যতা ও প্রশস্ততা হ্রাস পায়। ফলে  পুনরায় চ্যানেলটিকে সিঙ্গেল ট্রাফিকে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল মহলের মতে ‘পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। নৌযোগাযোগ নির্বিঘœ রাখতে সঠিক সময়েই গাবখান চ্যানেলে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করা হবে’।
এদিকে বরিশাল-ঢাকা নৌপথের বরিশাল-চাঁদপুর অংশেও বেশ কয়েকটি এলাকায় নাব্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। এছাড়াও পটুয়াখালী বন্দর এলাকার লোহালিয়াতে এবং বরগুনারও কয়েকটি নৌপথে নাব্য সঙ্কট ক্রমে প্রকটাকার ধারণ করছে।
এসব ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, নৌপথ উন্নয়ন খাতের মোট বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ ও ড্রেজারই নিয়োগ করা হচ্ছে মাওয়া ও পাটুরিয়া ফেরি সেক্টরে। এছাড়াও মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটি সচল রাখতেও বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এর পরেও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথগুলো সচল রাখতে সম্ভব সবকিছু করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ