Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেয়ে নীলা

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

সৎমায়ের সংসারে বেড়ে ওঠা নীলা।কলেজে পড়াশোনা করছে।অন্য পাঁচটা মেয়ের মতো সোনার চামুচ নিয়ে জন্ম নিলেও।বর্তমানে তার মতো অভাগা মেয়ে আর হয়তো এই পৃথিবীতে নেই।সৎ মায়ের পাশাপাশি, বাবার নির্যাতনও কাটিয়ে ওঠতে হয়।যতক্ষণ নীলা কলেজে থাকে তখন পৃথিবীর সব নির্যাতন থেকে মুক্তি পায়।তাই সেসময়টা ছন্নছাড়া পাখির মতো কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়ায়।

—আজ, কলেজ ছুটি হওয়ার আগেই নীলা,’বাড়িতে চলে আসল।নীলা পাশের ফ্লাটের একজন মৎস্য কর্মকর্তার বাসায় ঝিয়ের কাজ করে থাকেন।তার বাসায় রান্নাবান্না ও ধোয়ামোছার কাজ করে আসে।এর বিনিময়ে শহরের বাবু নীলাকে ‘২০০০’হাজার টাকা করে দেয় প্রতিমাসে।তাতে নীলার পড়ালেখার খরচ টেনেটুনে হয়ে যায়। — নীলার সৎমা! এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।তাই প্রতিদিন নীলার উপর অমানবিক অত্যাচার করে থাকেন। মদখোর বাবার হাতে যখন টাকা থাকে না।তখন সব ঝড়তুফান নীলার শরীরের উপর দিয়ে যায়।এভাবে নীলার প্রতিটা মুহূর্ত কেটে যায়।
শহরের বাবু,নীলার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সেদিন ‘১০০০’ টাকা বকশিস দিলো।সেই খবর সৎমায়েরা কানে পৌঁছে যায়।নীলা বাবার ভয়ে সৎমাকে‘৫০০,টাকা দিয়ে দিল।কিন্তু তাতেও সৎমা সন্তুষ্ট ছিল না।তার‘১০০০’টাকাই লাগবে। নীলা মাকে বলল,’ আমার সামনে পরীক্ষা তাই আমাকে কয়েকটি বই কিনতে হবে! এই কথাশোনা মাত্র সৎমা রেগেমেগে মুখ ভেঙচি কেটে বলে,’কত্ত শখ! তোর আবার কিসের পড়াশোনা?এই বলে হাতের ঝাড়ু দিয়ে গায়ে আঘাত করতে করতে বলে,’ মাকে তো ‘খেয়েছিস’ এখন আমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে শেষ করার ফন্দি করছি।অলক্ষ্মী মেয়ে কোথাকার। কোথাও গিয়ে মরতে পারিস না।তোদের তো আবার মরণও হয়।
—সৎমায়ের অমানবিক নির্যাতন সয়ে গুটিয়ে শুয়ে হয়ে ঘরের এক কোণায় পড়ে আছে।সন্ধ্যায় মদখোর বাবা আসল।সৎমা বাবাকে ফুসলিয়ে দিলো।মদখোর বাবা বউয়ের কথা কানে নিয়ে নীলাকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে।নীলা সজোরে মাগো বলে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে......
নীলার কোনো সাড়াশব্দ নেই,তবুও নিষ্ঠুর বাবা-মা একটিবার গিয়ে দেখল না,’নীলা বেঁচে আছে কি-না? নীলার নিথর দেহ মাটিতে পড়ে আছে।এভাবে রাত কেটে গেলো।সকালে গিয়ে দেখে নীলা এখনও মাটিতে পড়ে আছে।আর চারদিকে মাছি ভনভন করছে।ততক্ষণে বুঝে গেলো নীলার নিষ্ঠুর বাবা-মা। নীলা যে মারা গেছে।চারদিকে ছড়িয়ে গেলো খবরটা।সবাই এসে দেখল,’সত্যিই নীলা মারা গেছে,গ্রামবাসী সবাই কান্না করছে।কিন্তু বাবা-মায়ের চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও ঝরল না।প্রতিবেশী বলতে লাগল,’প্রতিদিন নির্যাতিত হওয়ার চাইতে একেবারে মরে গেছে মেয়েটা। সেটাও ভালো হয়েছে। প্রতিবেশী যাওয়ার সময় বলতে লাগল,’ছিঃ ছিঃ ছিঃ এমন বাবা-মা আর কার যেনো না হয়”।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেয়ে নীলা

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
আরও পড়ুন