Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভাঙনের ৬ মাস পরও সংস্কার হয়নি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

| প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. ওমর ফারুক, ফেনী থেকে : ফেনীর মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশের কাজ ছয় মাসেও সংস্কার হয়নি। ফলে স্থানীয়দের দুর্ভোগের শেষ নেই। ইতোমধ্যে একটি অসাধু চক্র বিনা টেন্ডারে তিনটি বাঁধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া সুবিধাবাদী চক্র পাউবো অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নামমাত্র বাঁধ নির্মাণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টের বাঁধগুলো এখনো ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, পাউবো অফিসের কর্মকর্তারা মাঝে-মধ্যে গিয়ে বাঁধগুলো দেখে এলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে কয়েক দফা বন্যায় পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৪টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দেয়। এসময় পরশুরাম- ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ১০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ বন্দি হয়ে পড়ে। এছাড়া পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়। বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগ আর ভোগান্তির চিত্র তখন বিভিন্ন মিডিয়া তুলে ধরেছে। মুহুরী-কহুয়া-ছিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বঁঁধের ২৪টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিলেও মূলত, শতাধিক পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে স্থানীয়রা বলেন, অবিলম্বে বাঁধগুলো নির্মাণ করা না হলে পুনরায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি এলে সাধারণ মানুষের দুর্দশার অন্ত থাকবে না। গতবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি। উপজেলা প্রশাসন শুকনো খাবার বিতরণ করে দায় সেরেছে। অন্য কোনো সংস্থা বন্যার্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেনি। ফুলগাজী-পরশুরামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ২৪টি পয়েন্টে ভাঙনের সৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ পড়েছে ফুলগাজী উপজেলায়। ১ম দফা বন্যায় ফুলগাজীতে কয়েকটি বাঁধ ভেঙে যায়। এসময় ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিমের ভগ্নিপতি ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. সেলিম তড়িঘড়ি করে তিনটি বাঁধ সংস্কার করেন। কোনো টেন্ডার আহŸান করা ছাড়াই বাঁধগুলো সংস্কার করা হয়েছে। নদীর বালু এবং মাটি ব্যবহার করে নামমাত্র কাজের মাধ্যমে বাঁধগুলো সংস্কার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। যেখানে অদ্যাবধি পাউবো কোনো টেন্ডার আহŸান করেনি। সেক্ষেত্রে মো. সেলিম কীভাবে বাঁধগুলো সংস্কার করেছেন তা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কহিনুর আলম বলেন, সেলিম তাদের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার নয়। এছাড়া তারা এখনো কাজ বুঝে নেননি। ফলে কে বাঁধ নির্মাণ করেছে তিনি বিষয়টি অবগত নন। চলতি মাসে দরপত্রের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার আহŸান করে ইজিপিতে বাঁধের বিষয়ে দরপত্র ছাড়া হয়েছে। কাজের চ‚ড়ান্ত অনুমোদন হওয়া ছাড়া কাজ করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, বাঁধ সংস্কারে মাটি আর নদীর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। নদীর ভিতর থেকে বালু উত্তোলন করে বাঁধে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের হিসাবে ১৬০০ বস্তা বালু দিয়ে উত্তর দৌলতপুরের ভাঙনটি সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া সাহাপাড়া নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙনটিও শুধুমাত্র বালু আর মাটি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান। উত্তর দৌলতপুরের বাঁধটি নির্মাণে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকার মতো খরচ হলেও সেলিম তার দশ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে প্রচার করছে। ফলে পাউবো এবং সেলিমের যোগসাজশে মোটা অংকের বিল আদায়ের তদবির চলছে। এদিকে ২৪টি বাঁধ সংস্কার করতে দীর্ঘসময় লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় এক বিশেষজ্ঞ। শিগগিরই কাজ শুরু না হলে বাঁধটি টেকসই এবং মজবুত হওয়ার আগেই পুনরায় বন্যা শুরু হবে। এতে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে পুনরায় বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসবে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া বাঁধের কতটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই অবগত নন। গতকাল দুপুরে সরাসরি তার সাথে আলাপকালে তিনি বাঁধের সংখ্যা প্রায় ২৩/২৪টি উল্লেখ করেন। এ সময় বাঁধের কোনো কোনো স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে তিনি উক্ত প্রতিবেদককে জানাতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে ফেনীর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কোহিনুর আলম ফেনীতে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম দুর্নীতি আরো বেড়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসেন না। এছাড়া তিনি যোগদানের পর থেকে নিজেও নিয়মিত অফিস করেন না। পাউবো সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্যই অফিসটিতে পাওয়া যায় না। গত কয়েক মাস পূর্বে ফেনী নদীর বিষয়ে তথ্য চাইতে গেলেও তারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি। অভিযোগ উঠেছে ফেনী পাউবো অফিসের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন না করে আয়েশে জীবনযাপন করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ