পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ১৯.০৯ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ৫২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ১২টি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গত মঙ্গলবারের একনেক সভায় একদিনে দেড় লক্ষাধিক কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন একটি রেকর্ড। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎপ্রকল্প ছাড়াও ২০ হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ডিপিডিসির বিদ্যুৎবিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প(১), ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর উপর রেলসেতু প্রকল্পসহ চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ সমান্তরাল গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ (প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা), ১ হাজার ৮৭৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ বাংলাদেশ (ভেড়ামারা)-ভারত (বহরমপুর) বিদ্যমান আন্তঃসংযোগ বিদ্যুৎগ্রীডের ক্ষমতা বর্ধিতকরণ প্রকল্প এবং ৭৭৬ কোটি টাকার আনোয়ারা ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্প। সেই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সারাদেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের মত প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন। প্রকল্পগুলোর প্রকৃতি ও অবস্থান লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সরকার প্রধানত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের মেগাপ্রকল্পের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এসব প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকায় যথেষ্ট গতি সঞ্চারিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান সরকারের গৃহীত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অর্ধশতাব্দী কাল ধরে একটি পরিত্যক্ত বা অনিশ্চিত প্রকল্প হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারসহ বিভিন্ন সময়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা গেলেও প্রয়োজনীয় অর্থের নিশ্চয়তার অভাবে তা সম্ভব হয়নি। ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৯১ হাজার কোটি টাকা শতকরা ৪ ভাগ সুদে ২০ বছরে পরিশোধের শর্তে যোগান দেবে রাশিয়া। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনের পক্ষে এটমস্ট্রয় এবং বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের মধ্যে ৪টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ৫ হাজার কোটি টাকার ৪ হাজার কোটি টাকা রাশিয়া ব্যয় করেছে এবং এখন তা’ সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে বলে জানা যায়। চলতি মাসেই রূপপুর প্রকল্পের মূল কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়ান বিনিয়োগ ও বাস্তবায়নের অংশীদারিত্ব ছাড়াও অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলোতে চীন ও জাপানের মত আমাদের ট্রাডিশনাল উন্নয়ন অংশীদাররা এগিয়ে এসেছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়নে এত টাকার প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে সময়োপযোগী সাহসী উদ্যোগ এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ নিশ্চিত করার অনন্য সাফল্যের কৃতিত্ব মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশের উন্নয়নে এ ধরনের মাইলফলক প্রকল্প বাস্তবায়নে ত্বরিত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তা যে কোন উন্নয়নকামী রাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার মূল শর্ত ও পাথেয়। সামগ্রিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে নির্ধারিত সময়ে ও গৃহীত বাজেটে প্রকল্প বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় দেশে সরকার পরিবর্তিত হবে। কিন্তু দেশ ও জাতির উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোর সুফল যেমন সমগ্র দেশবাসী ভোগ করবে, একইভাবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত রাখতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও সমঝোতা থাকতে হবে। অতীতে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকার একাধিক উড়াল সেতু প্রকল্পের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে সেই ধারবাহিকতা রক্ষিত হয়েছে। তবে প্রায় প্রতিটি মেগা প্রকল্পেই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশী সময় এবং বাজেট বৃদ্ধির উদাহরণ তৈরী হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ গৃহীত মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন সে ধরনের দীর্ঘসূত্রতা ও অহেতুক ব্যয়-বৃদ্ধির খপ্পরে না পড়ে সে দিকে আগেই সতর্ক থাকতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও বছরের পর বছর ধরে তা ঝুলে থাকার ফলে একদিকে যেমন প্রকল্পের কাক্সিক্ষত সুফল থেকে জনগণ বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে ব্যয়-বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্পের কাজের মানেও ব্যত্যয় দেখা দেয়। বিশ্বায়নের রোডম্যাপ অনুসারে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো খুব দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেরও দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান আছে। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মত দিচ্ছেন। তবে ইতিমধ্যে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই ঢিমেতালে-ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে। ৫ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য একটি মেগা প্রকল্প ১২ বছরেও সমাপ্ত না হলে তা’ অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাক্সিক্ষত অবদানের বদলে জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোকে চারলেনে উন্নীত করণ প্রকল্পই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অতীতের ভুল ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার ফ্যাস্ট ট্রাকের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করার কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে জনগণ প্রত্যাশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।