Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্যুৎ-জ্বালানির যথেচ্ছ অপচয়

সাশ্রয়ী ব্যবহারে সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষিত গণহারে এসি সুবিধা নিচ্ছেন অননুমোদিত কর্মচারীরা সরকারি গাড়ি বহরে পুড়ছে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। বন্দরনগরীর পাঁচলাইশ সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় সুগন্ধা টাওয়ারে ইইডি’র চট্টগ্রাম জেলা অফিস। সরকারি এই অফিসের আওতাধীন সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ ছোট কর্তা থেকে শুরু করে অফিস সহকারি, ক্যাশিয়ার, অফিস সহায়ক, কারণিক পর্যন্ত ‘নির্বিচারে’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) সুবিধা ভোগ করতে দেখা গেলো। অথচ যথানিয়মেই সরকারি অফিসের এসি ব্যবহারের সুবিধা ভোগের জন্য তারা অনুমোদিত নন। ফলে তারা তা আদৌ পেতে পারেন না। অনুমোদিত কর্তারা তো এসি সুবিধা নিচ্ছেনই। গণহারে এসি সুবিধায় বাদ নেই অননুমোদিত কর্মচারীরাও।
গণহারে বিদ্যুতের কেন এহেন অপচয় ও অপব্যবহার এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জবাবদিহিতার কোন গরজ কিংবা এ নিয়ে মাথাব্যাথা নেই কারোর। তাছাড়া অবাধে পুড়ছে সরকারি গাড়ি বহরে জ্বালানি তেল-গ্যাস। আবার গাড়িতেও এসি সুবিধা নেয়া হচ্ছে বাড়তি জ্বালানি পুড়িয়ে। সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল-গ্যাস অপচয়ের পেছনে গচ্ছা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এর সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে লাগাম টেনে ধরবে কে?
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকারের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। দৈনিক ইনকিলাবকে তিনি জানান, এ অফিসের জুনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ের যারা এসি সুবিধা পাওয়ার কথা নয়, অথচ তা ভোগ করছেন এটা তার দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই হয়ে আসছে। সরকার বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ের জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি অফিসে অননুমোদিত যারা এসি সুবিধা নিচ্ছেন তাদের বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
শুধ্ইু চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের অফিসই নয়। বেশিরভাগ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, সংস্থা বা দফতরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল-গ্যাস ব্যবহারের নামে যথেচ্ছ অপচয় হচ্ছে। যেন অপচয়ের জোরদার প্রতিযোগিতা চলছে। দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা লাগামহীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে নির্বিকার। এমনকি এ ক্ষেত্রে তাদের ভাবখানা যেন এমন- ‘টাকা দেবে গৌরীসেন’। কাজেই চিন্তা কীসের!
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), পেট্রোলিয়াম করপোরেনের (বিপিসি) হেড অফিস ও এর অঙ্গ বা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানসমূহ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, কাস্টমস ও ভ্যাট, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদফতর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, বিভিন্ন সরকারি কলেজসহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমনই চালচিত্র। তাছাড়া জেলা-উপজেলা, থানা পর্যায়ের সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি অধিকাংশ অফিসের একই দৃশ্য।
বৈশি^ক পরিস্থিতিতে সারাদেশে বিদ্যুতের সঙ্কট ও লোডশেডিং ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল বিশেষ করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অতি সম্প্রতি ‘কঠোর’ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠের বাস্তব চিত্র তার সম্পূর্ণ বিপরীত। ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেড়ো’। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে যারা এসি সুবিধা পেতে পারেন না তারা তো নিচ্ছেনই। তাছাড়া যারা এসি সুবিধা পান তারাও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে ২৫ ডিগ্রি সে. এর নীচে এসি ব্যবহার না করার নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই।
সরকারের বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়ের নির্দেশনা পদে পদে উপেক্ষিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানির অপচয় ঘটছে যথেচ্ছভাবে। এর ফলে সারাদেশে বিদ্যুতের অপচয় ও অপব্যবহার ব্যাপক হচ্ছে। তেমনি সরকারি দফতরগুলোতে বিদ্যুৎ খরচও বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুতের ঘাটতি, বিভ্রাট আর লোডশেডিং। অথচ কোথাও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
সরকারি অফিসে এসি সুবিধা ও গাড়ি পান এমন কর্মকর্তারা তাদের অফিসে অধীনস্থ যারা এই সুবিধা পান না, অথচ ভোগ করে যাচ্ছেন তাদের হস্তক্ষেপ করছেন না। বলতে গেলে তাদের ঘাঁটান না। এতে করে বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে অবাধেই চলছে সরকারি সুবিধার অপব্যবহার। অপচয় আর হরিলুট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ-জ্বালানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ