মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ গতকাল বলেছেন যে, রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৬টি ইউক্রেনীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে এবং ১৮টি হিমারস এবং ওলখা মিসাইল গত দিনে আটকে দিয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনকে একটি দুর্নীতির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করছে যেখানে কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহের জন্য বরাদ্দ করা বিপুল তহবিল পশ্চিমা কোম্পানিগুলির মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।
ইউক্রেনের ড্রোন ও মিসাইল প্রতিহত করার বিষয়ে রাশিয়ার মুখপাত্র জানান, ‘রাশিয়ার এয়ার ডিফেন্স গত দিনে খারকভ অঞ্চলের ইজিয়াম, ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের স্টারমলিনভকা, কিরিলোভকা, সøাভনয়ে এবং মেকেয়েভকা, সেইসাথে জাপোরোজি অঞ্চলের সøাদকায়া বাল্কা এলাকায় ছয়টি ইউক্রেনীয় মানববিহীন আকাশযানকে গুলি করে ভূপাতিত করে। তিনি বলেন, ‘উপরন্তু, মার্কিন নির্মিত ১৮টি হিমারস এবং ওলখা মিসাইল নোভায়া কাখোভকা, খেরসন অঞ্চলের গোলায়া প্রিস্তান এবং কাখোভস্কায়া এইচপিপি এলাকায় মধ্য আকাশে ধ্বংস করা হয়েছিল।’ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনের ২৯৩টি বিমান এবং ১৫২টি হেলিকপ্টার, ১,৯১৬টি মনুষ্যবিহীন আকাশযান, ৩৭৪টি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ৪,৮৭০টি ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সাঁজোয়া যুদ্ধের যান, ৮২৭টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, ৩,৩৭১টি ফিল্ড আর্টিলারি গান ও মর্টার এবং ৫,৪১৭টি বিশেষ সামরিক যান ধ্বংস করেছে।
কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ করে মুনাফা লুটছে পশ্চিমারা : বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনকে একটি দুর্নীতির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করছে যেখানে কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহের জন্য বরাদ্দ করা বিপুল তহবিল পশ্চিমা কোম্পানিগুলির মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।
‘এটি পশ্চিমা তথাকথিত গণতন্ত্রের বাজেট থেকে বিপুল তহবিল বরাদ্দ এবং তাদের কোম্পানির মধ্যে ভাগ করার জন্য একটি বৈশ্বিক দুর্নীতি প্রকল্পের অংশ,’ জাখারোভা একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন। তার মতে এই তহবিলের মধ্যে কিছু ইউক্রেনে পাঠানো হয়, এবং কিছু পশ্চিমা ব্যাঙ্কে ফিরে যাওয়ার আগে কিয়েভ শাসনের মাধ্যমে বৈধ করা হয়। কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা এটি অনেকবার অন্যান্য দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে দেখেছি। এখন এই স্কিম ইউক্রেনে প্রয়োগ করা হচ্ছে।’
জাখারোভা জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখটের কথা উল্লেখ করেছেন যিনি বলেছিলেন যে, জার্মানি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের সীমাতে পৌঁছেছে। ‘কিন্তু মানব সম্পদ সীমায় পৌঁছেনি, কারণ তারা জার্মান নয়, ইউক্রেনীয়,’ জাখারোভা বলেছেন, ‘তারা চিন্তা করে না সেখানে কত লোক মারা যাবে।’ মুখপাত্রের মতে, পশ্চিমারা তাদের নিজেদের জন্য কতগুলি অস্ত্র রেখে গেছে এবং সম্ভবত এটির জন্য কত টাকা ব্যয় করা হবে তা নিয়েই চিন্তা করে। কিন্তু সেখানকার মানুষদের নিয়ে তারা কখনো চিন্তা করে না।
সাধারণ নাগরিকদের যুদ্ধে যেতে বাধ্য করছে ইউক্রেনীয় সেনারা : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের কীভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে তা বলা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন বন্দী ইউক্রেনীয় সেনাকর্মী স্বীকার করছেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে য্দ্ধু করার জন্য ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকেদের সেনাবাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হচ্ছে। তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে তাকে ইউক্রেনীয় অফিসারদের পরিচালিত একটি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল, যেখানে ন্যাটোর সেনারা তাদের প্রশিক্ষকণ দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল।
‘চের্নিগভ অঞ্চলের গনচারোভস্ক শহরে একটি প্রশিক্ষণের জায়গা রয়েছে। তারা সেখানে আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল কিভাবে আক্রমণের মিশন সঠিকভাবে চালাতে হয়,’ ওই বন্দী সেনা জানিয়েছেন, যিনি তার অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন এবং সাক্ষী হিসাবে জবানবন্দী দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইউক্রেনীয় অফিসাররা আমাদেরকে নিয়োগ করেছিল যারা ন্যাটো সৈন্যদের সাথে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। আমি জানি যে, সমস্ত লোককে সেখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল তাদের বেশিরভাগই শ্রমিক, পাশাপাশি কিছু ভাড়াটে যোদ্ধাও ছিল।’ তিনি আরও বলেন, কমান্ডাররা তাদের প্রতিশ্রুতি মতো সেনা পাঠাননি বা অস্ত্র সরবরাহ করেননি। তারা প্রায় ২০০ জনের মতো ছিল বলে তিনি জানান, তবে তাদের মধ্যে কতজন বেঁচে আছে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
পশ্চিমাদের ১১ হাজার নিষেধাজ্ঞাকে পাত্তাই দিচ্ছে না রাশিয়ানরা : ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থায় রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ শুক্রবার বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার উপর প্রায় ১১ হাজার বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে রাশিয়ান নাগরিকদের উপর এসব নিষেধাজ্ঞার তেমন কোন প্রভাব পড়ছে না উল্লেখ করে কূটনীতিক টুইটারে লিখেছেন, ‘পশ্চিম রাশিয়ার বিরুদ্ধে রেকর্ড-ব্রেকিং ১১ হাজার নিষেধাজ্ঞা প্রবর্তন করেছে। তবে রাশিয়ান নাগরিকরা এখন পর্যন্ত তার কোন প্রভাব অনুভব করেনি।’ ‘ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পশ্চিমা দেশগুলো অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রবর্তিত নিষেধাজ্ঞার পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে,’ তিনি যোগ করেছেন।
ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ শান্তির বিরুদ্ধে যায় : কিয়েভ সরকারকে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ শান্তি অর্জনে সাহায্য করবে না এবং ইউক্রেন এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। চীনের ডেপুটি জাতিসংঘের দূত গেং শুয়াং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এ কথা বলেছেন। ‘আজ অবধি, বিভিন্ন জায়গায় ভয়ঙ্কর লড়াই চলছে, এবং আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবাহিত হচ্ছে, যা একটি দীর্ঘায়িত এবং প্রসারিত সংঘাতের উদ্বেগজনক আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে,’ তিনি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনের সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে, চীন ধারাবাহিকভাবে জোর দিয়ে আসছে যে অস্ত্র সরবরাহ শান্তি আনবে না এবং আগুনে জ্বালানি যোগ করা সমস্যাটিকে জটিল করে তুলবে।’ কূটনীতিকের মতে, গত মাসের ঘটনাগুলি ‘এটি সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করেছে।’ গেং শুয়াং যোগ করেছেন, ‘সমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছে যে, বিপুল সংখ্যক অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ভুল হাতে পড়ে, সীমাহীন সমস্যা সৃষ্টি করে এবং ইউক্রেন এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে।’
তেলের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র কিনতে পারে রাশিয়া : রাশিয়া সম্ভাব্যভাবে তেলের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র কিনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো ইউক্রেনে অভিযানের কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া যুদ্ধাস্ত্রের মজুতগুলো পুনরুদ্ধার করার ক্রেমলিনের ক্ষমতাকে সীমিত করে।
নিউইয়র্ক টাইমস দ্বারা প্রথম প্রকাশিত গোপনীয় গোয়েন্দা তথ্য দেখিয়েছে যে, রাশিয়া গোপনে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে লাখ লাখ আর্টিলারি শেল এবং রকেট কিনতে চাইছে। রাশিয়া প্রতিবেদনটিকে ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করেছে, তবে পেন্টাগন দাবি করেছে যে, মস্কো আলোচনার জন্য উত্তর কোরিয়ার সাথে ‘সংযোগ করেছে’। তাবে দুই দেশের মধ্যে এখনও কোন লেনদেন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তারা কিছু বলতে অস্বীকার করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে রাশিয়া রুবলে অর্থপ্রদান নাও করতে পারে, যখন নিষেধাজ্ঞাগুলি মস্কোকে ডলার বা ইউরোর মতো অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত মুদ্রা ব্যবহার করতে বাধা দিয়েছে। পরিবর্তে, উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া তেলের মাধ্যমে মূল্য প্রদান করতে পারে। এ দাবি করেছেন আরএন্ডডি কর্পোরেশন প্রতিরক্ষা গবেষক ব্রুস বেনেট। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, রাশিয়া আগে উত্তর কোরিয়াকে তেল সরবরাহ করেছে।
উত্তর কোরিয়ার বিশেষজ্ঞ রামন পাচেকো পার্দো, যিনি কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক, ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রির গুজব বেশ কিছুদিন ধরেই ছড়ানো হচ্ছে, জল্পনা যে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসে মূল্য দিতে পারে। উভয় দেশই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত শাসন ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে। পিয়ংইয়ংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা এড়াতে উত্তর কোরিয়ায় রাশিয়ার তেলের আগে চালান সমুদ্রে হয়েছিল বলে জানা গেছে। গত মাসে, মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন যে, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইরানের তৈরি যুদ্ধের ড্রোন কিনতে শুরু করেছে।
জাপোরোজিয়া প্ল্যান্ট দখল করাই ছিল ইউক্রেনীয় সেনাদের লক্ষ্য : জাপোরোজিয়া অঞ্চলের এনারগোদার এলাকায় ইউক্রেনীয় ল্যান্ডিং অপারেশনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ছিল জাপোরোজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (এনপিপি) দখল করা। গতকাল এনারগোদারের সিভিল সোসাইটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ভøাদিমির রোগভ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সাথে একসাথে আছি।’ ‘ইউক্রেনীয় সেনারা একটি দুর্বল এলাকা খুঁজছে যেখান থেকে তারা আমাদের এলাকায় আক্রমণ শুরু করতে পারবে। তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টার জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করতে সৈন্য অবতরণ করতে পারে,’ তিনি বলেছিলেন। এনারগোদারেই জাপোরোজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এটি ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা সম্প্রতি ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর গোলাগুলির লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। ড্রোন, ভারী কামান এবং মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আঘাত হানতে ব্যবহৃত হয়। সূত্র : তাস, বিবিসি নিউজ, বিজনেস ইনসাইডার, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।