পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি ‘রাজনৈতিক দল’ কিনা, এ নিয়ে অতীতেও আলোচনা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, একটি প্রকৃত ও গণতন্ত্রমনস্ক রাজনৈতিক দলের যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, তা দলটির কর্মকাÐে প্রতিফলিত হয় না। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণা বদ্ধমূল, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতালোভী হয়ে বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করেছিলেন এবং তার গড়া জাতীয় পার্টির মধ্যেও সেই ক্ষমতালোভী মনোভাব রয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে দলটির নেতৃবৃন্দ কোনো রাখঢাক করেন না। তাদের প্রায়ই বলতে শোনা যায়, তারা একক দল হিসেবে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও ক্ষমতায় যারা থাকবে, তাদের অংশীদার হয়ে থাকাই তাদের নীতি। তাদের এ কথা এবং মনোভাব থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দলটি হচ্ছে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী। ক্ষমতায় কে থাকল বা না থাকল, সেটা বড় কথা নয়, ক্ষমতার অংশীদার হওয়াই দলটির নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত প্রায় দেড় দশক ধরে দলটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অংশীদার হয়ে আছে। দলটিকে আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অংশীদার হয়ে দলটি দুই ধরনের চরিত্র ধারণ করেছে। এক. আওয়ামী লীগের ইচ্ছায় সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধীদলে বসেছে। দুই. বিরোধীদলে থেকে সরকারের মন্ত্রিত্বের ভাগ নিয়েছে। দলটির দ্বিতীয় চরিত্রটি বেশি পছন্দ। তবে আওয়ামী লীগ তৃতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়ে দলটিকে আর মন্ত্রিত্ব দেয়নি। এতে দলটি যারপরনাই নাখোশ হয়েছে। সংসদে প্রধান বিরোধীদল হয়েও খুশি নয়। কারণ, সে ক্ষমতার অংশীদার হতে পারেনি। বলা হয়ে থাকে, সংসদে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য এবার তাকে আর মন্ত্রিত্বের ভাগ দেয়া হয়নি। ফলে তার কপালে জুটেছে ‘গৃহপালিত বিরোধীদলে’র বদনাম। মন্ত্রিত্ব না পেয়ে গৃহপালিত বিরোধীদলের অপবাদ নেয়াটা দলটির মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। ফলে মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে। দুয়েকটা কড়া কথা বলে। এর কারণ, আওয়ামী লীগ একটানা তৃতীয় মেয়াদের শেষভাগে এসেও দলটিকে কোনো মন্ত্রিত্ব দেয়নি।
দুই.
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সেনা ছাউনিতে জন্ম নেয়া দল হিসেবে বরাবরই সমালোচনা ও তির্যক মন্তব্য করে আসছে। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, তার ঘরানার বুদ্ধিজীবীরাও এ কথা বলে আসছে। বিএনপিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা স্বীকার করতে চায় না। অথচ জাতীয় পার্টির জন্মও যে সেনা ছাউনিতে, এ কথা ঘুর্ণাক্ষরে বলে না। এর কারণ হচ্ছে, এরশাদ যখন ক্ষমতা দখল করেছিল, তখন দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি।’ এরপর এরশাদ গণতান্ত্রিক হওয়ার জন্য যেসব পাতানো নির্বাচন করেছে, তার সবকটিতে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছিল। বিএনপি একটিতেও অংশগ্রহণ করেনি। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে। মাঝে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শরীক হলেও পরবর্তীতে আবার সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। সেই সুসম্পর্ক অদ্যাবধি বজায় রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ যাকে পছন্দ করে, সে যতই খারাপ হোক, তার কোনো দোষ থাকে না। অন্যদিকে, বিএনপিকে সেনা ছাউনির দল বলে দিন-রাত একাকার করে ফেলছে। আওয়ামী লীগের কথা অনুযায়ী, বিএনপিকে সেনা ছাউনিতে জন্ম নেয়া দল হিসেবে ধরে নিলেও দলটি যে ক্ষমতায় থেকে এবং বিরোধীদলে থেকে দেশের বিপুল মানুষের সমর্থন পেয়ে একটি গণতন্ত্রমনস্ক দল হয়ে উঠেছে, এ কথাটি স্বীকার করতে চায় না। অবশ্য আওয়ামী লীগ স্বীকার না করলেও বিএনপি ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তিন তিনবার ক্ষমতায় আসে। জাতীয় পার্টির মতো ক্ষমতার অংশীদার হয়ে থাকার নীতি নিয়ে চললে কি আজ দলটির ব্যপ্তি ও বিস্তৃতি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যেত? দলটি কি জাতীয় পার্টির মতো আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে? হয়নি। এর কারণ, আওয়ামী লীগের কথা মতো দলটির জন্ম সেনা ছাউনিতে হলেও, সে তার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকাÐ দিয়ে নিজেকে বিপুল জনসমর্থিত একটি দলে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। ধরে নেয়া যাক, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি সেনা ছাউনিতে জন্ম নেয়া দুটি দল। তবে এ দুটি দলের মধ্যে বেসিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরাসরি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছেন, এমন কথা বলা যায় না। তার ক্ষমতায় আসার আগে অনেক ঘটনা ঘটেছে। স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐ, অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান, ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতা বিপ্লবের মতো ধারাবাহিক ঘটনা ঘটেছে। এ সময় জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টে গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন। অভ্যুত্থানকারীরাই তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। অর্থাৎ ঘটনার পরম্পরার মধ্য দিয়ে তাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। নিজ থেকে বন্দুক ঠেকিয়ে ক্ষমতায় আসেননি (যদিও আওয়ামী লীগ বলে থাকে, তিনিও বন্দুক ঠেকিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন)। এসব ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগসহ তার সমর্থকরা দ্বিমত পোষণ করতেই পারে। এখন তো তারা শুধু দ্বিমত পোষণই নয়, জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, পাকিস্তানের চর, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না ইত্যাদি নানা অপবাদ দিচ্ছে। তবে ১৫ আগস্টের হৃদয়বিদারক ঘটনা এবং সে সময় কারা ক্ষমতা দখল করেছিল এবং অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের সাথে কারা জড়িত ছিলÑ এসব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগকে খুব একটা কথা বলতে শোনা যায় না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করেছেন বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছেন, এমন কথা সচেতন পর্যবেক্ষকদের বলতে শোনা যায় না। বরং তিনি ক্ষমতায় এসে বাকশালের মতো একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেছিলেন। সংবাদপত্রেরও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ কথা সত্য, তিনি কোনো রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তাঁর রাজনীতিক হওয়া কিংবা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকার কথাও নয়। তিনি ছিলেন, ফৌজি। রাজনীতির বাইরে একেবারে ভিন্ন একটি জগতের মানুষ। রাজনীতিতে ছিলেন নবীন। তবে ঘটনা পরম্পরায় ক্ষমতায় এসেই তিনি যে গণতান্ত্রিক মনোভাব দেখিয়েছেন এবং কীভাবে রাজনীতিকে রাজনীতির ধারায় চলতে দিতে হয়, সে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর যদি এই অভিলাষ থাকত, সে সময়ে বিদ্যমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কিংবা সংবাদপত্রের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চালাবেন, তাহলে তিনি চালাতে পারতেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে না-ও দিতে পারতেন। তিনি সে পথে হাঁটেননি। বরং গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথটিই বেছে নিয়েছিলেন। নিজেও রাজনীতির পথ ধরেছেন। সে সময় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজনীতি করেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন নির্বাচিত রাজনৈতিক দল বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। বন্দুকের নল ঠেকিয়ে তিনি বিএনপিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন এবং ৯ বছর স্বৈরশাসন চালিয়েছেন। সে সময় দমন-পীড়নের মধ্যেও আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে আন্দোলন যেমন করেছে, তেমনি বিএনপি ছাড়া অন্যান্য দলও তার পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। আজ আওয়ামী লীগ ও তার জোটের দলগুলো যে বিএনপিকে সেনা ছাউনির দল বলে, তার সাথে আরেক সেনা ছাউনির দল জাতীয় পার্টির বেসিক পার্থক্য এখানেই।
তিন.
আওয়ামী লীগ ও তার জোটের দলগুলো বিএনপিকে সেনা ছাউনির দল বললেও এ দলের জনসম্পৃক্ততা এবং বিপুল জনসমর্থন কি তারা অস্বীকার করতে পারবে? অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির জনসমর্থন ও জনসম্পৃক্ততা কি বিএনপির সমান বা কাছাকাছি যেতে পেরেছে? পারেনি। বরং দলটি একটি আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে প্রাদেশিক সরকার পদ্ধতি দাবি করেছিলেন, তা তিনি এমনি এমনি করেননি। তিনিও জানতেন, জাতীয় পার্টি একটি আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ ছাড়া দেশের অন্য অঞ্চলে দলটির জনভিত্তি নেই বললেই চলে। এরশাদের প্রাদেশিক সরকারের দাবির পেছনে এ বিষয়টিই কাজ করেছে। তিনি জানতেন, প্রাদেশিক সরকার পদ্ধতি হলে উত্তরবঙ্গে তার দল বেশি আসন পেয়ে সেখানে প্রাদেশিক সরকার গঠন করতে পারবে এবং তিনি অন্তত একটি প্রাদেশিক সরকারের প্রধান হতে পারবেন। তার এ মনোভাবের মধ্যে, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা হারানোর যে বেদনা তা কিছুটা লাঘবের আকাক্সক্ষা কাজ করেছিল। ৯০-এর গণআন্দোলনের মুখে তার দলের ক্ষমতা হারানোর বেদনা প্রাদেশিক সরকারের প্রধান হয়ে তা ভুলতে চেয়েছিলেন। তার সে আশা পূরণ হয়নি। এখন এ নীতি অবলম্বন করে চলেছে, ক্ষমতায় যেতে না পারলেও যেকোনো উপায়ে ক্ষমতার কাছাকাছি বা অংশীদার হওয়া। এ মনোভাব আঁকড়ে ধরার কারণে দলটিকে গণমুখী ও জনসম্পৃক্ত হওয়ার কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি, এখনও হচ্ছে না। কেবল কোন দল ক্ষমতায় যেতে পারে, এ হিসাব কষার মধ্যে ব্যস্ত এবং তার সাথে অংশীদার হওয়ার মধ্যে বেশি মনোযোগী। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তার অংশীদার হতে পারেনি পারস্পরিক বৈরী মনোভাবের কারণে। ফলে ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সাথেই দলটি গাঁটছড়া বাঁধে। এক্ষেত্রে তাদের সেই ‘নট আনহ্যাপি’র ঐতিহাসিক সম্পর্ক কাজ করেছে। বর্তমান সরকারের শাসন ব্যবস্থাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ‘কর্তৃত্ববাদী’ বা ‘ত্রæটিপূর্ণ’ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করলেও এর সাথে জাতীয় পার্টির শাসন ব্যবস্থার মিল রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের সাথে তার সখ্য হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বিগত দেড় দশক ধরে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এই সমর্থন দিতে গিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে কিংবা সংসদের প্রধান বিরোধীদল হিসেবে সে জনগণের সমস্যা নিয়ে কার্যকর কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। কেবল সংসদে লিপ সার্ভিস দিয়েছে। জনসম্পৃক্ত হয়ে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কিংবা জনগণের সমস্যা নিয়ে মাঠে কর্মসূচি পালন করার মতো কোনো নজির স্থাপন করতে পারেনি। সংসদে যে দু-চার কথা বলে, তা যে সরকারের অনুমোদিত, তা জনগণ ভালো করেই জানে। সংসদের প্রধান বিরোধীদল হয়েও সাধারণ মানুষের চলমান দুর্ভোগ এবং নিদারুণ দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে সে কোনো কথা বলছে না, মাঠের রাজনীতিও করছে না। দেশের জনগণের দুর্ভাগ্য যে, সংসদে এক অকার্যকর ও ধামাধরা দল প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসে আছে। এখন আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তার নীতি অনুযায়ী, ক্ষমতার অংশীদার হয়ে থাকার নিশ্চয়তার পথ খুঁজছে, যেখানে শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া জনগণের স্বার্থ বলে কিছু নেই। ইতোমধ্যে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও সংসদের বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। জিএম কাদের সরকারের সঙ্গে থাকতে চায় না, রওশন এরশাদ সরকারের সঙ্গে থেকে ক্ষমতার অংশীদার হয়ে থাকতে চান বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ দলটির মধ্যে ক্ষমতার দ্ব›দ্ব নিয়েই তোলপাড় চলছে। দেশের কোটি কোটি মানুষ যে দরিদ্র হয়ে গেছে, বেকার হয়ে যাচ্ছে, মানুষের আয় কমে গেছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের সংকট ও দামবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্ব গতিতে জীবনযাপনে সীমাহীন টানাপড়েনে আছে, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের একশ্রেণীর নেতা-কর্মী অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে, এসব নিয়ে দলটির কোনো বিকার নেই। জনসম্পৃক্ত এসব বিষয় নিয়ে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। দলটির নেতারা ব্যস্ত কীভাবে ক্ষমতার অংশীদার হয়ে থাকা যায়। কীভাবে ক্ষমতাসীন দলের ওপর ভর করে পরগাছার মতো থাকা যায়।
চার.
জনসম্পৃক্ত দল না হলেও জাতীয় পার্টি যে নিজেকে অন্যদলের ক্ষমতায় যাওয়া এবং থাকার ‘ট্রামকার্ড’-এ পরিণত করতে পেরেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ক্ষমতাসীন দলের সাথে যদি দলটি না থাকে, তার অধীনে নির্বাচন না করে কিংবা সংসদ থেকে বের হয়ে আসে, তাহলে সরকারের টিকে থাকা একপ্রকার অসম্ভব। থাকলেও তা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। ফলে ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় থাকা-যাওয়া এবং নির্বাচনের নামে প্রহসন করার জন্য জাতীয় পার্টিকে নিজেদের সেরা অস্ত্র হিসেবেই ধরে রেখেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছরের কম সময় বাকি থাকায় জাতীয় পার্টি এখন যে সরকারের বিরুদ্ধে টুকটাক কিছু কথা বলছে ও নড়াচড়া করছে, তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যাতে তাকে সাথে রাখে এবং তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে ক্ষমতার ভাগিদার করে। অর্থাৎ জাতীয় পার্টির রাজনীতি কোনোভাবেই জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। জনগণ তার কাছে গুরুত্বহীন। হ্যাঁ, তার কাছে গুরুত্ব আছে আঞ্চলভিত্তিক জনগণের। যেমন তার সংসদে আসার অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে রংপুর বিভাগ। এ অঞ্চলের আসন দিয়েই সে সংসদে আসে। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রহসন ও আসন ভাগাভাগির নির্বাচনে যদি অংশ না নেয়, তাহলে ঐ অঞ্চলেও দলটির ফলাফল শোচনীয় হবে। এর কারণ, ঐ অঞ্চলের মানুষও এখন দলটি ক্ষমতাসীন দলের ধামাধরা হওয়া নিয়ে বিরক্ত। তারা চায়, জাতীয় পার্টি অন্যের স্কন্ধে ভর না করে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে পাস করুক। দেশব্যাপী জনসম্পৃক্ত ও সমর্থন বাড়িয়ে একটি প্রকৃত গণতন্ত্রমনস্ক রাজনৈতিক দলে পরিণত হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।