Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপরিকল্পিত সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকার যানজট ও জনদুর্ভোগ নিরসনে বছরের পর বছর ধরে সরকার এবং সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে নানাবিধ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। প্রতিবছরই ঢাকার যানজট এবং রাস্তায় গাড়ির গড় গতিবেগ কমছে। এখন রাজধানীতে যানবাহন চলাচলের গতি মানুষের পায়ে হাঁটার গতি ঘন্টায় ৭ কিলোমিটারের কাছাকাছি চলে এসেছে। ৫মিনিটের রাস্তা পার হতে ৪০ মিনিট থেকে এক-দেড়ঘন্টাও লেগে যায়। এ জন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং সংস্কার-উন্নয়নের নামে বিভিন্ন সংস্থার যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে এবং ব্যস্ততম সড়কে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় খানাখন্দক, ময়লা আবর্জনার স্তুপ ও অবৈধ দখলদারিত্ব রাস্তায় যানবাহন চলাচল সঙ্কুচিত ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে সরকারের নির্দেশিত নীতিমালা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো তোয়াক্কা না করায় সড়কে ভোগান্তি এবং ঝুঁকি আগের চেয়ে বেড়েছে।

রাজধানীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, দিনে খনন কাজ বন্ধ রাখাসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে জরিমানার বিধান রয়েছে। সরকার বা নগর কর্তৃপক্ষ একটি বিধান প্রনয়ন করেই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ বা তদারকি না থাকায় সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই নীতিমালা মেনে সময়মত কাজ শেষ করার তাগিদ অনুভব করছে না। নীতিমালায় বার্ষার আগেই রাস্তার প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুম মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে রাস্তার উন্নয়ন ও সংস্কার বিশেষ জনগুরুত্বপূর্ণ ও চলমান প্রক্রিয়া বিবেচনায় বর্ষার আগে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে মূল ক্ষতিপুরণসহ অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ফি জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। সেই সাথে রাস্তা খননের আবর্জনা ও মাটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাসরণ করতে ব্যর্থ হলে জামানতের ফি দ্বিগুণ করার বাধ্যবাধকতা নীতিমালায় থাকলেও তা মান হচ্ছে না। এখন নগরজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এবারের বষার্য় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। গত দুই দিনে কিছুটা হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার অনেক রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পথচারি ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মাঝামাঝি খুঁড়ে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়েছে। এমনিতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণাধীন থাকায় এর নিচের সড়ক সরু হয়ে যানবাহন চলাচল দুরুহ হয়ে পড়েছে, তার ওপর নির্বিচারে খোঁড়াখুড়ির ফলে সড়ক আরও সরু হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে এসব গর্ত বৃষ্টির পানিতে ভর্তি হয়ে যানবাহন ও পথচারিদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ও সিলেটের সাথে মূল গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের প্রবেশপথের দুইপাসে খানাখন্দের কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মিত হলেও তার নিচের সড়ক নির্বিঘœ করার কোনো উদ্যোগ নেই। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন জুড়ে মেট্রোরেল, বিআরটি, ইউলুপ ইত্যাদি প্রকল্পও কোনো সুফল দিচ্ছে না। তিন-চার বছরে মেগা প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ১০ বছরেও তা শেষ হয়নি। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল সহযোগিতায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন থাকলেও যানবাহন চলাচল সহজ রাখার কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। সম্প্রতি বিআরটি প্রকল্পের ¯ø্যাব একটি গাড়ির উপর পড়ে ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি ঢাকার জনদুর্ভোগের প্রধান উৎস হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীন ও যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ঢাকা ওয়াসা, তিতাস, টিঅ্যান্ডটি এবং বিদ্যুত বিভাগকে বছর জুড়েই রাস্তা খুঁড়ে সংস্কার ও নতুন লাইন সংযোগ দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় বছরে একাধিকবার সড়ক খনন করতে দেখা যায়। সড়ক খুঁড়ে তা সেভাবেই ফেলে রাখা হয়। এক সংস্থা খোঁড়ার পর আরেক সংস্থা খোঁড়া শুরু করে। এতে বৃষ্টির পানি জমে খননের জায়গা যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। প্রতিনিয়তই পথচারি ও যানবাহন কোনো না কোনো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি করপোরেশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশন থেকে শুরু করে সড়ক গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সংস্থা দুইটির ব্যর্থতা অমার্জনীয়। গত দুই দিনের সামান্য বৃষ্টিতে কি দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে, তা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকেই বোঝা যায়। রাজধানীতে যে অপরিকল্পিত সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, তা বন্ধ করা জরুরি। এক্ষেত্রে প্রণীত নীতিমালা মেনে চলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে হবে। যখন খুশি তখন সড়ক খোঁড়ার অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

 

 



 

Show all comments
  • jack ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১:২৯ পিএম says : 0
    যতদিন দেশদ্রোহী সরকার এদেশ থেকে বিদায় নেওয়া হবে এবং কোরআনের আইন দিয়ে দেশ চলবে ততদিন আমাদের কে জঘন্যতম সব বিপদের মধ্যে পড়তে হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন