Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইএনএস বিক্রান্ত: কতটা শক্তিশালী ভারতের নতুন এ রণতরী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:০০ পিএম

বহু প্রতীক্ষার পর সমুদ্রের পানিতে নামল আইএনএস বিক্রান্ত। এই যুদ্ধজাহাজ নিয়ে ভারত অনেক দিন ধরেই স্বপ্নের বীজ বুনছিল। তবে এ বার স্বপ্ন সত্যি করে শুক্রবার সকালে কেরলের কোচিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে নৌসেনার হাতে দেয়া হল আইএনএস বিক্রান্ত-এর দায়িত্ব। উদ্বোধন করা হল ভারতের নৌবাহিনীর নতুন পতাকারও।

ভারতের জন্য আইএনএস বিক্রান্তের জলাবতরণ এক গর্বের বিষয়। কারণ এটিই ভারতে তৈরি প্রথম বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ। কিন্তু কেন এই যুদ্ধজাহাজকে নিয়ে এত উত্তেজনা তৈরি হয়েছে দেশবাসীর মনে? কী কী বিশেষত্ব রয়েছে এই যুদ্ধজাহাজের? সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের হাতে তৈরি হয়েছে বিক্রান্ত। এর আগে বিদেশ থেকে কিনে আনা রণতরীই শত্রুপক্ষের ঝড়ঝাপটা সামলাত। এই প্রথম সম্পূর্ণ ভাবে দেশে তৈরি কোনও রণতরী নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াতে ঢুকল।

আইএনএস বিক্রান্তের দৈর্ঘ্য ২৬২ মিটার, অর্থাৎ ৮০ তলা একটি বাড়িকে যদি আড়াআড়ি শুইয়ে রাখা হয়, তা হলে প্রায় তার সমান। এই জাহাজ ৬২ মিটার চওড়া এবং ৫৯ মিটার উঁচু। আইএনএস বিক্রান্ত-এ ১,৭০০-রও বেশি সেনা এবং কর্মকর্তাদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৪টি ডেক রয়েছে এই জাহাজের। আর রয়েছে ২৩০০টি কামরা। মহিলা কর্মকর্তাদেরও আলাদা করে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এই বিশালাকায় রণতরীতে।

উচ্চগতির জন্যও আলাদা করে নজর কাড়ছে বিক্রান্ত। এই যুদ্ধজাহাজের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২৮ নটিক্যাল মাইল (৫২ কিলোমিটার)। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজের গতিবেগের থেকে ঘণ্টায় ঠিক ৭ নটিক্যাল মাইল কম। বার বার জ্বালানি ভরার দরকারও নেই বিক্রান্তে। এক বার জ্বালানি ভরা হলেই তার সাহায্যে সাড়ে সাত হাজার নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করতে পারে এই যুদ্ধজাহাজ। অর্থাৎ এক বারের জ্বালানিতে ভারতের নৌসীমা ধরে দু’বার অনায়াসে যাওয়া-আসা করা যাবে।

উন্নত মানের ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিক্রান্তকে। এই যুদ্ধজাহাজ তৈরিতে যে ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে অন্তত তিনটি আইফেল টাওয়ার তৈরি করে ফেলা যাবে। জাহাজের উপরের ভাগে বিমান উড়ানের জন্য যে রানওয়ে আছে, তার দৈর্ঘ্যও ৯০ মিটারের বেশি। এর ফলে তেজসের মতো আধুনিক যুদ্ধবিমানও অনায়াসে ওঠানামা করতে পারবে এই বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ থেকে। ওঠানামা করতে পারবে মিগ-২৯কে-র মতো যুদ্ধবিমানও।

মোট ৩০টি যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার একসঙ্গে ওঠানামা করতে পারবে এই যুদ্ধজাহাজ থেকে। ৪৫ হাজার টনের এই যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে মোট খরচ হয়েছে ২০ হাজার কোটি রুপি। ২০১৩ সাল থেকে বিক্রান্ত তৈরির কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২০২১ সালের ৪ অগস্ট এই যুদ্ধজাহাজ প্রথম পানিতে নামে। এর পর আরও তিন বার বার জলে নামিয়ে পরীক্ষা চলে এই জাহাজের উপরে। সেই সব পরীক্ষাতেই সফল ভাবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছিল বিক্রান্ত।

বিক্রান্ত হাতে এলে এই প্রথম দু’টি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের নিয়ন্ত্রণ পাবে ভারতীয় নৌসেনা। অন্যটি হল, ২০১৪ রাশিয়া থেকে কেনা আইএনএস বিক্রমাদিত্য। সুতরাং বিক্রান্ত হাতে আসায় আরও শক্তিশালী হল ভারতীয় নৌবহর। গত কয়েক বছর ধরেই চীনের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। লাদাখেও বার বার সঙ্ঘাতে জড়িয়েছে ভারত এবং চীনের সেনা। প্রতিরক্ষা মহলের দাবি, সমুদ্রপথে যদি চীন কখনও ভারতকে আক্রমণের চেষ্টা করে তবে তা ঠেকাতে ভারতের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হতে পারে বিক্রান্ত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ হারকিউলিস, পঞ্চাশের দশকে কিনেছিল ভারত। এটিই ছিল ভারতের হাতে আসা প্রথম বিমানবাহী রণতরী। তখন এর নাম বদলে রাখা হয় আইএনএস বিক্রান্ত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে ভূমিকা ছিল ভারতীয় নৌসেনার সেই বিক্রান্তের। প্রায় চার দশক কাজ করার পরে নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্বে বিক্রান্ত অবসর নেয়। ভেঙে ফেলা হয় জাহাজটি।

সেই পুরনো বিক্রান্তের স্মৃতিতেই প্রথম ‘ভারতীয়’ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজটির নামও দেওয়া হয়েছে 'বিক্রান্ত'। পুরনো বিক্রান্ত-এর লোহাও নতুন বিক্রান্তে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এ যুদ্ধজাহাজ নিয়ে আশঙ্কাও থাকছে। ভারতের তৈরি যুদ্ধ-বিমান কোন সাফল্যই দেখাতে পারেনি। ভারতে তৈরি অস্ত্রের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। নতুন এ রণতরী আসলেই কার্যকর হবে নাকি ফাঁকা বুলি হয়ে থাকবে সেটি সময়ই বলে দেবে। সূত্র: এপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রণতরী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ