শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
চাকুরী থেকে রিটায়ার্ড মানে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া। যদিও চাকুরী জীবনে বহুলোক ধুপধাপ করে পড়েই মরে গেছেন।রিটার্য়াড হয়েছেন সাত বছর।মফিজ সাহেব মরেননি।বয়সের সাথে পাল্লাদিয়ে গরম বাড়ছে।গরমের সময় তিনি সারাদিন এ.সি রুমের মধ্যে ঘুপ মেরে পড়ে থাকেন।সারাদিনের ভেতর একমাত্র সকাল বেলা ছাড়া ঘরের বাইরে বের হননা।গরমের সময় একমাত্র সকালটাই সুন্দর।হালকা স্নিগ্ধ বাতাস থাকে।ঢাকা শহরে এই স্নিগ্ধতার বড় অভাব!পরিবেশ ও তার ওপর বিচরনকারীদের ভেতর থেকে দিন দিন এটা হারিয়ে যাচ্ছে।সকালের সুন্দর পরিবেশে মফিজ সাহেবের সাথে চা খেতে বসেছেন আবুল মিয়া।বিকট আওয়াজে ফগার মেশিন নিয়ে চলা ব্যক্তিকে দেখে মফিজ সাহেব বলে ওঠেন,ফগার নিয়ে হগার চলে।
আবুল মিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ভাই হগার চলে মানে!
- হগা বোঝেন?
মফিজ সাহেবের প্রশ্নে আবুল মিয়ার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়। ভাবগাম্ভীর্যের সাথে বলে ওঠেন, ছোট বেলা বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড় করিয়ে স্যারেরা বহুবার বলেছেন, কিরে হগা।
- এইতো বুঝেছেন। ফগার নিয়ে যে যাচ্ছে সেও আপনার মতো হগা। এই হগার ফগার মেশিনে মশা গুলো ড্যান্স করতে করতে উড়ে যায়। মশার ভাবখানা দেখেছেন?
- কী ভাব?
- মশার শুটিং স্টাইল। হগাকে যেন বলে, ফগার মেশিন দিয়ে ভালো করে ভিডিও কর। সিনেমা, নাটক, সিরিয়াল, টেলিফিল্ম বানা। দেখ না কি সুন্দর নাচ, গান! পারবি? দু’দিন আগে মফিজ সাহেবের প্রতিবেশী বন্ধু ঝিলটন বলে, ভাই প্রতিদিন ম্যাসেজ আসে এইটা একুশ জনকে সেন্ড করেন, এইটা পঞ্চাশ জনকে..... এইটা পাবেন। সেইটা পাবেন। কেউ আজ পর্যন্ত লিখল না, এই ম্যাসেজ সেন্ড করেন মশা থেকে মুক্তি পাবেন! বিলিভ মি, এমন ম্যাসেজ পেলে ম্যাসেজ না মোবাইল ই সেন্ড করে দিতাম।
আগে সিজনাল মশা থাকতো এখন বছর ব্যাপি মশা!পাতি মশার বদলে জাতি হাইব্রিড মশা! কিলবিল করে বেড়ায় শহর, নগর, গ্রাম।
মফিজ সাহেব ঘুমানোর আগে সারা মশারী তিনবার চেক করেন। কয়েল, এরোসল, মশামারা ইলেক্ট্রিক ব্যাট, মশা দূরীকরণ লোশান সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিছানায় যান। মশা মারার, তাড়ানোর এসব কেনার সময় দোকানদার কে বলে, ভাই আর কী ওয়ে আছে? দোকানদার বড় বড় চোখে তাকায়। আরও ওয়ে চান!
- হু। - আমার জানা নেই। তবে এক কাজ করতে পারেন, বিষ কিনে খেয়ে দেখতে পারেন। আপনার বিষাক্ত রক্ত পান করে যদি মরে।
- আমার কী হবে!
- আর যাই হোক মশা নিয়ে অন্তত আপনার দুশ্চিন্তা থাকবে না।
দুচার কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্চা হলেও না শুনিয়ে আপন মনে হাঁটতে হাঁটাতে বিড়বিড় করে বলেন, স্টুপিড,নির্বোধ, গাধা, মশা!
পৃথিবীতে অনেক গালি প্রচলিত থাকলেও এই মশা গালিটার প্রয়োগ এখনো হয়নি।নিজের মনেই ভাবেন কেন হয়নি! এখন থেকে তিনি শুরু করবেন।মশা, মশার বাচ্চা মশা।
রাত তিনটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে যায়।তীব্র চুলকানি।হাত মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে! আর কিভাবে প্রতিরোধ করবেন! দিশেহারা মফিজ সাহেব।পাশের রুম থেকে গীটারের সুর ভেসে আসে।মফিজ সাহেব বিরক্তি নিয়ে আস্তে করে উঠে যান।তার একমাত্র গুনধর ছেলে গভীর রাতে গিটার বাজাচ্ছে!অন্ধকারে মশা ঠেলে ছেলের রুমে প্রবেশ করেন।মশারির ভেতর শুয়ে শুয়ে শান্ত বেশ আয়েশী গলায় গাইছে, এই......... সুরেলা রাত, তোমাদের পিন পিন ঘিন ঘিন পিন পিন.........
-কিরে এতো রাতে হচ্ছে টা কী।
- সরি ড্যাডি। কনসার্ট হচ্ছে। চারিদিকে শুনছ লাখো কন্ঠের সুরেলা আওয়াজ। পিন পিন ঘিন ঘিন.....
মফিজ সাহেবের মেজাজ গরম হয়ে যায়। চিৎকার করে বলে ওঠেন, সার্টআপ। মশার বাচ্চা মশা।
শন্তর গিটার আবার বেজে ওঠে। সুর তোলে, তোমাদের পিনপিন, ঘিনঘিন,কনসার্ট,সার্টআপ ...........
মফিজ সাহেব চিৎকার করে স্ত্রীকে ডাকেন এই যে, ফরিদা বেগম এসো।কনসার্ট হচ্ছে কনসার্ট। তাড়াতাড়ি এসো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।