মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনের যুদ্ধে রসদ দিতে যেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ধরণের গোলাবারুদের মজুদ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। এবং পেন্টাগন সেই ঘাটতি পূরণ করতে ধীর গতিতে কাজ করছে। ফলে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি এ ঘাটতির কারণে বিপন্ন হতে পারে। এদিকে, ইরান তাদের শক্তিশালী ড্রোনের প্রথম চালান রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। এগুলো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এ পদক্ষেপে মস্কো এবং তেহরানের মধ্যে গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ছয় মাসে ইউক্রেনকে ১৬টি মার্কিন রকেট লঞ্চার, যা হিমারস নামে পরিচিত, হাজার হাজার বন্দুক, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। গোলাবারুদ সহ এর বেশিরভাগই সরাসরি ইউএস ইনভেন্টরি থেকে এসেছে, যা অপ্রত্যাশিত হুমকি মোকাবেলার উদ্দেশ্যে রাখা মজুদ হ্রাস করছে, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন। পেন্টাগনের পাঠানো সবচেয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্রগুলির মধ্যে একটি হল হাউইটজার, যাতে ১৫৫ মিমি গোলা ব্যবহার করা হয়। উচ্চ-বিস্ফোরক এ গোলার প্রতিটির ওজন প্রায় ১০০ পাউন্ড এবং সঠিকভাবে কয়েক ডজন মাইল দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। ২৪ আগস্ট পর্যন্ত, মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে যে, তারা ইউক্রেনকে ৮ লাখ ৬ হাজার রাউন্ড পর্যন্ত ১৫৫ মিমি গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী বছরের শুরুতে কত তাদের কাছে কত রাউন্ড গোলা ছিল তা বলতে অস্বীকার করেছে।
সঙ্কটের কারণে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে ১৫৫ মিমি গোলা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। বদলে তারা কম শক্তিশালী ১০৫ মিমি গোলা দিচ্ছে। মার্কিন সেনাবাহিনী বলেছে যে, তাদের নিজস্ব প্রয়োজন রক্ষা করার মাধ্যমে কীভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। তারা আরও গোলাবারুদ উৎপাদনের জন্য অতিরিক্তি ৫০ কোটি ডলার চেয়েছে। তা হলেও, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, এ ঘাটতি পূরণ করতে অনেক সময় লাগবে।
রাশিয়ায় যুদ্ধ ড্রোনের প্রথম চালান পাঠাল ইরান : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, রাশিয়ার পণ্যবাহী বিমানগুলো গত ১৯ আগস্ট ইরান থেকে ড্রোনগুলো নিয়ে রওনা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে দুই ধরণের মানববিহীন যান, যেগুলো রাডার, আর্টিলারি এবং অন্যান্য সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য যুদ্ধাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। তবে অস্ত্রগুলি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উৎসাহ দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এবং একটি মিত্র সরকার সাক্ষাতকারে বলেছেন যে, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে হস্তান্তরটি বিঘ্নিত হয়েছে।
মস্কোতে মোহাজের-৬ এবং শাহেদ-সিরিজের ড্রোনের প্রাথমিক ডেলিভারিটি বিভিন্ন ধরণের শত শত ইরানী ইউএভির পরিকল্পিত স্থানান্তরের প্রথম কিস্তি বলে মনে করা হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কারণ বিষয়ের সংবেদনশীলতা। ইরানি ড্রোনের আগমন ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা পূরণ করতে সহায়তা করতে পারে।
ইউক্রেনকে আর সহায়তা দিবে না ব্রিটেন : রুশ সেনার হামলা শুরুর পর থেকে ইউক্রেনকে প্রায় ২৩০ কোটি পাউন্ড বা ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সামরিক ও আর্থিক সহায়তা করেছে ব্রিটেন। কিন্তু এখন অর্থসঙ্কটের কারণে ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্যে বন্ধ করতে পারে ব্রিটেন। রোববার ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরের শেষেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে দেয়া লন্ডনের সাহায্য তলানিতে পৌঁছনোর আশঙ্কা রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ সেনার হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে প্রায় ২৩০ কোটি পাউন্ড বা ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ব্রিটেন। লন্ডনের দেয়া এম-২৭০ মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, ব্রিমস্টোন-১ স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ম্যাস্টিফ সাঁজায়া গাড়ি, এন-ল ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ব্যবহার করেছে ইউক্রেন সেনা। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের একটি সূত্রে সানডে টাইমসের দাবি, মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থিকসঙ্কট বিদায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি পালনের পথে অন্তরায় হতে চলেছে। আগামী বছরের গোড়ায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোতে চাইছে ব্রিটিশ সরকার। সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে দেয়া সাহায্যের পরিমাণ যৎসামান্য হয়ে যাবে।
ডনবাসে বিপুল ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হঠল ইউক্রেনীয় সেনা : ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) এর কোডেমা গ্রামের কাছে হামলা শুরু করলে রুশ সেনার নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী তা প্রতিহত করে। ফলে ২০টি ট্যাঙ্ক এবং ৩০জন সৈন্য হারিয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয় ইউক্রেনীয় সেনারা। ডিপিআর পিপলস মিলিশিয়ার মুখপাত্র এডুয়ার্ড বাসুরিন মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘কোডেমা এলাকায়, শত্রু একটি পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেছিল। এটি সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছিল এবং ২০টি ট্যাঙ্ক এবং ৩০জন জঙ্গিকে নির্মূল করা হয়েছিল।’
ইউক্রেনের পাঁচটি কমান্ড পোস্ট ধ্বংস করেছে রুশ বাহিনী : গতকাল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে তাদের বিশেষ সামরিক অভিযানে গত দিনে রাশিয়ার যুদ্ধ বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং আর্টিলারি সৈন্যরা পাঁচটি ইউক্রেনীয় সেনা কমান্ড পোস্টে আঘাত করেছে।
‘অপারেশনাল-ট্যাক্টিক্যাল এবং আর্মি এভিয়েশন এয়ারক্রাফ্ট, মিসাইল ট্রুপস এবং আর্টিলারি ইউক্রেনের ভূখণ্ডে সামরিক সাইটগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, তারা ডোনেৎস্কের ভোডিয়ানোয়ের বসতিগুলির কাছে ১০৮তম এবং ৬৫তম যান্ত্রিক ব্রিগেড সহ পাঁচটি কমান্ড পোস্টে আঘাত করেছে,’ মুখপাত্র বলেছেন। তিনি জানান, ‘জাপোরোজিয়া অঞ্চলে গণপ্রজাতন্ত্রী এবং ভেসেলিয়াঙ্কা, নিকোলায়েভ এলাকায় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ৩৫তম এবং ৩৬তম সামুদ্রিক পদাতিক ব্রিগেড এবং খারকভ শহরে জাতীয়তাবাদী সেনার কমান্ড পোস্টও ধ্বংস করা হয়েছে।’
ইউক্রেনীয় বাহিনী দক্ষিণে আক্রমণ চালাচ্ছে এমন বিবৃতি মিথ্যা : ক্রিমিয়ার প্রধান সের্গেই আকসিওনভ সোমবার বলেছেন যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী দক্ষিণে আক্রমণ করছে এমন বিবৃতি সত্য নয় এবং এটি ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম দ্বারা ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হয়েছে। ‘ইউক্রেনীয় জঙ্গিরা দক্ষিণ দিকে একটি আক্রমণ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এটি ইউক্রেনীয়দের আরেকটি মিথ্যা প্রচার, যা পশ্চিমে সহজেই ধরা পড়েছিল। এই মিথ্যা গল্পটি ক্রিমিয়ান সেতুতে ভার্চুয়াল ‘আক্রমণ’-এর মতোই আগের সমস্ত গল্পের মতোই, যা কিয়েভের সরকার দ্বার একাধিকবার তৈরি করা হয়েছে,’ তিনি টেলিগ্রামে লিখেছেন। ক্রিমিয়ার প্রধান বলেন, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী সব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করছে। কিয়েভ এই পরিস্থিতিতে, তার মতে, বিভ্রম তৈরি এবং মিথ্যা গল্প তৈরিতে নিযুক্ত রয়েছে। সূত্র : তাস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।