মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের সমুদ্রতীরবর্তী শহর হেনিচেস্ক শহরের প্রধান কাউন্সিল ভবনের বাইরে বলশেভিক নেতা ভ্লাদিমির লেনিনের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। ছাদ থেকে উড়ছিল রাশিয়ান এবং সোভিয়েত পতাকা।
গত শুক্রবার ছিল লেনিনের ১৫২তম জন্মদিন। তিনি রুশ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছিলেন। সেই উপলক্ষে হেনিচেস্কের বাসিন্দারা রাশিয়ার প্রতি তাদের সমর্থন এভাবেই ব্যক্ত করেন। এদিকে, শনিবার রাশিয়া ঘোষণা করেছে যে, তারা তাদের সাম্প্রতিক পরীক্ষিত সারমাত ক্ষেপণাস্ত্রটি আগামী শরৎকালের মধ্যে মোতায়েন করবে। ইউক্রেন অভিযানের কারণে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়ার এ ঘোষণা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
শহরের বাসিন্দানের ইচ্ছা অনুযায়ী হেনিচেস্ক শীঘ্রই ‘খেরসন গণপ্রজাতন্ত্রী’ এর অংশ হয়ে উঠতে পারে। মস্কো সম্ভবত বুধবারের প্রথম দিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় ওব্লাস্ট বা প্রদেশে একটি স্বাধীনতা গণভোট করার পরিকল্পনা করছে। সেখানে কৃতজ্ঞ স্থানীয় ভোটাররা ইউক্রেন থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক শহরে গণভোট আয়োজন করেছিল, উভয়ই ‘জনগণের প্রজাতন্ত্র’ হয়ে ওঠে। রাশিয়ান সেনাবাহিনী এখন ইউক্রেনের আরও অঞ্চল মুক্ত করতে এবং ‘প্রজাতন্ত্র’ সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। এখন রাশিয়ান জেনারেলরা খোলাখুলিভাবে বিজয়ের কথা বলেন। অভিযানটি ইউরোপের মানচিত্রকে নতুন আকার দিতে যাচ্ছে।
রাশিয়ার নতুন লক্ষ্য হল আজভ সাগর বরাবর বিচ্ছিন্নতাবাদী পূর্ব থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত প্রসারিত একটি স্থল করিডোর তৈরি করা। এর মধ্যে ওডেসা এবং মাইকোলাইভের কৃষ্ণ সাগর বন্দরগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। করিডোরটি ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার সাথে যুক্ত হবে, যেটি মোল্দোভার একটি বিচ্ছিন্ন সোভিয়েত-শৈলী অঞ্চল যা ইতিমধ্যেই রাশিয়ান ‘শান্তিরক্ষীদের’ আবাসস্থল। এরই মধ্যে, ক্রেমলিন হেনিচেস্ক এবং অন্যান্য দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ একীভূত করছে। গত মাসে, হেনিচেস্কের মেয়র তুলুপভ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। নতুন মেয়র হয়েছেন গেনাডি সিভাক যিনি আট বছর ধরে সংযুক্ত ক্রিমিয়াতে বসবাস করেছিলেন। দখলকৃত শহর খেরসন-এ, মস্কো পুতিনের ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির একজন রাশিয়ান ডেপুটি ইগোর কাস্ত্যুকেভিচকে মেয়র হিসেবে নিযুক্ত করেছে।
ইউক্রেনের মুক্ত হওয়া শহরগুলো এখন তাদের পুরোনো পরিচয় মুছে সোভিযেত আমলের রাশিয়ার মতো সেজে উঠার চেষ্টা করছেন। নাগরিক ভবন থেকে ইউক্রেনের পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। মেলিটোপোলে শিক্ষকদের রাশিয়ান ব্যবহার করতে এবং ক্রেমলিনের স্কুল পাঠ্যক্রম শেখাতে বলা হচ্ছে। বেশিরভাগ দক্ষিণের বাসিন্দারা রাশিয়ার দখলের সমর্থন করেছে। স্থানীয় অনেকেই রুশ বাহিনীকে সহায়তা করছেন। মারিউপোলের নতুন ‘মেয়র’ রাশিয়ানপন্থী বিরোধী দল ব্লকের একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তবে কিয়েভের সেনারা সেখানে গুপ্ত হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। বুধবার, ভ্যালেরি কুলেশভ, একজন রাশিয়ানপন্থী অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগারকে খেরসনে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি সকালে তার অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ছেড়ে তার ধূসর মাজদায় উঠেছিলেন। কে তার গাড়ির সামনে স্বয়ংক্রিয় গুলি চালিয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
মাইকোলাইভের মেয়র ভ্যালেরি কিম বলেছিলেন যে, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের এভাবে গুলি করে আটকানো অসম্ভব। মনে হচ্ছে ক্রেমলিন শীঘ্রই দক্ষিণ ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে না। বার্দিয়ানস্কের ‘সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন’ দ্বারা ব্যবহৃত একটি নতুন স্ট্যাম্প বলছে যে বন্দরটি ‘রাশিয়ার’ অংশ। ইউক্রেনীয় মুদ্রা, রিভনিয়াকে রুবেল দিয়ে প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে – এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করার জন্য স্থানীয়দের যোগদান করানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
‘সারমাত’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা : ক্রেমলিন বুধবার তার নতুন, পারমাণবিক বোমা বহণে সক্ষম সারমাত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) সিস্টেমের প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ওয়ারহেডটি যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। ইউরোপে ‘শয়তান ২’ নামে পরিচিত এই ক্ষেপনাস্ত্র রাশিয়ার পক্ষে গেম চেঞ্জার হিসাবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরমাত একসাথে ১০ বা ততোধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড ও ডেকো বহন করতে সক্ষম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে হাজার হাজার মাইল দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বর্তমানে এর কাছাকাছি ক্ষমতার ক্ষেপণাস্ত্রও কোন দেশ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও নেই। রাশিয়ার রোসকসমস স্পেস এজেন্সির প্রধান দিমিত্রি রোগজিন রাষ্ট্রীয় টিভির সাথে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মস্কো থেকে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার (১ হাজার ৮৬০ মাইল) পূর্বে সাইবেরিয়ার ক্রাসনোয়ারস্ক অঞ্চলে একটি ইউনিটের সাথে মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেছিলেন যে, এগুলো সোভিয়েত যুগের ভয়েভোদা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর প্রতিস্থাপনের মতো একই সাইটগুলোতে এবং একই সাইলোতে স্থাপন করা হবে, যা ‘বিশাল সম্পদ এবং সময়’ বাঁচাতে পারে। এ ‘সুপার-অস্ত্র’ চালু করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা যা আগামী ৩০-৪০ বছরের জন্য রাশিয়ার সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, রোগজিন যোগ করেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন দাবি করেছেন যে, ক্ষেপণাস্ত্রটি, যা প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার (৩ হাজার ৭০০ মাইল) ভ্রমণের পরে তার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিল, বর্তমান প্রযুক্তির পক্ষে এর সাথে তাল রক্ষা করা কার্যত অসম্ভব।
‘নতুন কমপ্লেক্সের সর্বোচ্চ কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী প্রতিরক্ষার সমস্ত আধুনিক উপায়কে অতিক্রম করতে সক্ষম। বিশ্বে এর কোনও সমকক্ষ নেই এবং আগামী দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আসার কোন সম্ভাবনাও নেই,’ তিনি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে একটি ভিডিও ব্রিফিংয়ের সময় বলেছিলেন।
ইউক্রেনের সু-২৫ বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে রাশিয়া : রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খারকভ অঞ্চলে ইউক্রেনের এসইউ-২৫ যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। একই সময়ে, চেরনোবায়েভকার বসতিতে দুটি তোচকাণ্ডইউ কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করেছে প্যান্টসির-এস ক্রু। শনিবার রুশ সেনার মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খারকভ অঞ্চলের নোভায়া দিমিত্রোভকা এলাকায় ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর সু-২৫ বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।’ রুশ বাহিনী রাতারাতি ইউক্রেনের ৬৬টি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে, যার মধ্যে রকেট ও আর্টিলারি অস্ত্রের তিনটি গুদাম এবং ইউক্রেনীয় বাহিনী ও সামরিক সরঞ্জামের ৫৮টি স্থাপণা রয়েছে, কোনাশেনকভ ঘোষণা করেছেন।
মেজর জেনারেল বলেছেন, রাশিয়ান এরোস্পেস বাহিনী উচ্চ-নির্ভুল বায়ুচালিত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ১১টি ইউক্রেনীয় সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর দুটি কোম্পানিকে ধ্বংস করেছে। ‘রাতে, রাশিয়ান বিমানবাহিনীর উচ্চ-নির্ভুল বায়ুবাহিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইউক্রেনের ১১টি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে, যার মধ্যে সাতটি শক্তিশালী ঘাঁটি এবং বাহিনী ও সামরিক সরঞ্জামের স্থাপনা রয়েছে। হামলার ফলে, শত্রু ২৫ সাঁজোয়া যান সহ দুই কোম্পানি সেনা পর্যন্ত হারিয়েছে।’ কোনাশেনকভ জানান, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে, রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী ৫৩৮টি মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি), ২,৪৭১টি ট্যাঙ্ক এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সাঁজোয়া যান, পাশাপাশি ২৭৪টি একাধিক ধরণের রকেট লঞ্চার ধ্বংস করেছে। সূত্র : তাস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।