মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বের পণ্যবাজারে অর্ধ শতকের মধ্যে ‘সবচেয়ে বড় ধাক্কা’ লাগতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব ব্যাংক। গত মঙ্গলবার এ সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে গ্যাস থেকে গম ও তুলা পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যে দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এ ধাক্কা ১৯৭০ এর দশকের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংকের এই প্রতিবেদনের সহ-লেখক পিটার ন্যাগল বিবিসিকে বলেন, পণ্যের দামের এই ঊর্ধ্বগতি এরইমধ্যে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও মানবিক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে মানুষকে জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংস্থার এ জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমরা গরীব পরিবারগুলোর জন্য বেশি উদ্বিগ্ন, যেহেতু তাদের আয়ের সিংহভাগ খাবার ও জ্বালানির পেছনে খরচ হয়। পণ্যের দাম বাড়লে তারাই সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে পড়ে’।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ার দিকে এগোচ্ছে, যা ব্যবসা ও সংসার চালানোর খরচ অনেক বাড়িয়ে দেবে। সবচেয়ে বেশি বাড়বে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম, যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যেতে পারে বলে বিশ্ব ব্যাংকের ধারণা। আগামী বছরের শরৎ এবং ২০২৪ সালের পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে গ্যাসের দাম ১৫ শতাংশ বেশি থাকবে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত বিশ্ব টানা ২৩ মাস জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি দেখছে। মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের জেরে ১৯৭৩ সালের জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির পর এটাই দীর্ঘতম সময় ধরে জ্বালানির দাম বেড়ে চলার ঘটনা। একইভাবে জ্বালানি তেলের দামও ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়তি থাকবে এবং চলতি বছরজুড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম গড়ে ১০০ ডলারে বিক্রি হবে, যা বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্বের ১১ শতাংশ তেল উৎপাদন করে রাশিয়া, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটনায় এবং পশ্চিমা অবরোধের ফলে একটি দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে, যেহেতু অবরোধের কারণে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো রাশিয়া ছেড়ে যাবে এবং দেশটির নতুন প্রযুক্তি পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে। রাশিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ২৭ শতাংশ তেল সরবরাহ করে। কিন্তু ইইউ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে, যা বিশ্বজুড়ে তেল-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত চাহিদা ও সরবরাহ ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে।
বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাসে সতর্ক করা হয়েছে, অনেক খাদ্য পণ্যের দাম হঠাৎ লাফিয়ে বাড়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য মূল্য সূচক এরইমধ্যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। ছয় দশক আগে এই সূচক চালু করা হয়। গমের দাম ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে এবং ডলারের হিসাবে এটা দাম বৃদ্ধির নতুন রেকর্ড গড়ার পথে আছে। অন্যান্য খাদ্য পণ্যের মধ্যে বার্লি ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ, সয়াবিন ২০ শতাংশ, ভোজ্য তেল ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ ও মুরগির দাম ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে। এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এটাই ইঙ্গিত করছে যে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে এসব পণ্যের রপ্তানি রাতারাতি কমে গেছে। সূত্র : রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।