মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মধ্য ও পশ্চিম ইউক্রেনের পাঁচটি রেলস্টেশনে গতকাল এক ঘণ্টার ব্যবধানে রাশিয়ার বিমান আঘাত হেনেছে, আর দেশটির দক্ষিণ ও পূর্বে নিরলসভাবে যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনীয় রেলওয়ের প্রধান ওলেক্সান্ডার কামিশিন বলেছেন, পাঁচটি ট্রেন স্টেশনে আগুন লেগে অনির্দিষ্ট সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ইউক্রেনের বেশিরভাগ অংশ গতকাল সকালে দুই ঘণ্টার জন্য একটি অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ বিমান হামলার সতর্কতার অধীনে ছিল। কামিশিন বলেন, পশ্চিম ইউক্রেনের লভিভের কাছে ক্রাসনেতে সকাল ৮.৩০ মিনিটে একটি হামলা হয়, যেখানে ওই অঞ্চলের গভর্নর ‘ট্র্যাকশন সাবস্টেশন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যা অন্যান্য লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিচালনা করে। তিনি বলেন, জরুরি কর্মীরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। এসব হামলাকে পূর্ববর্তী যেকোন সময়ের চেয়ে ভিন্ন ধরনের বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, ইউক্রেন সীমান্ত থেকে খুব দূরে পশ্চিম রাশিয়ার তেল স্থাপনায় দুটি আগুনের খবর পাওয়া গেছে। কী কারণে আগুন লেগেছে তা স্পষ্ট নয়। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প কেন্দ্রস্থলে ক্ষয়ক্ষতির একটি নাকাল যুদ্ধ কি হতে পারে তার জন্য ২ মাস বয়সী যুদ্ধের বন্ধনে উভয় পক্ষের, শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের বিজয় নিশ্চিত করতে আরও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রোববার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে দেখা করার জন্য কিয়েভের একটি সাহসী সফরে আমেরিকান পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা বলেছেন যে, ওয়াশিংটন ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের গোলাবারুদ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সোমবার বৈঠকের পর বলেন যে, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন এবং মস্কোর উপর চাপের ‘বাস্তব ফলাফল’ হচ্ছে। অভিযানের ঠিক দুই মাস পার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দু’জন কর্মকর্তা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে গেলেন। তবে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এই সফর-পরিকল্পনার ব্যাপারে এখনও কোন মন্তব্য করা হয়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে ২৪ ফেব্রুয়ারি এই অভিযান শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের এতো উচ্চ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তার এটাই প্রথম ইউক্রেন সফর। এর আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ মার্কিন নেতারা প্রতিবেশী পোল্যান্ড সফর করেছেন। গত আট সপ্তাহের এ যুদ্ধে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ দেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। দেশের ভেতরেও উদ্বাস্তু হয়েছে আরো কয়েক লাখ মানুষ।
কে জয়লাভ করছে : প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শুরু থেকেই দাবি করছেন যে, তারা এ যুদ্ধে জিতবেন, রাশিয়া কোনোভাবেই জিততে পারবে না। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও একাধিকবার বলেছেন যে, পুতিন এ যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবেন না। সমরবিদ সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, ‘যুদ্ধে জয়লাভ করার ব্যাপারে তারা কী বোঝাতে চাইছেন সেটা খুব স্পষ্ট নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা এ বিষয়ে ইউক্রেনের এক ধরনের মাপকাঠি রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ধরনের মাপকাঠি রয়েছে, যদিও এই দুটো দেশের চিন্তাধারার মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় রয়েছে, কিন্তু তার পরেও দু'পক্ষের দু'ধরনের চিন্তাধারা রয়েছে। আর রাশিয়ার চিন্তাভাবনা একেবারেই ভিন্ন।’
আলী মনে করেন রাশিয়া যা চাইছে সেটা তারা গত দু’মাসের যুদ্ধে অর্জন করেছে বা করতে চলেছে। ‘রাশিয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল নেটো জোটকে একথা বুঝিয়ে দেওয়া যে ইউক্রেন এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে রাশিয়া তার বিরুদ্ধে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। দ্বিতীয়ত এটা প্রমাণ করা যে, ইউক্রেনে রুশ-ভাষী যতো নাগরিক রয়েছেন তাদের ওপর ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে গত ছয়/সাত বছরে যে ধরনের অত্যাচার করা হয়েছে সেই চাপ রাশিয়া আর গ্রহণ করবে না।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার এ লক্ষ্য, যদিও খুব ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু এ লক্ষ্য হয় অর্জিত হয়েছে কিম্বা হওয়ার পথে রয়েছে। সেদিক থেকে রাশিয়া সফল হয়েছে।’ তার মতে, ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার চাইতেও বেশি কিছু চাইছে যুক্তরাষ্ট্র - যেন রাশিয়া বিশ্ব ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এর মধ্যেই রাশিয়া তার অভিযানের প্রথম পর্বের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ পর্বে রুশ বাহিনী জোর দিচ্ছে ইউক্রেনের পূর্ব দিকের ডনবাস অঞ্চল দখলের ওপর। এই লক্ষ্যে তারা ডনবাসের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করতেও শুরু করেছে।
তাহলে কি এই যুদ্ধ আরো অনেকদিন ধরে চলবে? সমরবিদ সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, বিভিন্ন খবরাখবর দেখে মনে হচ্ছে ৯ই মে প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দিনটিতে রাশিয়ার বিজয় হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। তিনি মনে করেন মারিউপোল যদি সত্যিকার অর্থে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তাহলে তাকে রাশিয়ার আঞ্চলিক বিজয় বলে মনে করা হতে পারে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার সর্বশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলেছে, রাশিয়া তার দখলের ন্যায্যতা প্রমাণের লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন-এ একটি গণভোটের পরিকল্পনা করছে।
ওদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান এবং জেলেনস্কি টেলিফোনে মারিউপোলের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তুরস্ক ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে আলোচনার সময় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত, তুরস্কের প্রেসিডেন্সি রোববার বলেছে। জাতিসংঘ মারিউপোলে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ‘অবিলম্বে’ আহ্বান জানিয়েছে যাতে শহরে আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া যায়।
জার্মানি এবং ফ্রান্স ন্যাটোর অবস্থানকে দুর্বল করেছে : ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দুই সদস্য দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি রাশিয়ার কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সরবরাহ বিক্রি করেছে। ন্যাটোর আরেক সদস্য দেশ তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করেই রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছে। আমরা জানি যে, ন্যাটোর প্রধান ভূমিকা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং পরবর্তীকালে রাশিয়াকে, ন্যাটো দেশগুলোর বাইরে রাখা। প্রাথমিকভাবে পশ্চিম ইউরোপে সম্প্রসারিত হলেও পরবর্তীতে কিছু সাবেক ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রও যোগ দেয়। এটি একটি প্রতিরক্ষমূলক জোট। সে কারণে জার্মানি দাবি করছে যে, ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠালে এটি তাদের ন্যাটো প্রতিশ্রুতির খেলাপ হবে। তবে বাস্তবে রাশিয়ার জ্বালানির উপরে তাদের নির্ভরতাই এর মূল কারণ বলে মনে করেন অনেকেই।
এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিয়ান শুরুর পরে সবাই বুঝতে পেরেছে যে ভøাদিমির পুতিন, যাকে একজন ঠান্ডা এবং যুক্তিবাদী মনে করা হতো, প্রয়োজনে তিনি খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইইউ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পুতিনের পক্ষে সমাবেশও হয়েছে। বর্তমানে ইউরোপের মধ্যে ইউক্রেনের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য মিত্র হচ্ছে ব্রিটেন। জার্মানি এবং ফ্রান্স রাশিয়ার কাছে শুধু অস্ত্রই বিক্রি করেনি, জার্মানি চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এবং ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ পুতিনের সাথে সম্পর্কও বজায় রেখেছেন। ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন তো ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে মুখে কুলুপ আটকে রেখেছেন। তদ্ব্যতীত, জার্মানির আর্থিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও, শলৎজ এমনকি রাশিয়ান এলএনজি বাতিল করার সীমিত খরচ শোষণ করতে অস্বীকার করেছেন, যখন ম্যাখোঁ পুতিনের সাথে মধ্যস্থতা করার ভান করে নির্বাচনী সুবিধা নিতে চেয়েছেন।
ন্যাটোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তিন সদস্য দেশ জার্মানি, ফ্রান্স ও তুরস্কের ভূমিকার কারণে এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তেমন কোন শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারছে না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে অনেকবার হতাশা প্রকাশ করেছেন। ফলে পুতিন আরও শক্তিশালী হয়েছেন, একই সাথে রাশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপেও তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।