পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের
অনেক ঘাটতি রয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কম : আসম ফিরোজ
প্রকল্পের জালিয়াতি অডিট রিপোর্টে প্রকাশিত : এ বি এম আজাদ
এ যেন ভয়াবহ জালিয়াতি। প্রকল্পের কাজ না করেই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসির)। অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সিÐিকেট করেই এই অপকাÐ ঘটিয়েই চলছে। মংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। অথচ প্রকল্পের কাজ না করে ৫০শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে ম্যাক্সওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস ও পাইপলাইন লিমিটেডকে ২০৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। এ জালিয়াতির ঘটনা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসির) হিসাব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এটিএম সেলিমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ সন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আসম ফিরোজ ইনকিলাবকে বলেন, বিপিসিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কম। তাদের অনিয়মের চিত্র দেখে কমিটি শকড। বিভিন্ন কেনাকাটা ও নিরীক্ষায় যেসব আপত্তি এসেছে। তাদের সেগুলো সমন্বয় করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন চেয়ারম্যান (সচিব) এ বি এম আজাদ এনডিসি ইনকিলাবকে বলেন, মংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্পের জালিয়াতির ঘটনা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকল্পে অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ৫০শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে ম্যাক্সওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস ও পাইপলাইন লিমিটেডকে সরকারের ২০৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।
বিপিসির রন্ধে রন্ধে থাকা দুর্নীতি বন্ধে অটোমেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া থামিয়ে রেখেছে এটিএম সেলিম চক্র। অটোমেশন হলে দুর্নীতি লুটপাট অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যেতো। বিশেষ করে তেল বিক্রি ও মজুদ এক ক্লিকেই দেখা যেতো। তাতে করে অধীনস্থ কেম্পানিগুলো (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা) ব্যাংকে টাকা ফেলে রেখে ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে পারত না। স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েলে এই ধরণের একটি বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। বিপিসি ওই কম্পানিটির শেয়ার হোর্ল্ডা আর বিপিসির পক্ষ থেকে তদারকি করতেন এটি এম সেলিম নিজে। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান হয় টাকা নির্ধরিত সময়ে আদায় না করায়। ওই ঘটনায় মামলা হলেও মূল হোতা এটি এম সেলিম রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে জানা গেছে।
সরকার যখন জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা বলছে, তখনও বেপরোয়া এটিএম সেলিম। অফিসের গাড়িটি সারাদিন পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সকালে তাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় ছেলে- মেয়েকে স্কুলে আনা নেওয়ার জন্য। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটি কখনও চট্টগ্রাম ক্লাবে, কখনও র্যাডিসন হোটেলে সাঁতার কাটতে যায়। বিগত কয়েকমাস মাস ধরে চলছে সেই রুটিন। মেয়ের সাতার শেখার ফাঁকে স্ত্রীকে দোকানে আনা নেওয়া করে এ গাড়ি। যা সরকারি বিধি বিধান মানছেন না।
প্রকল্প পরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন ইনকিলাবকে বলেন,বিপিসির হিসাব বিভাগ থেকে বিল প্রদান করা হয়। তাই বিপিসির কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। পরে হিসাব বিভাগেও ভাউচার খুঁজে পায়নি অডিট প্রতিষ্ঠান। আমি কোন বিল প্রদান করি না।
মন্ত্রণালয়ের অভিযোগে বলা হয়, বিল দেওয়ার মতো জালিয়াতি ক্ষোদ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে অডিট রিপোর্টে ফুটে উঠেছে। মংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্পটির আরডিপিপির (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। খরচ করা হয়েছে ২০৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ কারণে অডিট প্রতিষ্ঠান খান ওয়াহাব শফিক রহমান এন্ড কোম্পানি ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি আপত্তি দিয়েছে। প্রকল্পটির বেশ কিছু ভাউচারের হদিস পায়নি অডিটর। ভাউচারের বিষয়ে অডিট প্রতিষ্ঠান আপত্তি উত্থাপন করলে প্রকল্প পরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, বিপিসির হিসাব বিভাগ থেকে বিল প্রদান করা হয়। তাই বিপিসির কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। পরে হিসাব বিভাগেও ভাউচার খুঁজে পায়নি অডিট প্রতিষ্ঠান।
এদিকে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার বছর শেষ না হতেই অফিস ও আবাসিক ভবনের প্লাস্টারে শ্যাওলা জমেছে। বেশ কয়েকটি ভবনের বারান্দায় ফাটল ধরেছে। সিড়িং রেলিং স্টেইনলেস স্টিলের দেওয়ার কথা থাকলে তা দেওয়া হয়নি, মরিচা ধরে বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে রেলিং। যার বেশির ভাগ কাজ করেছেন এটি এম সেলিম নিজেই বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের হিসাব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এটিএম সেলিম নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল জালিয়াতির মাধ্যমে। অথচ চাকরিতে যোগদানের পর থেকে বেপরোয়া দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষা ছাড়াই বিপিসিতে চাকরি পান এটিএম সেলিম। ১৯৯৯ সালে ৪ জন সহকারী ব্যবস্থাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিপিসি। নিয়োগ বোর্ড হিসাব বিভাগে কাজী শহীদুর রহমান, বাণিজ্য বিভাগে আবুল কালাম আজাদ, এমআইএস বিভাগে মো. সোয়েব আহমেদকে ও পরিকল্পনা বিভাগে মোঃ মনিরুল ইসলাম নিয়োগ দেয়। নিয়োগ পাওয়ার ৩ মাসের মাথায় মো. মনিরুল ইসলাম চাকরি ছেড়ে পূর্বের কর্মস্থল সিলেট গ্যাস ফিল্ডে যোগদান করেন। এতে একটি সহকারী ব্যবস্থাপক পদ শূন্য হয়ে পড়ে। তখন বিপিসির কম্পানি সচিব ছিলেন এটিএম সেলিমের চাচা কামাল উদ্দিন। তার চাচা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ও আইন না মেনে, বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ বোর্ড কিংবা প্যানেল ছাড়াই অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে শূন্য হয়ে পড়া সহকারী ব্যবস্থাপক পদে এটি এম সেলিমকে নিয়োগ দেন। মংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্পে পরতে পরতে দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এই প্রকল্পটি এটি এম সেলিমের সার্বিক তত্ত¡াবধানে বাস্তবায়ন হয়। ঠিকাদারের বিলসহ সব পেমেন্ট দেওয়া হয় বিপিসির হিসাব বিভাগ থেকে। প্রকল্পের শুরুতেই শূন্য শতাংশ অগ্রগতিকে ৫০শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে ম্যাক্সওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস ও পাইপলাইন লিমিটেডকে
অভিযোগে আরো বলা হয়, বিপিসির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেডের এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা উঠেছে। ধান ক্ষেতের একর প্রতি মূল্য ৩ লাখ, আর পানের বরজের মূল্য ৬৩ লাখ নির্ধারণ করে জমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। অথচ এসপিএম প্রকল্পে যারা এটিএম সেলিমকে টাকা দিয়েছেন তাদের ধান ক্ষেতকে দেখানো হয়েছে পানের বরজ, আবার যারা টাকা দেননি তাদের পানের বরজকে ধান ক্ষেত দেখানো হয়েছে। এখানে প্রায় ৯৬ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়ে। ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি ঘুষের টাকা ভাগাভাগির সময় ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫০ টাকাসহ ১ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ ঘটনার দুদকের অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানা গেছে। নিজের পকেট ভারি করতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে ঠেলে দিয়েছেন লোকসানের দিকে। ব্যাংকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আমানত থাকা অবস্থায় (এসএনডি ও এফডিআর) প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন ব্যাংক ঋণ নিয়ে। আমানতের বিপরীতে প্রাপ্ত সুদের চেয়ে ঋণের বিপরীতে পরিশোধিত সুদের পরিমাণ ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ ঋণ না নিয়ে নিজেদের আমানত থেকে বিপিসির একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে ২৭৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। সবকিছু জেনেও শুধু নিজের মুনাফার ধান্দায় সেই কাজটি করে বিপিসিকে ডুবিয়েছেন এটি এম সেলিম। এই দুর্নীতির বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি।
এ বিষয়ে বিপিসির হিসাব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এটিএম সেলিমের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি আমার নয় আপনরা প্রকল্প পরিচালকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।