Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা পুতিন জীবনে একবারই জানান

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২২, ২:৩২ পিএম

টানা ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। বুধবার (২৪ আগস্ট) ছিল ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস। ৩১ বছর আগে এই দিন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেরিয়ে এসেছিল ইউক্রেন। অন্যদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সেই হিসেবে বুধবারই তা পূর্ণ করেছে ছয় মাস। স্বাধীনতা দিবসে মস্কো-কিয়েভের এই যুদ্ধ সাত মাসে গড়ালেও দিবসটি উপলক্ষে ইউক্রেনের জন্য অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা বার্তার কমতি ছিল না। -নিউজউইক, বিবিসি

তবে বৈশ্বিক এই শুভেচ্ছা বার্তায় নিশ্চিতভাবেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম ছিল না। তবে পুতিন কি কখনও ইউক্রেনকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা জানাননি? এর উত্তর হচ্ছে- হ্যা, জানিয়েছিলেন। আর তা কেবল জীবনে একবারই। সেটিও আবার ১৫ বছর আগে। অর্থাৎ ২০০৭ সালে। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় আগে ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবসে দেশটিকে পুতিনের শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি তুলে এনেছে সংবাদমাধ্যম নিউজউইক। বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের ২৪ আগস্ট প্রথম ও শেষবারের মতো ইউক্রেনকে তার স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। এমনকি সে বছর ইউক্রেনকে তার স্বাধীনতার জন্য অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথাও বলেছিলেন রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট।

নিউজউইক বলছে, ২০০৭ সালের ২৪ আগস্ট ক্রেমলিনের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ইউক্রেনের স্বাধীনতা ঘোষণার ১৬তম বার্ষিকীর ‘সম্মানে’ তৎকালীন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইউশচেঙ্কোকে একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেসময় ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিবেশী সম্পর্কের মাধ্যমে আমাদের জনগণ সংযুক্ত। তিনি আরও বলেছিলেন, আমি নিশ্চিত, বিদ্যমান স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিক উন্নয়নের পাশাপাশি সুদৃঢ় আইনি ভিত্তিতে ইউক্রেনীয় সরকারের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক নীতিগুলোও আমাদের উভয় দেশের মূল স্বার্থে রয়েছে।

এখানেই অবশ্য থেমে যাননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০০৭ সালের সেই অভিনন্দন বার্তায় তিনি আরও বলেন, রাশিয়া সম্ভাব্য সব উপায়ে পারস্পরিক সুবিধাজনক রাশিয়ান-ইউক্রেনীয় সহযোগিতার আরও উন্নয়নের পক্ষে এবং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ককে সত্যিকারের কৌশলগত অংশীদারে রূপ দেওয়ার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা চালানোর পক্ষে। অবশ্য ভ্লাদিমির পুতিনের ১৫ বছরের পুরোনো বার্তার সেই বন্ধুত্বপূর্ণ বক্তৃতা বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিপরীত। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।

মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা ডনবাস দখল করতে চাইছে। এই ভূখণ্ডটি লুহানস্ক এবং দোনেতস্ক নামে দু’টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে রুশপন্থি দু’টি বিদ্রোহী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

অবশ্য ইউক্রেনের অভিযোগ, রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং বহু ইউক্রেনীয় শহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবসে দেশটির একটি রেল স্টেশনে রুশ রকেট হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এরপর বেশ ক্ষুব্ধ হয়েই স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে রাশিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনার (পুতিন) কতটা শক্তিশালী সেনাবাহিনী আছে তা আমরা পরোয়া করি না, আমরা কেবল আমাদের ভূখণ্ড নিয়ে চিন্তা করছি। আমরা শেষ পর্যন্ত এটির জন্য লড়াই করব।’ এমনকি রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি এমন প্রতিশ্রুতিও দেন যে, ইউক্রেন ‘সন্ত্রাসীদের সাথে বোঝাপড়ার চেষ্টা করবে না’। তার ভাষায়, ‘আমাদের জন্য ইউক্রেন মানে সমগ্র ইউক্রেন। কোনো ছাড় বা আপস ছাড়াই সকল ২৫টি অঞ্চল মিলেই (একক ইউক্রেন)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন-রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ