Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

চকবাজারে অগ্নিকান্ডে ৬ জনের মৃত্যু

## আশপাশের সব ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ: ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক ## নাশকতা নয়, প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে : লালবাগের ডিসি ## ডিএনএ পরীক্ষা শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানীর চকবাজারের দেবীদাস লেন এলাকায় একটি চার তলা ভবনের হোটেল, প্লাস্টিক কারখানা ও গোডাউনে অগ্নিকান্ডে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভবনটির দোতলা থেকে ছয় জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ওই ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আড়াই ঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

তারা হলেন-হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রাকেশ সরকারের ছেলে স্বপন সরকার (১৯), শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার দক্ষিণ বড় কাসমা এলাকার আবুল কালাম সরদারের ছেলে ওসমান (২৫), বরিশালের মুলাদী উপজেলার টুমচর এলাকার মৃত আলম সরদারের ছেলে বিল্লাল (৩৫), একই বিভাগের হিজলা উপজেলার শংকরপাশা এলাকার মো. মোস্তফা ছেলে মোতালেব (১৬), কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার তিতচর এলাকার মিজানের ছেলে মো. শরীফ (১৬) ও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ আকাল বরিশ এলাকার সাত্তার হিলালুর ছেলে রুবেল (২৮)।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা করে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছি। তল্লাশি করে প্রাথমিকভাবে ছয়টি পাওয়া যায়। ভবনটির নিচতলায় একটি হোটেল রয়েছে, যেটি বরিশাল হোটেল নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। এই হোটেলটির ঠিক ওপরে অর্থাৎ দোতলায় একটি ছোট ঘর আছে, ওই ঘর থেকেই একসঙ্গে ৬জনের লাশ পাওয়া গেছে। লাশগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে প্রাথমিকভাবে কাউকেই শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, চারতলা ভবনটির চতুর্থ তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত পাকা আর চতুর্থ তলায় টিনশেড ঘর নির্মাণ করা আছে। এই টিনশেড ঘরটি মূলত প্লাস্টিকের খেলনা উৎপাদন ও মজুতের গোডাউন। এখান থেকে প্রথমে আগুন লাগে।
স্থানীয়রা আরো জানান, গতকাল সকাল থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। তাই অন্য দিনের তুলনায় কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল কম। এই ভবনের আশপাশে একাধিক পলিথিন কারখানা রয়েছে। তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, ভবনটির নিচতলায় খাবারের হোটেলে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ওপরের দিকে উঠে গেলে সেখান থেকে তা চারতলার খেলনার কারখানা ও গুদামে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এখানে যেহেতু প্লাস্টিক খেলনা ও পলিথিন কারখানা রয়েছে, তাই কিছু রাসায়নিকের উপস্থিতিও থাকতে পারে। এ জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ওই চারতলা ভবনের কাছাকাছি পৌঁছাতে না পারায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়।
নিহত ওসমানের খালাতো ভাই মো. রুবেল বলেন, যে ভবনে আগুন লেগেছে সেটির নিচ তলায় বরিশাল হোটেলে কাজ করত ওসমান। রাতে কাজ করে ওই ভবনের দুই তালায় ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু আগুন লাগার পরে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তার ফোনে কল করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
মো. আব্দুল্লাহ নামের আরেকজন বলেন, তার দুলাভাই মো. বিল্লাল বরিশাল হোটেলে কাজ করতেন। গত রাতে নাইট ডিউটি শেষে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ঘুমাচ্ছিলেন তিনি। আগুন লাগার পর তার মৃত্যু হয়।
আশপাশের সব ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ: ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসে দেখি আশপাশের অনেক ভবনেই যত্রতত্র এ রকম বিভিন্ন ধরনের কারখানা গড়ে উঠেছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে ঘিঞ্জি এলাকা অন্যদিকে এসব কারখানায় যখন-তখন যেকোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পাশাপাশি অনেক ভবনে মানুষ বাসও করছেন। তাদের জন্যই ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত ঠিক কীভাবে সেটা এখনো নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। আমরা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে তদন্ত কমিটি গঠন করবো। তারপর জানতে পারবো আসলে কীভাবে আগুন লেগেছে।
নাশকতা নয়, প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে : লালবাগের ডিসি: ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মো. জাফর হোসেন বলেন, আমরা এটাকে নাশকতা মনে করছি না। প্রাথমিকভাবে এটাকে আমরা দুর্ঘটনা বলে মনে করছি।
তিনি আরো বলেন, ওপরে জুতার সোল্ড ও প্লাস্টিকের খেলনার গুদাম ছিল। এ কারণে আগুন বেশি ছড়িয়েছে। আগুনের ঘটনায় যদি কোনো পক্ষের গাফিলতি থাকে তা সঠিকভাবে তদন্ত করে বের করার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখছি। যদি কারও গাফিলতি থাকে তাহলে আমরা আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, সরকারি জমি লিজ নিয়ে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। যে হোটেল থেকে আগুন লেগেছে, সেখানে আগে গ্যাসের লাইন ছিল। বিল বকেয়া থাকায় হোটেলটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। তখন থেকে তারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে।
ডিএনএ পরীক্ষা শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে: ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদরের জোন-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. বজলুর রশিদ বলেন, ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের শরীর এমনভাবে পুড়ে গেছে যে তাদের চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। আগুনে পুড়ে ওই পাঁচ লাশের হাড় বেড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আরেকজনের চেহারা দেখলে কিছুটা বুঝা যায়। লাশগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের শুরুর দিকে হয়তো তারা মারা গেছেন। লাশগুলো মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষা করে পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ