Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তীব্র উত্তেজনার মাঝেই তাইওয়ানে ন্যান্সি পেলোসি

অবশ্যই ভাল ফল হবে না : চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৪ এএম

চীনের পক্ষ থেকে বারবার হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই তাইওয়ানে গিয়ে পৌঁছেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রেপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ২৫ বছরের মধ্যে চীনের স্ব-শাসিত দ্বীপটিতে সফর করা সর্বোচ্চ মার্কিন পদধারী তিনি।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে বৃত্তাকার পথে উড়ে যাওয়ার পর মার্কিন সরকারের বিমানটি তাইপে’র সং শান বিমানবন্দরে নেমে আসে। তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তরে যাওয়ার আগে বিমানটি বোর্নিও এবং ফিলিপিন্স অতিক্রম করে।
চীনা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি প্রচার করেছে যাতে বলা হয়েছে, এ সফর চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে এবং এটি চীনের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগলিক অখণ্ডতার গুরুতর লঙ্ঘন।
তাইপে’র বিমানবন্দর থেকে মিসেস পেলোসি সরাসরি তাইপেতে তার হোটেলে যান এবং আজ সকালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনসহ তাইওয়ানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাইওয়ানে অবতরণের পর পরই টুইটারে এক পোস্টে ন্যান্সি পেলোসি লিখেছেন, তার প্রতিনিধিদলের সফর ‘তাইওয়ানের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকার অটুট প্রতিশ্রুতিকে সম্মানিত করেছে’। তিনি বলেন, ‘তাইওয়ানের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের সাথে আমেরিকার সংহতি আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ এবং তার সফর ‘কোনো ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নীতির বিরোধিতা করে না’। ঐ অঞ্চলে ‘স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের জন্য (চীনের) একতরফা প্রচেষ্টার বিরোধিতা যুক্তরাষ্ট্র করে চলেছে’ টুইটে তিনি মন্তব্য করেন।
চীন বারবার করে মিসেস পেলোসির এই সফরের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছে এবং মঙ্গলবার বলেছে যে, এ সফরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মূল্য দিতে হবে’। ফলে মার্কিন স্পিকারের বিতর্কিত এ সফর ঐ এলাকায় দুর্ঘটনাজনিত সামরিক সংঘর্ষের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। সফরের ঠিক আগে মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ান থেকে চীনা মূল ভূখণ্ডকে বিভক্তকারী সীমারেখায় চীন যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। চীনা বাহিনী ঐ এলাকায় তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করে সামরিক মহড়াও চালিয়েছে। চীনা সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছে, তারা ‘যে কোনো ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত’।
‘তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছিন্ন অংশ এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে সংযুক্ত করা হবে এবং বিদেশী সরকারি কর্মকর্তাদের সফরকে দ্বীপের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করে চীন। পেলোসি যদি সফরে এগিয়ে যান তবে চীন ‘দৃঢ় ও শক্তিশালী পদক্ষেপ’ নিয়ে সতর্ক করেছিল। বেইজিংকে আশ্বস্ত করার সময় বাইডেন প্রশাসন তাকে এটি বন্ধ করার জন্য স্পষ্টভাবে অনুরোধ করেনি, এটি তাইওয়ানের বিষয়ে মার্কিন নীতিতে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেবে না।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ‘তাইওয়ান ইস্যুতে ওয়াশিংটনের বিশ্বাসঘাতকতা তার জাতীয় বিশ্বাসযোগ্যতাকে দেউলিয়া করছে’। ওয়াং এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কিছু আমেরিকান রাজনীতিবিদ তাইওয়ানের ইস্যুতে আগুন নিয়ে খেলছেন’। ‘এটি অবশ্যই একটি ভাল ফলাফল হবে না ... আমেরিকার গুন্ডামিপূর্ণ মুখের উন্মোচন আবার এটিকে বিশ্বের শান্তির সবচেয়ে বড় নাশকতাকারী হিসাবে দেখায়’।
পেলোসি তার আগমনের পরপরই একটি বিবৃতিতে বলেন যে, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফর ‘তাইওয়ানের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকার অটল প্রতিশ্রুতিকে সম্মান করে’। তিনি বলেন, ‘আমাদের সফর তাইওয়ানে কংগ্রেসের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধিদলের মধ্যে একটি -- এবং এটি কোনোভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নীতির বিরোধিতা করে না’। পেলোসি এবং তার প্রতিনিধিদের বহনকারী বিমানটি মঙ্গলবারের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোবের সাথে একটি মধ্যাহ্নভোজসহ একটি সংক্ষিপ্ত বিরতির পর মালয়েশিয়া ছেড়ে যায়।
পেলোসির সফর ‘উসকানিমূলক’ : চীনকে সমর্থন রাশিয়ার : মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে উসকানিমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ সফর ঘিরে চীনকে সমর্থন করবে রাশিয়া। ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, এ ধরনের উসকানিমূলক সফরে বেইজিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়াবে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাইওয়ান ইস্যুতে ওয়াশিংটনকে আগুন নিয়ে না খেলার হুঁশিয়ারি দেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা বলেন, এ সফর চীনের ওপর চাপ বাড়ানোর উসকানিমূলক প্রচেষ্টা। গত কয়েক বছরে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক জোরালো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি উসকানিদাতা রাষ্ট্র’। রাশিয়া এক চীন নীতি নিশ্চিত করে এবং যেকোনোরূপে দ্বীপটির স্বাধীনতার বিরোধিতা করে।
কংগ্রেসের স্পিকার মার্কিন সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পরই মিসেস পেলোসির অবস্থান। তিনি বেইজিং সরকারের দীর্ঘদিনের এক সমালোচক। চীন বারবার করে এ সফরের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছে এবং মঙ্গলবার বলেছে যে এ সফরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মূল্য দিতে হবে’। তাইওয়ান একটি স্ব-শাসিত দ্বীপ, তবে চীন একে নিজস্ব ভূখণ্ড বলে বিবেচনা করে। সফর-সূচিতে তাইওয়ানের নাম উল্লেখ না করে মার্কিন স্পিকার গত রোববার তার এশিয়া সফর শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তিনি সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া সফর করেছেন এবং এরপর দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে যাবেন বলে কথা রয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চীনা মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের একত্রীকরণকে তার রাজনৈতিক এজেন্ডার মূল অংশে পরিণত করেছেন এবং গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করেছেন যে, আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার জন্য তাইওয়ানের কোনো উদ্যোগকে সমর্থন করে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ করবেন না। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি বাংলা ও ওয়াশিংটন পোস্ট।



 

Show all comments
  • মোঃ হাতেম আলী ৩ আগস্ট, ২০২২, ৮:৫৫ এএম says : 0
    যেখানেই সংঘাত সেখানেই যুক্তরাষ্ট্র। আবার এই সংঘাতের মূলেও তাদেরই হাত।আসলে তারা গণতন্ত্রের নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাসের মদতদাতা।দক্ষিণ এশিয়াকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র এটি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ