মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ইতিহাসে সবচেয়ে অকল্পনীয় এবং ব্যর্থ নীতিতে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনে সামরিক সাহায্য পাঠানো ন্যায্যতা পেলেও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা মস্কোর শাসনের বিরুদ্ধে অকার্যকর এবং এর অনাকাক্সিক্ষত ফলাগুলোর জন্য পশ্চিমাদের জন্য ধ্বংসাত্মক। বিশ্বে জ্বালানির দাম বাড়ছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, সরবরাহ প্রবাহ বিশৃঙ্খল এবং লাখ লাখ মানুষ খাদ্য, গ্যাস ও সার বিপর্যয়ে পড়েছে। তবুও রুবেলের গতি ঊর্ধ্বমুখী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।
পুতিন এই শীতে সমগ্র ইউরোপকে কাঁপাবেন। তিনি নর্ড স্ট্রিম ১-এর মতো বড় পাইপলাইন থেকে সরবরাহ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছেন। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে, বিশ্বে তেলের দাম বেড়েছে এবং পূর্ব ইউরোপের গম এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য আফ্রিকা ও এশিয়ায় প্রবাহ স্থবির হয়ে গেছে। অন্যদিকে, রাশিয়া এশিয়ায় জ¦ালানি রপ্তানি বাড়িয়েছে, যার অর্থ প্রদানের ভারসাম্য অভূতপূর্ব উদ্বৃত্তে পরিণত হয়েছে। জানুয়ারি থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ শক্তিশালী হয়ে রুবল এবছরের বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের অর্থনীতির পারস্পরিক নির্ভরতা, যাকে এতদিন ধরে শান্তির হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়েছে, তা এখন যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ন্যাটো টেবিলে রাজনীতিবিদরা ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে সতক আলোচনা করেছেন। তারা সামরিক প্রতিরোধ বোঝেন। কিন্তু তারা অর্থনীতিতে মোটা বুদ্ধির বলে মনে হয়। তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে প্রস্তর যুগে পাঠানোর লক্ষ্যে বোমা ফেলতে চায়। তারা সেই নব্য সাম্রাজ্যবাদী ধারণার আঁকড়ে রয়েছে যে, পশ্চিমা দেশগুলো তাদের ইচ্ছামতো বিশ্বকে শাসন করার অধিকার রাখে।
মার্কিন অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ নিকোলাস মুল্ডার উল্লেখ করেছেন যে, বিগত ৫০ বছরে কিউবা থেকে কোরিয়া, মিয়ানমার থেকে ইরান, ভেনিজুয়েলা থেকে রাশিয়া পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি নিষেধাজ্ঞা ‘যুদ্ধ’ বিপরীতমুখী প্রভাব না ফেলেছে। এরা প্রায় সবাই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থেকে উপকৃত হয়েছে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ রিচার্ড কনোলি রাশিয়ার ওপর এ পর্যন্ত আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বলেন, ‘বর্তমানগুলো, সম্ভবত সবচেয়ে কঠিনতমগুলো একটি বড় বিশ্ব শক্তির উপর চাপানো হয়েছে, এখনও কাজ করছে না।’ তবে, পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এগুলো এক সময় কাজ করবে। তারা মনে করেন যে, তারা মাইক্রোচিপ এবং ড্রোনের অভাব ঘটলে শিগগিরই পুতিন শান্তি ভিক্ষা চাইবেন।
তবে, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, পুতিন ভিক্ষা চাইলে তা ঘটবে যুদ্ধক্ষেত্রে। কনোলি বলেছেন, রাশিয়া ধীরে ধীরে তার নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা চীন, ইরান এবং ভারতের সাথে তার বাণিজ্যিক উন্নতি ঘটিয়েছে। তারা লাভবান হয়েছে এবং পুতিন এবং তার শাসক দলের সাথে যুক্ত অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা আমদানি প্রতিস্থাপন থেকে প্রচুর মুনাফা করেছেন। তবে রাশিয়ার অর্থনীতি দুর্বল হলেও পুতিন নিষেধাজ্ঞাগুলো পাশকাটিয়ে এশিয়া জুড়ে একটি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছেন, যেকখানে চীন একটি শক্তিশালী ভূমিকায় রয়েছে।
ইতোমধ্যে, পশ্চিমের দেশগুলো মন্দায় নিমজ্জিত হয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রার খরচ সর্বত্র বাড়ছে। গ্যানের অভাবে জার্মানি ও হাঙ্গেরি পুতিনের সুরে সুর মোলানো খুব কাছাকাছি। তবুও এখনও কেউ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না। ব্যর্থতা স্বীকার বা পশ্চাদপসরণে তাদের জন্য অমর্যাদাকর। ফলে আগ্রাসনবাদী পশ্চিম কালজয়ী পরিহাসে পরিণত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।