মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মস্কোর ওপর প্রতিশোধ নিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রযুক্তিগত চুক্তি থেকে চীনকে সরিয়ে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরানো উপসাগরীয় জোটে ফেরার চেষ্টা করছেন। সপ্তাহান্তে সউদী আরবে বেশ কয়েকজন আরব প্রভাবশালীর সাথে তার ব্রিবতকর বৈঠকের মাধ্যমে বাইডেন মার্কিন মিত্রদের সাথে তার সম্পর্ক পুনর্নবায়নের প্রচেষ্টা করেছেন এবং বলেছেন যে, মিত্ররা ‘গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারের মধ্যে যুদ্ধে’ ভুল পক্ষ বেছে নিয়েছে।
শনিবার লোহিত সাগরের এই প্রাচীন বন্দরে একটি হোটেলে নয়জন আরব নেতার সাথে এক বৈঠকে বাইডেন বলেন, ‘আমরা চীন, রাশিয়া বা ইরানের পূরণ করার জন্য কোনো শূন্যস্থান রেখে চলে যাব না এবং আমরা সক্রিয়, নীতিনির্ভর মার্কিন নেতৃত্বের সাথে এই মুহূর্তটি তৈরি করার চেষ্টা করব।’ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সউদীদের একটি দল সউদী আরব ছেড়ে চলে যাওয়ার ২০ বছরেরও বেশি সময় পর মার্কিন প্রশাসন একটি নতুন উদ্বেগে চালিত হয়েছে। যদিও আরব স্বৈরশাসকদের সাথে গায়েপড়ে বৈঠক করা বাইডেনের কাছে অস্বস্তিকর। কিন্তু রাশিয়াকে থামানো এবং চীনের উত্থান ঠেকানোর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন এটাই একমাত্র উপায়।
সউদীদের সাথে বাইডেনের ঘোষণার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল, সউদী আরবে পরবর্তী প্রজন্মের ৫জি এবং ৬জি টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য একটি নতুন প্রযুক্তিতে সহযোগিতা করার জন্য শুক্রবার রাতের একটি স্বাক্ষরিত চুক্তি। সেই চুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হল চীন ও তার রাষ্ট্রীয় সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিযোগী হুয়াওয়ে, যেটি এ অঞ্চলের বাজারে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রবেশ করেছে। চুক্তিটি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বেইজিংকে পিছু হঠানোর বৃহত্তর বাইডেন প্রশাসনের প্রচেষ্টার অংশ, যেখানে বছরের পর বছর ধরে চীন খুব বেশি প্রতিযোগিতা মোকাবেলা না করেই অগ্রগতি করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়াকে কঠোর মূল্য দিতে বাধ্য করা জন্য যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তর তেল উৎপাদন নিয়েও আলোচনা করেছেন। রয়টার্স সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে যে, এ পর্যন্ত তেল-গ্যাসের দাম খুব কম থাকায় রাশিয়ানরা কেবল তেল এবং গ্যাসের রাজস্ব সংগ্রহই করছে না, পাশাপাশি তারা এমনকি সউদী আরবকে তার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য মূল্যছাড়ে জ¦ালানিও সরবরাহ করছে।
তিন সপ্তাহ আগে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে বাইডেন পশ্চিমা জোটের জন্য একটি নতুন ‘কৌশলগত ধারণা’ দিয়েছিলেন, যা প্রথমবারের মতো চীনকে একটি পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং দেশটির নীতিগুলিকে জবরদস্তিমূলক এবং বিশ্বজুড়ে এর সাইবার কার্যক্রমগুলোকে ক্ষতিকর বলে অভিহিত করে। বাইডেন বলেন যে, রাশিয়ার পাশাপাশি বেইজিং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করছে। ন্যাটোর সম্মেলনের পর, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলেন যে, তারা ইউরোপের অভ্যন্তরে চীনের প্রভাব এবং এর ইলেকট্রনিক্স, সফ্টওয়্যার এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর দিকে মনোনিবেশ করবে।
জেদ্দায় মার্কিন প্রচেষ্টাটি দেখায় যে, চীনা এবং রাশিয়ান প্রভাবকে হ্রাস করতে বাইডেন একটি পাঁচ অধ্যায়ের ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নতুন কাঠামো’র রূপরেখা দিয়েছেন, যার মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামরিক নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে সমর্থন করা অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, ‘আমাকে এক বাক্যে এসবকে সংক্ষিপ্ত করে শেষ করতে দিন। আপনাদের সকলের সাথে অংশীদারিত্বে এ অঞ্চলে একটি ইতিবাচক ভবিষ্যত গড়তে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরছে না।’
জেদ্দা বৈঠকে বাইডেন সুন্নি আরব নেতাদের এটাও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে, ইরানে তাদের শিয়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে একটি পুনর্নবায়িত পারমাণবিক চুক্তির আলোচনার জন্য তার প্রচেষ্টা তাদের বিপদে ফেলবে না। বাইডেন বলেন, ‘যেহেতু আমরা ইরানের এ অঞ্চলের জন্য সৃষ্ট হুমকি মোকাবেলায় আপনাদের অনেকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধতা ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনীতিও অনুসরণ করছি। তবে যাই হোক না কেন, ইরান যাতে কখনো পারমাণবিক অস্ত্র না পায় তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অনেকেই ভাবছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে জোট পুনর্গঠনোর প্রয়োজনীয়তা স্নায়ুযুদ্ধের কাঠামোতে গভীরভাবে সম্পৃক্ততার কথিত আগ্রহের অজুহাতটির মূল উদ্দেশ্য তেল চুক্তি কিনা। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ফরেন এন্ড ডিফেন্স স্টাডিজের পরিচালক কোরি সাকে বলেন, ‘এটা সত্য যে চীন কিছু অংশে প্রবেশ করছে। কিন্তু সেগুলো হল চীনের জ¦ালানি চাহিদার স্বাভাবিক ফলাফল এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে তেল উৎপাদনকারীরা লাভবান হচ্ছেন এবং শেষ তিন প্রেসিডেন্টের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় দেশগুলিতে ইরানের আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে অস্বীকার করে আসছে। তবে এটি গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার হিসাবে বাইডেন প্রশাসনের চীনকে চ্যালেঞ্জকে করার নীতির ফলাফলও, যা সউদিকে হিসাবের খাতায় চীনের পাশে রাখছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।