মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিজের অর্থনীতি নিয়েই সঙ্কটে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০ বছর পর ইউরোর দর ডলারের নীচে নেমে গেছে৷ ২৫ বছরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ এমন অবস্থায় ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক সাহায্য পাঠাতে হিমসিম খাচ্ছে ইইউ।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, এরইমধ্যে ইউক্রেনকে প্রতিশ্রুতি দেয়া তহবিল পাঠাতে দেরি করছে জোটটি। এর পেছনে রয়েছে নিজেদের অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং জোটের মধ্যে নানা মতবিরোধ। এর আগে গত মার্চ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা ইউক্রেনকে ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করবে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে ইইউ। এছাড়া ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকও ১.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে সেই ঋণ এরইমধ্যে আটকে দেয়া হয়েছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকে ধুকছে ইউরোপের অর্থনীতিও। বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। ইউরোর মান কমে প্রায় ডলারের সমান হয়ে গেছে। বিভিন্ন পণ্যের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি কমাতে গিয়ে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জার্মানির সরকার এরইমধ্যে সাবধান করে জানিয়েছে, সামনে দেশে বেকারত্ব এবং দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া শিল্পগুলোও ব্যাপক হারে ভুগবে বলে মনে করছে জার্মান সরকার।
অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতার এই ধাক্কা বিশ্বের সবদেশেই আঘাত হেনেছে৷ কিন্তু সব দেশের জন্য এটি সমান ফল বয়ে আনেনি৷ ২০২১ সালেও জার্মানিতে আসা গ্যাসের ৫৫ শতাংশই ছিল রাশিয়া থেকে৷ জার্মান অর্থ মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, এখন তা ৩৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু গ্যাসের এই ঘাটতি পূরণ করতে যেমন টালমাটাল অবস্থায় পড়তে হচ্ছে জার্মানিকে, অন্যদিকে যে-কোনো সময় ৩৫ শতাংশ গ্যাসও রাশিয়া বন্ধ করে দিতে পারে, এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
ইউরোপ, বিশেষ করে জার্মানির অবস্থা এখন শাঁখের করাতের মতো৷ একদিকে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং ইউরোপে পশ্চিমা অংশীদার রাষ্ট্রগুলোকে নিয়মিত হুমকিধামকি দেয়াটা জার্মানির নীতিগত অবস্থানের কারণেই প্রতিবাদ করতে হচ্ছে৷ অন্যদিকে, রাশিয়ার ওপর জ্বালানি ছাড়াও অন্য নানা নির্ভরতার কারণে চাইলেই কড়া পদক্ষেপ নিয়ে রাশিয়াকে একঘরেও করে দেয়া যাচ্ছে না৷
মুখে কড়া কথা বললেও আদতে কড়া অর্থনৈতিক, সামরিক বা কূটনৈতিক কোনো পদক্ষেপই নিতে পারছে না জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ শুরু থেকেই ইউক্রেন ইস্যুতে জার্মানির অপেক্ষাকৃত নরম অবস্থানের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে৷ অস্ত্র বা ভারি সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশ দেরিতে নিয়েছে৷
কিন্তু জার্মানি নরমই থাক বা গরম, এককভাবে এখন আর অর্থনীতিকে সামলে রাখার কোনো উপায় নেই৷ করোনার মহামারিতে এরই মধ্যে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরো সঙ্কটের দিকে ধাবিত হচ্ছে৷ যুদ্ধ শুরুর মাসখানেক পরই জার্মানির বাজারে গম ও সূর্যমুখী তেলসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্কট দেখা দেয়৷ ডোমিনো ইফেক্টের মতো এইসব পণ্যের বিকল্প পণ্য যেমন চাল, জলপাই বা অন্য উদ্ভিজ্জ তেলের দামও বাড়তে থাকে৷ জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় এখন প্রায় প্রতিটি পণ্য ও সেবার খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে৷ তারচেয়ে বড় ভয়ের কারণ সামনে শীতকাল৷ ঘর গরম রাখার জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস বা তেল না পেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে৷
তাহলে ভবিষ্যৎ কী? অচিরেই যদি ইউক্রেন পরিস্থিতি শান্ত করার মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যের চাকা জোরেসোরে চালু না করা যায়, তাহলে ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা রয়েছে৷ সমগ্র অর্থনীতিই এর ফলে সঙ্কটে পড়বে৷ প্রোগনোস ধারণা করেছে, রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে বছরের শেষে জার্মানির অর্থনীতি ১২ দশমিক সাত শতাংশ সঙ্কুচিত হতে পারে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।