Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে কিয়েভের প্রতি সমর্থন থামাতে হবে পশ্চিমাদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেন যদি আক্রমণের শিকার একটি দেশ হয় এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি এর খলনায়ক হন, তাহলেও তার প্রতিপক্ষ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও দুধে ধোয়া নন। মার্কিন-রাশিয়া বিরোধকে কাজে লাগিয়ে জেলেনস্কি তার পেশাদার অভিনয়ের চাতুর্য দিয়ে পুতিনকে খলনায়ক হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং নিজেকে প্রতিবাদ, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসাবে জাহির করার মোক্ষম সুযোগটি দখল করে ‘চরম মন্দের’ বিরুদ্ধে ‘ভালো’র যুদ্ধে নেমেছেন এবং নিজের গদি বাঁচাতে সমগ্র পৃথিবীকে একটি বিভাজনপূর্ণ সঙ্ঘাতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন।

পোশাদার অভিনেতা জেলেনস্কির প্রকৃত চরিত্রের সাথে তার অতি সাবধানতায় তৈরি মিডিয়া ভাবমূর্তির পার্থক্য বহু আলোকবর্ষের। জেলেনস্কি প্রকৃতপক্ষে একজন ভন্ড শাসক; যাকে সর্বোত্তমভাবে নিখাদ ফ্যাসিবাদি হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। তার তথাকথিত ‘অভিজাতদের বিরুদ্ধে জনগণ’ এর লড়াই, তার প্রাথমিক নির্বাচনী কর্মসূচি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার তার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, যা তিনি নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথে ভুলে গিয়েছেন এবং তার নৃশংস স্বৈরাচারী স্বভাব পশ্চিমা গণতন্ত্রবাদের একটি নিখুঁত উদাহরণ। মাত্র গত বছরই প্যান্ডোরা পেপারস দেখিয়েছে যে, কিভাবে জেলেনস্কি এবং তার ঘনিষ্ঠ চক্র বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলির নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল পরিমাণে লাভ হাতিয়েছেন। যুদ্ধ শুরু পর থেকে পশ্চিমা পণ্ডিতরা এসব তথ্যকে তাদের সুবিধামত বেমালুম ভুলে গেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ দুর্নীতি সূচকে জেলেনস্কির অধীনে ইউক্রেন ১শ’র মধ্যে শীর্ষ ৩২-এ অবস্থান করছে, যা জাম্বিয়া, আলজেরিয়া এবং মিসরের মতো দুর্নীতিতে বিধ্বস্ত দেশগুলোর সমতুল্য এবং রাশিয়ার থেকে মাত্র কয়েক পয়েন্ট পিছিয়ে। পশ্চিমারা ইউক্রেনে শত শত ডলার ঢালার আগেই এই অবস্থা ছিল ইউক্রেনের। যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগে ইউক্রেনের ৫৫ শতাংশ ভোটার বলেছিল যে, তারা দ্বিতীয় মেয়াদে জেলেনস্কিকে চায় না। জেলেনস্কি তাই একভাবে, ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে আক্ষরিক অর্থে তার গদি বাঁচিয়েছেন।

মার্চে প্রেসিডেন্টের আদেশবলে জেলেনস্কি রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে ১১টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত ও নিষিদ্ধ করেন। ‘শত্রুদের সাথে সহযোগিতা’য় সম্পৃক্ত থাকার মিথ্যা ও সুবিধাজনক অজুহাতটি তিনি রাজনৈতিক বিরোধিতাকে দমন করার জন্য সবচেয়ে নিষ্ঠুরভাবে ব্যবহার করেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দূর করার জন্য জলেনস্কি ইউক্রেনীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলিকে ‘ইউনাইটেড নিউজ’ নামে একটি একক তথ্য প্ল্যাটফর্মে একীভূত ও জাতীয়করণের মাধ্যমে যুদ্ধের আহ্বান জানান, যা এখন সম্পূর্ণরূপে তার মতাদর্শ প্রচারের জন্য নিবেদিত।

ইউক্রেনের বিরোধীদলগুলোকে ছাঁটাই করে একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতা দখল ও পশ্চিমা সমর্থনের কারণে জেলেনস্কি এই বিভ্রান্তিতে বিভোর হয়েছেন যে, তিনি সামরিকভাবেও জয়ী হতে পারেন। এমনকি এই পরিস্থিতিতে ‘জয়’ বলতে আসলে কী বোঝায় এবং এই জয়ের জন্য তার নিজের জনগণকে কতোটা মূল্য দিতে হবে, তাও তিনি পরোয়া করেননি। যদিও প্রথমে আলোচনা এবং আপস করার স্পৃহা দেখিয়েছিলেন, কিন্তু তারপর থেকেই তিনি সবচেয়ে চরমপন্থী যুদ্ধবাজদের দলে যোগ দিয়েছেন, যারা তাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও অস্ত্র এবং অর্থের যোগান দিয়ে যাচ্ছে, এবং যাদের মধ্যে কেউই ইউরোপের বাকি অংশের কথা চিন্তা করে না।
তারপরেও, জেলেনস্কির পশ্চিমা মিত্ররা চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের স্বার্থবাদী আধিপত্যের যুদ্ধে বাকি বিশ্বকে টেনে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অন্যান্য সব পরিণতির পাশাপাশি, ইইউ দ্বারা সমর্থিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে আরও ভেঙে দিয়েছে এবং ব্যাপক বিভাজন ঘটিয়েছে। এটি এখন ইইউ দ্বারা সমর্থিত সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র, জি৭ ও ন্যাটো জোটের বিপরীতে চীন এবং রাশিয়ার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিরোধী জোটের একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

তৃতীয় পক্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো। তারা নিরপেক্ষ থাকার এবং সব পক্ষের সাথে সম্পর্ক সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসছে। খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য রাশিয়া, ইউক্রেন এবং পশ্চিমের প্রতি এই অঞ্চলের ব্যাপক নির্ভরতার পরিপ্রেক্ষিতে তারা জানে যে, এই সঙ্ঘাতে সরাসরি জড়িত থেকে তাদের ছিটেফোঁটাও লাভ নেই, বরং স্পষ্টভাবে পক্ষ বাছাই করলে তাদের বহুকিছু হারানোর আছে।

অনেকে প্রকৃতপক্ষে, আগ্রাসন না করার এবং আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ না করার পশ্চিমাদের ভন্ড নীতি (ইরাক, লিবিয়া এবং আফগানিস্তান এর উদহারণ), উদ্বাস্তুদের প্রতি তাদের বর্ণবাদী দ্বিমুখি নীতি, তাদের স্বার্থবাদী আচরণ এবং ব্যাপক অবিশ্বাসসহ বেশকিছু কারণে সক্রিয়ভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন এবং পশ্চিমাদের পাশে থাকতে অস্বীকার করেছে। নিরপেক্ষ দেশগুলো এখন তাদের জাতীর স্বার্থ সম্পর্কে একটি সঠিক বোঝাপড়া, পশ্চিমা চাপের মুখে নিজেদের অগ্রাধিকার দেওয়ার সংকল্প এবং স্বাধীনভাবে শাসনের প্রতি দৃঢ় ইচ্ছার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে, নিজের জনগণ এবং দেশকে এই বেপরোয়া বিধ্বংসী যুদ্ধে নিমজ্জিত করার পরিবর্তে, জেলেনস্কির উচিত আলোচনার টেবিলের বসা। এটি তার নিজের স্বার্থে, তার ভুক্তভোগী জনগণের জন্য এবং বিশ্বের ভালোর জন্য, যা এখন মুদ্রাস্ফীতি, জ¦ালানি ও খাদ্য ঘাটতির মতো বেশ কিছু বিপর্যয়ে ভুগছে এবং সামরিক শিল্পে তথা আরও যুদ্ধের লক্ষ্যে আগামী বছর কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত। এখন আলোচনার টেবিলে একটি যুক্তিসঙ্গত শান্তি পরিকল্পনা রয়েছে। তাই যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তি সম্ভবপর। সূত্র : মিডল ইস্ট আই।



 

Show all comments
  • AJOY KUMAR HALDER ১৭ জুলাই, ২০২২, ১:৪৫ এএম says : 0
    একটি রাষ্ট্রের জন্য সারা বিশ্বে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। ইউক্যানকে রাশিয়ার উপর সমর্পণ করা হোক। সকল শর্ত তুলে নেয়া হোক। এতে বিশ্ববাসী বাঁচবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • কবির ১৫ জুলাই, ২০২২, ৪:৫৮ পিএম says : 0
    রাশিয়া এই যুদ্ধ শীতকাল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে। এরপর ইউরোপকে শীতে মারবে। যেভাবে হিটলার মেরেছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • শফিক ১৫ জুলাই, ২০২২, ৪:৫৯ পিএম says : 0
    বরিস যুক্তরাষ্ট্রকে বাচাতে গিয়ে যুদ্ধের মধ্যে কিয়েভ সফরে গিয়েছিল, ফিরে দেখে তার গদি নাই। ম্যাক্রোর একই অবস্থা। একএক করে ইউরোপ বুঝবে মার্কিন পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তারা কী ভুল করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • শারমিন ১৫ জুলাই, ২০২২, ৫:০১ পিএম says : 0
    আমরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • তৈমুর আলম ১৫ জুলাই, ২০২২, ৫:০২ পিএম says : 0
    যুদ্ধের জন্য সকলেই কষ্টে আছে। যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞায় কবলে বিশ্বে নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে। এটা বন্ধ হওয়া জরুরী।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া-ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ