Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী শিক্ষার বদলে হিন্দুত্ববাদ শিক্ষা বরদাশত করা হবে না

গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদ জুড়ে দেয়া হবে। এটা মেনে নেয়া হবে না। গতকাল শনিবার ভারতের পানি আগ্রাসনসহ ১৫ দফা দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগ করেন ঠিক আছে। আমরা অন্য দল করি। আওয়ামী লীগ করলেও আপনারা তো মুসলমান। একজন মুসলমান হয়ে পাঠ্যবইয়ের এই হিন্দুত্ববাদ মেনে নিতে পারেন না। আপনারাও আসুন আমরা সবাই মিলে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। পাঠ্য সিলেবাসে ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়া হবে আর ছেলে-মেয়েরা নাস্তিক হবে এটা বরদাশত করা হবে না। দেশে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে আর সরকার কানে তুলো দিয়ে বসে থাকবে। তা হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, সরকার যদি এখনো কানে তুলো দিয়ে বসে থাকে তাহলে ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা জানি কিভাবে তুলে খুলতে হয়।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে। উজানের ৫৪টি নদীর সাথে বাংলাদেশের নদীগুলোর সম্পর্ক। যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন ভারত আমাদের শুকিয়ে মারে। যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন ডুবিয়ে মারে। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা ধিক্কার জানাই।

ভারতের পানি আগ্রাসন, কথিত গণকমিশনের ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষা সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্কোচন বন্ধ, ইসলাম দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুর রহমান, কে এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইশা ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি নূরুল করিম আকরাম ও ডা. শহিদুল ইসলাম।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান ভাল কথা। ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে গিয়ে জবাই হতে হবে এটা মানবাধিকার বিরোধী। আগে দেশের স্বার্থরক্ষা করেই ভারতের সাথে সম্পর্ক গড়তে হবে। পীর সাহেব বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। আর দেশের বন্যা প্লাবিত অসহায় মানুষের জন্য মাত্র ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এটা ভাবতেও অবাক লাগে। মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ইসলামী আন্দোলনের ১৫ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

পরে পীর সাহেবের নেতৃত্বে গণমিছিল রাজধানীর কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর মোড়ে পৌঁছলে পুলিশি বাধার মুখে মিছিলের কার্যক্রম মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী।

সমাবেশে প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ভারতের তাঁবেদার সরকার এ দেশের স্বাধীনতা চায় না। ভারত পানি দিয়ে আমাদের জনগণকে ডুবিয়ে মারছে। আর সরকার ভারতের মোদিকে আম-ইলিশ উপহার দিচ্ছে। আসলে সরকার দেশদরদী নয়। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা। মেগা প্রকল্প নিয়ে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে অর্থপাচারের ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। নৌকা ছিদ্র হয়ে গেছে। জনগণ আর নৌকায় উঠবে না। মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ফারাক্কা বাংলাদেশের জন্য মরণফাঁদ। যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন পানি বন্ধ করে দেয় ভারত। বন্যায় বাংলাদেশের মানুষ ডুবছে। বাংলাদেশের সরকার কিভাবে এত নির্লজ্জ হয়। কোনো প্রতিবাদ করছে না। তিনি বলেন, ভারতে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনতে পারেনি সরকার। কিন্তু নবীপ্রেমিকরা মহানবীর অবমাননায় ঘরে বসে থাকেনি। তারা নবীর ইজ্জত রক্ষায় রাজপথে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, ইসলামী শিক্ষা সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করতে হবে। মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, আগামী নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে জনগণ হতে দেবে না। দলের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা সঙ্কোচনের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এক ফোঁটা রক্ত থাকতে এ দেশকে নাস্তিক্যবাদের দেশ বানাতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, এ সরকারের বিদায় হবে অপমানজনক। কারণ তারা ইসলামকে অপমান করছে। মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, দেশে একের পর এক সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। ভারত আমাদের পানিতে ডুবিয়ে মারছে। কুলাঙ্গার নূপুর শর্মারা মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মমতা নিন্দা প্রস্তাব পাস করায় তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের সরকার একটুও নিন্দা জানাতে পারেনি। তিনি বলেন, পুনরায় ক্ষমতায় যেতে মুসলমানদের ভোটের প্রয়োজন নেই। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম দিয়ে ডিজিটাল কারচুপির পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, ভারত পানি ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করলে ঈমানী তাগিদে সারাদেশের ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসবে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির দরুন ভারত পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে। পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে। ভ্রান্ত শিক্ষাব্যবস্থা চালুর সাথে জড়িতে নাস্তিক মুরতাদদের সরিয়ে দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়ায় বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী তার পদে থাকতে পারেন না। সকল স্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তারা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণেরও জোর দাবি জানান।



 

Show all comments
  • Md Bablu ৩ জুলাই, ২০২২, ২:১৯ পিএম says : 0
    I would like to request please kindly keep the topics as the previous Islamic topics (unchanged) for all Muslim religion books in Bangladesh. For other religions, please make the books separately according to religion. আমি অনুরোধ করতে চাই অনুগ্রহ করে বাংলাদেশের সকল মুসলিম ধর্ম বইয়ের জন্য পূর্ববর্তী ইসলামিক বিষয় (অপরিবর্তিত) হিসাবে বিষয়গুলো রাখুন। অন্যান্য ধর্মের জন্য, দয়া করে ধর্ম অনুসারে আলাদাভাবে বই তৈরি করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৩ জুলাই, ২০২২, ৬:০৬ পিএম says : 0
    “দি গ্লোরিয়াস কুরান” অনুবাদক পিকথল একটি নিবন্ধে বলেছেন ইউরোপ যখন ইসলামের বিধিমালা গ্রহণ করল তারা হল ধরণীর প্রভু আর মুসলমানরা যখন সে বিধিমালা পরিত্যাগ করল, তারা হল ধরণীর দাসকুল [দাসে পরিণত হল]
    Total Reply(0) Reply
  • Dr. Mohammad Ziaul Hoque ৩ জুলাই, ২০২২, ৫:০৪ এএম says : 0
    বাংলাদেশকে ভারতীয় করণের অংশ হিসাবে সর্বত্ত হিন্দুত্ববাদ কায়েমের কর্মসূচি চলছে। ইসলামের কথা আছে এমন কোনো শিক্ষা বা প্রবন্দ স্কুল-কলেজের বইয়ে থাকবে না। জয় রাম, জয় হনুমান হবে এদেশের আগামী প্রজন্মের স্লোগান। শিক্ষামন্ত্রী আগামীর এইসব দীপ না দেখার ভান করছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Alisuzon Suzon ৩ জুলাই, ২০২২, ৫:২৯ এএম says : 0
    দেশ থেকে ইসলাম ধর্ম মুছে ফেলার জন্য গোপনে অনেক বড় ষড়যন্ত্র চলছে, তাই আমাদের সকলের উচিত সর্ব স্তর থেকে এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করা
    Total Reply(0) Reply
  • Md Masud Rana ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৪০ এএম says : 0
    আপনাদের পোস্ট গুলো সোসাল মিডিয়ায় শেয়ার অপশন থাকলে ভালো হতো
    Total Reply(0) Reply
  • Md Masud Rana ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৪৮ এএম says : 0
    আপনাদের পোস্ট গুলো সোসাল মিডিয়ায় শেয়ার অপশন থাকলে ভালো হতো
    Total Reply(0) Reply
  • Sazzad Chowdhury ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
    এটা যার নির্দেশে পরিবর্তন করা হয়েছে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Shorkar ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
    দ্রুত সংশোধন করুন আর না হয় এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Misba Ul Kabir ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
    প্রতিবাদ করা প্রত্যেকটা মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nazrul Islam ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৮ এএম says : 0
    ১০০% সঠিক, যাহার ইসলামকে বাদ দিতে চেষ্টা করতেছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির জোরধাবি জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৩ জুলাই, ২০২২, ৬:০৫ পিএম says : 0
    যারা আল্লাহর দীনের কথা বলে এবং প্রচার করে তাদেরকে যারা বাধা দেয় তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা'আলা কঠোরভাবে গালি দিয়েছেন সূরা আল-কলম 68 আয়াত 12 যে কল্যাণের কাজে বাধা দেয় সে সীমালংঘন করে সে পাপিষ্ট সূরা আল-কলম 68: আয়াত:13 “ দুষ্ট প্রকৃতির তার পর জারজ” কোরআন কারীমে তাদের অধিকাংশ মানুষ কথাটি যতবার এসেছে প্রায় প্রত্যেকবারই তা কোন খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যেমন:>>> • আকসার হুম কাফিরুন [অধিকাংশ মানুষ কাফের] • আকসার হুম ফাসিকুন [বেশিরভাগ লোক বিপথগামী] • আকসার হুম গাফেলুন [অধিকাংশ মানুষ উদাসীন] • আকসার হুম লায়শকুরুন [অধিকাংশ মানুষ অকৃতজ্ঞ] • আকসার হুম লা য়ালামুন [অধিকাংশ মানুষ জানে না]
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পীর সাহেব চরমোনাই


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ