Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনের বৃহত্তম তেলক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে নিল রাশিয়া

লুহানস্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর মুক্ত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২২, ১২:১০ এএম

অভিযান শেষ করার কোন সময়সীমা নেই : পুতিন

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের বিষয়ে ন্যাটোকে হুঁশিয়ারি মস্কোর
মানবিক কারণে স্নেক আইল্যান্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার
ভুয়া খবর ছড়াচ্ছেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব, নিন্দা রাশিয়ার
রাশিয়াকে হুমকি ও চীনকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখে ন্যাটো
ন্যাটোর নতুন কৌশলগত ধারণায় প্রতিবাদ চীনের
গতকাল রাশিয়ায় নিযুক্ত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক (এলপিআর) এর রাষ্ট্রদূত রডিয়ন মিরোশনিক বলেছেন, লিসিচানস্ক তেল শোধনাগারের পুরো অঞ্চলটি রাশিয়ান এবং এলপিআর সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। এদিকে, রুশ সেনার সহায়তায় লুহানস্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর মুক্ত করেছে এলপিআর যোদ্ধারা। এলপিআর পিপলস মিলিশিয়ার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রিভোলি নামের ওই শহরটিতে ঘাঁটি এবং অস্ত্রের ডিপো স্থাপণ করেছিল ইউক্রেনীয় সেনারা। তাদের বিতাড়িত করে সম্পূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এলপিআর এবং রাশিয়ান বাহিনী। ইউনিয়ন বাহিনী সেভারস্কি ডোনেৎস নদী পার হয়ে প্রিভোলির (লিসিচানস্কের একটি শহরতলি) নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। গত সপ্তাহে, রাশিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের প্রধান মিখাইল মিজিনসেভ বলেছিলেন যে, ইউক্রেনীয় সৈন্যরা প্রিভোলিতে একটি ঘাঁটি এবং অস্ত্রের ডিপো স্থাপণ করেছিল এবং বেসামরিক লোকদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহারের জন্য সেখানে আটকে রেখেছিল।

এদিকে, মিরোশনিক গতকাল তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের বৃহত্তম লিসিচানস্ক তেল শোধনাগার - ইউনিয়ন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। শোধনাগারের শিল্প অঞ্চলে বেশ কয়েক দিন ধরে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল এবং এখন ইউক্রেনের ইউনিটগুলিকে প্ল্যান্টের অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। জঙ্গিরা অস্ত্র ও রসদ ফেলে পালিয়ে গেছে।’ এছাড়াও, মিত্র বাহিনীর ইউনিটগুলি দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে শহরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়া লিসিচানস্ক শিল্প রাবার প্ল্যান্টের কাছে শিল্প অঞ্চল এবং আশেপাশের ভবনগুলো মুক্ত করার কাজ সম্পন্ন করেছে, রাষ্ট্রদূত বলেছেন। ‘লিসিচানস্ক শহরের ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ অব্যাহত রয়েছে,’ তিনি জোর দিয়েছিলেন। লিসিচানস্ক তেল শোধনাগার ছিল ইউক্রেনের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। কিয়েভের জন্য এটি হারানো একটি বড় ধাক্কা। বুধবার, মিরোশনিক জানিয়েছে যে, লিসিচানস্কের প্রায় অর্ধেক এলপিআর এবং রাশিয়ান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল।

অভিযান শেষ করার কোন সময়সীমা নেই : ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে এবং এটি শেষ করার জন্য কোনও সময়সীমা পূরণ করার প্রয়োজন নেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বুধবার আশগাবাতে তার সফর শেষে এ কথা বলেছেন। পুতিনের মতে, বিশেষ সামরিক অভিযানের লক্ষ্য হ’ল ডনবাসকে মুক্ত করা, সেখানে বসবাসকারী জনগণকে রক্ষা করা এবং ‘রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘কাজটি শান্ত ও ছন্দময়ভাবে এগোচ্ছে। সৈন্যরা অগ্রসর হচ্ছে এবং এ যুদ্ধ একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে একটি কাজ হিসেবে নির্ধারিত প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে।’ বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এর লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুতিন বলেন, ‘কিছুই বদলায়নি। ২৪ ফেব্রæয়ারি ভোরবেলা, আমি সরাসরি এবং প্রকাশ্যে পুরো দেশ ও সারা বিশ্বের কাছে অভিযানের বিষয়ে বলেছিলাম। আমার যোগ করার কিছু নেই। কিছুই পরিবর্তন হয়নি।’

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের বিষয়ে ন্যাটোকে হুঁশিয়ারি : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ন্যাটো যদি সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডে অবকাঠামো তৈরি করে তাহলে রাশিয়া ‘উপযুক্ত’ জবাব দেবে। নর্ডিক দেশগুলো পশ্চিমা জোটে যোগদানের পথ প্রশস্ত করেছে এমন একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরে এমন কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। রাশিয়ার বার্তা সংস্থাগুলি পুতিনকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে, তিনি হেলসিঙ্কি এবং স্টকহোমের সাথে মস্কোর সম্পর্কের মধ্যে ‘উত্তেজনা দেখা দেবে’ তা উড়িয়ে দিতে পারেন না। তিনি বলেছিলেন যে, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের সাথে তার ‘ইউক্রেনের মতো সমস্যা’ নেই। তবে এ দেশগুলোতে ন্যাটোর সামরিক অবকাঠামো মোতায়েন করা হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হবেন।
মানবিক রাশিয়া, স্নেক আইল্যান্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার : রাশিয়ান সেনাবাহিনী স্নেক আইল্যান্ড থেকে তাদের গ্যারিসন সরিয়ে নিয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বার্তা দেয়া হয়েছে যে, রাশিয়া ইউক্রেন থেকে কৃষি পণ্য রপ্তানির জন্য একটি মানবিক করিডোর তৈরিতে জাতিসংঘের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় না, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ গতকাল বলেছেন। ‘এই সিদ্ধান্ত কিয়েভকে আসন্ন খাদ্য সঙ্কটের বিষয়ে প্ররোচিত করতে দেবে না বা যুক্তি দেবে না যে কৃষ্ণ সাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে রাশিয়ার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কারণে শস্য রপ্তানি করা অসম্ভব,’ তিনি যোগ করেছেন। ‘বল এখন কিয়েভের কোর্টে। আজ পর্যন্ত ইউক্রেন তার উপক‚লের কাছাকাছি কৃষ্ণ সাগর, সমুদ্রবন্দর এলাকা থেকে মাইন অপসারণ করার জন্য কিছুই করেনি,’ কোনাশেনকভ বলেছেন।

ভুয়া খবর ছড়াচ্ছেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব, নিন্দা রাশিয়ার : মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং ভুয়া খবর ছড়ানোয় যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেসকে নিন্দা জানিয়েছেন রুশ ক‚টনীতিক মারিয়া জাখারোভা। সম্প্রতি বেন ওয়ালেস পুতিন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাখারোভা সহ রুশ কর্মকর্তাদের সম্পর্কে বেশ কয়েকটি আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। জবাবে জাখারোভা বলেন, ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ালেস, আপনি যদি পুরো বিশ্বের কাছে সম্প‚র্ণ মিথ্যাবাদী হিসাবে আবির্ভ‚ত হতে না চান, তাহলে অন্তত একটি উদাহরণ উদ্ধৃত করুন কিভাবে আমি প্রতি সপ্তাহে ‘সবাইকে পরমাণু হামলার হুমকি দিচ্ছি’। তিনি বলেন, আপনি অবশ্যই এমন কোন উদাহারণ বা উদ্ধৃতি খুঁজে পাবেন না। আমি এখনই আপনার বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া এবং জাল খবর ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করছি,’ বুধবার ক‚টনীতিক তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন। এর আগে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ওয়ালেসের এ মন্তব্যগুলিকে ঘৃণ্য বলে উল্লেখ করে বলেছেন যে, এ ধরনের আচরণ যুক্তরাজ্যের উপর ছায়া ফেলে।

রাশিয়াকে হুমকি ও চীনকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখে ন্যাটো : ন্যাটো রাশিয়াকে তার নিরাপত্তার জন্য ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সরাসরি হুমকি’ বলে মনে করে। মাদ্রিদে শীর্ষ সম্মেলনের সময় গৃহীত কৌশলগত ধারণা অনুসারে মস্কোকে ন্যাটো অংশীদারদের থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বøকটি চীনকে মোকাবেলা করতে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং সোভিয়েত-পরবর্তী অঞ্চলে তার অংশীদারিত্ব প্রসারিত এবং নিজস্ব প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে চায়। বøকের সম্প্রসারণকে ‘ঐতিহাসিক সাফল্য’ বলা হয়।
রাশিয়া ও চীনকে নিয়ে নতুন কৌশলগত ধারণার মূল বিষয়গুলি হচ্ছে- ন্যাটো রাশিয়াকে জোটের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সরাসরি হুমকি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সংস্থাটি আর রাশিয়াকে অংশীদার হিসাবে দেখতে চায় না, তবে এটি যোগাযোগ চ্যানেল খোলা রাখতে প্রস্তুত। ন্যাটোও দাবি করে যে তারা রাশিয়ার সাথে সংঘর্ষের চেষ্টা করে না এবং তাদের জন্য হুমকি তৈরি করে না। ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক পরিবর্তন হতে পারে, তবে এটি মস্কোর উপর নির্ভর করে বলে জোটটি বিশ্বাস করে। ন্যাটো বিশ্বাস করে যে রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে অংশীদারিত্বের গভীরতা জোটের মূল্যবোধ এবং স্বার্থ লঙ্ঘন করে। জোটের মতে, চীন বিশ্বব্যাপী সরবরাহ এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাকে দুর্বল করতে চায়।

ন্যাটোর নতুন কৌশলগত ধারণায় প্রতিবাদ চীনের : চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান গতকাল বলেছেন, ন্যাটোর নতুন কৌশলগত ধারণা নিয়ে চীন গুরুতর উদ্বেগ ও দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়েছে। ‘তথাকথিত ন্যাটোর নতুন কৌশলগত ধারণা তথ্য উপেক্ষা করে, সত্যকে বিকৃত করে, চীনের বৈদেশিক নীতিকে অপমান করে, চীনের স্বাভাবিক সামরিক উন্নয়ন এবং তার জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি দেয়, দ্ব›দ্ব ও সংঘাতকে উন্নীত করে, এটি স্নায়ুযুদ্ধে ভরা মানসিকতা এবং আদর্শগত কুসংস্কার,’ তিনি একটি নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন। ‘চীন এ বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ এবং দৃঢ় প্রতিবাদ জানায়,’ ক‚টনীতিক উল্লেখ করেছেন। সূত্র : তাস, রয়টার্স, আল-জাজিরা, ইউকে মেট্রো।



 

Show all comments
  • ইমরান ১ জুলাই, ২০২২, ৪:১৬ এএম says : 0
    এ যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ১ জুলাই, ২০২২, ৪:১৮ এএম says : 0
    ইউক্রেন ক্ষমতাধর দেশগুলোর কথায় নাচতেছে। তারা তাদের ইচ্ছার কারণেই ইউক্রেনকে দিয়ে নাচাচ্ছে। ফলে ইউক্রেন নিচের ক্ষতিটা বুঝতেছে না।
    Total Reply(0) Reply
  • আলিফ ১ জুলাই, ২০২২, ৪:২১ এএম says : 0
    ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করলে তাদের জন্যই ভালো
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ১ জুলাই, ২০২২, ৪:২৬ এএম says : 0
    বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর উচিত এ যুদ্ধে উষ্কানি না দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • আলিফ ১ জুলাই, ২০২২, ৪:২৩ এএম says : 0
    রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় এক প্রভাব পড়েছে। কাজেই তাদের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্বের অর্থনীতি আরো খারাপ হবে। বিশ্বের জন্য এ দুই দেশের যুদ্ধ বন্ধ করাই ভালো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুতিন

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ