শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
বছর দশেক আগের কথা, আরিচা ঘাটে বাদাম চিবিয়ে সময় পার করছিল হাসান। বড় ভাই ফরিদ সাহেব চাকরির সুবাদে ঢাকা থাকেন আর বড় ভাইয়ের সুবাদে হাসান কে মাঝেমধ্যে ঢাকা আসতে হয়। সবটাই ভালো ছিল শুধু পদ্মা পারে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা ছিল দারুণ কষ্টের। একটা সেতু হলে মন্দ হতো না,কিন্ত আবার ভাবনা দোলা দেয় এত বড় নদী, বর্ষায় পদ্মার উত্তাল ঢেউৃ.। হবেনা।
ভাবনার সময় রিতার কলে মোবাইল বেজে ওঠে।
রিতা ম্যাডাম খুব সুন্দরী মেয়ে। শৈশবে পরিচয়। হাসানের সে আম কুড়ানো বন্ধু একটু বড় হতেই হয়ে যায় ভালোবাসার মানুষ। দিনে দিনে ভালোবাসা যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়, ঠিক সে সময়ে রিতার বাবা মফস্বল এলাকা ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে ঢাকা পাড়ি জমান। যৌক্তিক কারণ বলতে একটা কথাই হাসান জেনেছে, মেয়ের জন্য সন্মান বিসর্জন, সেটা হবেনা।
তারপর থেকে হাসানের জীবনে কালো অধ্যায় শুরু হলেও রিতা আপন গতিতে পথ পেরিয়েছে।
বড় ভাইয়ের বাসায় যতবারই গিয়েছে রিতাকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছে, পায়নি। মাঝেমধ্যে ঢাকা শহরের রাতের আকাশ দেখে এক দীর্ঘশ্বাস বুকে পুষে ভাবত, রিতার মাথার উপরের আকাশ টা কোথায়? না, পায়নি।
পাচ বছর পর রিতা একবার বেড়াতে এসে খুব সংগোপনে হাসানের সাথে দেখা করে। হাসানের কাছে সে ছিল এক স্বপ্ন।
-রিতা তুমি?
-হ্যাঁ, অনেক লুকিয়ে এসেছি।
-রিতা তোমাকে কতটা ভালোবাসি যদি বুঝতেৃ
হাসানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রিতা বলে, দেখ হাসান আমরা এখন শুধু বন্ধু।
-বন্ধু!
- হ্যাঁ।
-এর বাইরে আর কিছু আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
হাসান কষ্ট চাপিয়ে ফিসফাস করে শুধু বলে, বেশ।
তারপর থেকে রিতার সাথে মোবাইলে মাঝেমধ্যে কথা হয়। ঢাকা গেলে রিতা যদি অনুগ্রহ করে একটু দেখা হয়।
-হ্যালো কে?
-কে মানে!
-আমি আরিচা ঘাটে তিনঘণ্টা গাড়ির ভেতর বসে আছি। বাদাম খাচ্ছি, ঠিক চিনতে পারছি না।
-বাদাম খেলে বুঝি চেনা যায় না।
-আসলে খেয়াল করিনি। রিসিভ বাটন চেপেই কথা বলছি। কে হারুন ভাই?
রিতা উত্তেজিত হয়। এই ব্যাটা গাধা আমি রিতাৃ‹
মেয়েটা সবে অনার্সে ক্লাস শুরু করেছে। ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী। এই ক্লাসের ছাত্রীরা সম্ভবত অহংকারী টাইপ হয়। এটা হাসানের ধারণা।
-ও, রিতা ম্যাডাম! কেমন আছেন?
-আমার সাথে মশকরা হচ্ছেৃ
-কী যে বলেন। আপনার সাথে মশকরা করার দুঃসাহস আমার নেই।
মেয়েটা গম্ভীর কন্ঠে বলে, হুম।
-ম্যাডাম আমার কাছে এখন কী মনে হচ্ছে জানেন?
-কী?
-আমি এখন এয়ারপোর্টে আছি। যাত্রাবিরতি চলছে। আপনি কী কখনো দুবাই বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করেছেন?
- ইস উনি এখন বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি তে আছেন। যত্তসবৃ.
-রিতা একটু মজা করলাম, তোমার কথা আমি কখনো ভুলতে পারিনা।
-ভুলতে হবেনা, সামনে আমার বিয়ে।
-মানে!হাসানের বুকের ভেতর ভাঙ্গাচোরা চলে।সেগুলো বোঝার সাধ্য রিতার কোনদিন হয়নি।
রিতা হাসির সুন্দর শব্দ ছড়িয়ে বলে, বিয়ে মানে বিয়ে।সহজ কথা ই তো।
-হুম।কবে?
-জুলাই মাসের তিন তারিখ।
হাসান সুবোধ বালকের মতো শুধু ঘাড় নাড়ে। ‘আচ্ছা।’ মোবাইলটা কেটে দেয়।তারপর আর কখনো রিতার কলে মোবাইলটা বেজে ওঠেনি।স্বপ্ন গুলো বুকের ভেতর মরে, পচে, গলে।জীবন নামের সময়ের স্তুপ থেকে ঝরে যায় কতগুলো বছর।হাসান একটা চাকরিতে যোগদান করে। ব্যস্ততা হয়তো স্মৃতি গুলো চাপা দিয়ে রাখে।চাপা স্মৃতি নিয়ে হাসানের পথচলা।
দশ বছর পর হাসান দাপ্তরিক কাজে ঢাকা যাচ্ছে।পদ্মা সেতুর কাছে আসতেই রিতার কথা মনে পড়ে।সেই দশ বছর আগের কথা।ঘাটে বসে ফেরীর প্রতীক্ষা।তার জীবন থেকে রিতা নামের মেয়েটা হারিয়ে গেলেও বুকের কোথাও লুকিয়ে থেকে কিছুদিন পরপর জানান দেয় সে আছে। পদ্মার উত্তাল নদীর উপর আজ দাঁড়িয়ে আছে সাড়ে ছয় কিলোমিটারের এক বিরাট সেতু।শত বিপত্তি মাড়িয়ে আজ পদ্মার বুকে যে সেতু তা হাজরো মানুষকে বিড়ম্বনার হাত থেকে মুক্তি দেবে।আজ পদ্মা পাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হবে না। পদ্মার ওপর দিয়ে বাস ট্রেনে মুহূর্তে পেরিয়ে যাবে মানুষ! এপারে গাড়ি দাঁড়াতেই হাসান গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।প্রতিদিন পদ্মা সেতু দেখতে অগনিত মানুষের ভীড়।আাজ হাসান সে মানুষ ও দলের সাক্ষী হবে। পড়ন্ত বিকাল।হালকা বাকানো সেতু ধরে সামনে এগিয়ে চলে।নিচে পদ্মা তার ঢেউ ও স্রোত নিয়ে একেবেকে চলে গেছে দূর বহুদূরে, অনেকটা রিতার মতো।মোহময় দৃশ্য তো বটেই।সুন্দর দেখে সুন্দর মনে পড়ে।ঠিক মাঝখানে গিয়ে হাসানের মনে হয় সে যেন স্বপ্নের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হয়।সময়ের ব্যবধানে একটি স্বপ্ন পদ্মার গভীর জলে হারিয়ে গেলেও আরেক স্বপ্ন নদীর ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। একটি সেতু, একটি স্বপ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।