বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে বন্যা ছড়াচ্ছে মধ্যাঞ্চলে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মধ্যাঞ্চলের শরীয়তপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ীতে বন্যা দেখা দিতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া বলেন, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক প‚র্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানের বিভিন্ন অংশে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা কম। বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার বন্যা পরিস্থিতি সামান্য অবনতি হতে পারে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী। আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আটটি নদীর পানি ১৮টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এখন দেশের ১২টি জেলা বন্যা আক্রান্ত। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চারটি, যমুনা নদীর পানি পাঁচটি, সুরমা নদীর পানি তিনটি ও কুশিয়ারা নদীর পানি দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফরিদপুর থেকে জানান, ফরিদপুরে পদ্মার পানি বেড়েই চলছে। সেইসাথে বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতাও। ফরিদপুর সদর থানার ডিক্রীরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এবং নর্থচ্যানেলের গোলডাঙী এলাকায়, চরভদ্রাসন উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্ল্যা শিকদারের ডাঙ্গী, জাকের হুরার পদ্মার পার খেয়াঘাট এলাকায় কম বেশি ভাঙন চলছে। কামারখালী বীর শ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ ডিগ্রী কলেজের পশ্চিম পাড় মধুমতি সংলগ্ন এলাকাতেও পানি বৃদ্বির কারণে ভাঙনের আতঙ্কে ভুগছে এলাকাবাসী। ফরিদপুর সদর থানার নর্থচ্যানেল এলাকার কবিরপুর খেয়াঘাট এলাকা, ফাকেরের হাট এলাকাতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে, জেলার পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। এতে প্লাবিত হতে শুরু করছে বহু ফসলি জমি। গতকাল পদ্মার পানি বীপদসীমার ১ মিটার নিচে প্রবাহিত ছিল। ফরিদপুর সদর থানার পদ্মার প্রধান মোহনা কুমার নদীতে এবং গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্বি পেয়েছে বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেলো হরিরামপুরের আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়।
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, প্রবল স্রোতের পদ্মায় বিলীন হয়ে গেলো মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের একমাত্র বিদ্যাপীঠ আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। গতকাল নবনির্মিত চারতলা ভবন পদ্মায় ধসে গেছে বলে জানা যায়। পদ্মা যমুনা অববাহিকায় অব্যহত পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চরাঞ্চল আজিমনগর ইউনিয়নের পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। এতে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে বিদ্যালয়টি। জানা যায়, গত রোববার মানিকগঞ্জ জেলা সহকারী শিক্ষা প্রকৌশলী মো. হাকিমুল হাসান সিদ্দিকী, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডিই মো. আবুল কালাম আজাদ ও হরিরামপুর উপজেলা শিক্ষা সহকারি প্রকৌশলী মো. সবুজ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে রএকটি প্রতিবেদন দেয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন জানান, ‘গত রোববার জেলা সমন্বয় সভায় বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলে আমরা ওই দিন বিকেলেই ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করি। এই ম‚হুর্তে বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলেও বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব নয়, এমনটি উল্লেখ করে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা সহকারি শিক্ষা প্রকৌশলী মো. হাকিমুল হাসান সিদ্দিকী মুঠোফোনে জানান, গত বছর বর্ষা মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিবেদনের ওপরই বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের অসম্পূর্ণ কাজ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও গত ১৯ জুন পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনটি নিলামের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু তার আগেই ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, মরা পদ্মায় একটু একটু করে পানি বাড়ছে। নদীতে ঘোলা পানির স্রোত। শুকনো মওসুমে দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর ক্ষীন স্রোত আর পানি আস্তে আস্তে উত্তর পাড়ে জমছে। উজানের ঢল আর আষাঢ়ের বৃষ্টিতে পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি যমুনার সাথে মিশে মেঘনায় যায়। তিস্তা নদীর কারনে রংপুর অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়ায় যমুনারও পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানেও বন্যা বাড়ছে। যমুনার পানির উচ্চতা বেশী থাকায় পদ্মার পানি ধীরে নামছে। ফলে রাজশাহীতে নদী বেশ খানিকটা পানি দেখা যাচ্ছে।
পদ্মার পানি বাড়ার প্রভাব পড়েছে চারঘাট, বাঘা উপজেলার পদ্মা পাড়ের হাজারো মানুষের কপাল দুশ্চিন্তার ভাঁজ। নাব্যতা কমে যাওয়ার কারনে পানি ধারন ক্ষমতা কমেছে। একটু পানি পেলেই পদ্মাকে ভরা ভরা দেখায়। সেই পানি ছুটতে গিয়ে দুপাড় ভাঙ্গে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারঘাটের ইউসুফপুর ও সদর ইউনিয়নের চারটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। পিরোজপুর, বাউসা, চন্দন শহর ভাংছে। বিলীন হচ্ছে নদী তীরবর্তী ঘরবাড়ি ফসলেরক্ষেত সাজানো সংসার। গোদাগাড়িতে নদী তীরবর্তী এলাকা ভাঙন চলছে।
চাটমোহর (পাবনা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পাবনার চাটমোহরে বড়াল নদীর বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। কয়েক দিনের বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গুমানী ও বড়াল নদে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বড়ালে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার পানির প্রবল স্রোতে চাটমোহর উপজেলার নতুন বাজার খেয়াঘাটের ব্রিজ নির্মাণকালীন চলাচলের জন্য তৈরি বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্রবল স্রােতের সৃষ্টি হয়েছে বড়াল নদে। সকাল ১১টার দিকে বাঁধটি ভেঙে যায়। ফলে চাটমোহর,ও বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন জনপদে পানি ঢুকছে। নিচু এলাকায় কৃষকের পাট খেত তলিয়ে গেছে। এদিকে উপজেলার হান্ডিয়াল,নিমাইচড়া,ছাইকোলা ও হরিপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে রাস্তাঘাট আর ফসলি জমি। নিচু এলাকার বাড়ি ঘরেও পানি প্রবেশ করছে। চাটমোহরের মানুষের মাঝে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।