মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাশিয়াকে জব্দ করার লক্ষ্যে পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের মিত্ররা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যার প্রত্যাক্ষ প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বেই। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেও সম্প্রতি বলেছিলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় পশ্চিমাদেরই বেশি ভুগতে হবে। তবে এর কারণে শুধু পশ্চিমারাই নয়, ভুগছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো নিম্ন আয়ের দেশগুলোও।
এফএও এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা শাখার দ্বারা গত সপ্তাহে প্রকাশিত হাঙ্গার হটস্পট রিপোর্ট অনুসারে, আগামী মাসে প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ডব্লিউএফপির জরুরি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ব্রায়ান ল্যান্ডার বলেন, ‘এরা এমন লাখ লাখ মানুষ যারা আক্ষরিক অর্থেই জানে না তাদের পরবর্তী খাবার কোথা থেকে আসছে।’ জলবায়ু পরিবর্তন একমাত্র অবদানকারী কারণ নয়, তিনি উল্লেখ করেছেন। করোনাভাইরাস মহামারীর সাথে যুক্ত সাপ্লাই চেইন সমস্যা এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা জ্বালানি, সার, শিপিং এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণের খরচ বাড়িয়েছে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বিশ্বের দুটি বৃহত্তম গম উৎপাদক থেকে রপ্তানিকেও ব্যাহত করেছে, শস্যের দাম বৃদ্ধি করেছে যা মানুষের দ্বারা খাওয়া সমস্ত ক্যালোরির এক-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করে। ব্ল্যাক সি শিপিং অবরুদ্ধ এবং ইউক্রেনীয় বন্দরগুলি মাইনে ভর্তি থাকায়, লাখ লাখ টন শস্য এ অঞ্চলে আটকে আছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারনে সেগুলো বাইরে আসতে পারছে না। গত সপ্তাহে তুরস্কে আলোচনায়, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন যা বন্দর অবরোধ কমানোর জন্য শিপিং করিডোর তৈরি করবে এবং রাশিয়াকে শস্য ও সার রপ্তানি করার অনুমতি দেবে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাশিয়া এ সুযোগে সমুদ্র পথে আক্রমন করতে পারে। ফলে একটি চুক্তির সম্ভাবনা অধরা রয়ে গেছে।
বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিপর্যয় নেমে এসেছে। পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই যেন হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য মুদ্রাস্ফীতির চাপ থাকবে। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডার মতো দেশগুলোও মুদ্রাস্ফীতির কারণে সংকটে পড়েছে। আমেরিকা যে অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে এখনই তা থেকে রেহাই মিলছে না। দেশটিতে খাদ্য ও পেট্রলের দামে ঊর্ধ্বগতি জনগণের পকেট খালি করছে।
গত এপ্রিলে দেশটিতে ভোগ্যপণ্যের দাম এক বছর আগের তুলনায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি ছিল। এমনকি খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাদে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। শক্তিধর অর্থনীতির এই দেশটিতে বর্তমানে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে উঠেছে, যা ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ। অপরদিকে যুক্তরাজ্যে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ শতাংশে উঠেছে, যা গত ৪০ বছরে সর্বোচ্চ। এদিকে জার্মানিতে মুদ্রাস্ফীতি ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। কানাডায় ৬ দশমিক ৮, সুইডেনে ৬ দশমিক ৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫ দশমিক ৪, ফ্রান্সে ৫ দশমিক ২, সুইজারল্যান্ডে ২ দশমিক ৯ এবং জাপানে মুদ্রাস্ফীতি ২ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব ও চীনের শূন্য-কোভিড নীতি যতদিন আছে ততদিন সরবরাহ সঙ্কট আরও বাড়বে। আমেরিকান শ্রম বাজারও বেশ উত্তপ্ত। নিউজিল্যান্ডে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ যা ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অপরদিকে তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতি ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে যা গত ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানে ১৩ দশমিক ৮, ভারতে ৭ দশমিক ৭৯, নেপালে ৭ দশমিক ২৮, বাংলাদেশে ৬ দশমিক ২৯, ভুটানে ৫ দশমিক ৫৭, আফগানিস্তানে ১ দশমিক ৫৬ ও মালদ্বীপের মুদ্রাস্ফীতি ১ দশমিক ২ শতাংশ। সিএনবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতি এখন ভেনেজুয়েলায়। সেখানে মুদ্রাস্ফীতির হার ২২২ দশমিক ৩০ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সুদানে মুদ্রাস্ফীতি ২২০ দশমিক ৭০ শতাংশ। অপরদিকে লেবাননে ২০৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, সিরিয়ায় ১৩৯ শতাংশ, জিম্বাবুয়েতে ১৩১ দশমিক ৭ শতাংশ, আর্জেন্টিনায় ৫৮ শতাংশ, ইরানে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ইথিওপিয়ায় ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
রাশিয়া ইউরোপের প্রাকৃতিক গ্যাসের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় সারা বিশ্বেই তেল ও গ্যাসের মূল্য বেড়ে চলেছে। যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে বিশ্বের সল্প আয়ের দেশগুলোতে। পাকিস্তানে জ¦ালানি সঙ্কটের কারণে ১২ ঘন্টা করে লোড-শেডিং হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমার সহ অন্যান্য নগদ সঙ্কটে থাকা আমদানিকারকদের জন্যও পাকিস্তানের দুর্দশা খারাপ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইউটিলিটি সম্প্রতি স্পট মার্কেট থেকে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলএনজি চালান সংগ্রহ করেছে গ্রিডগুলিকে সচল রাখতে এবং শিল্পগুলি মজুত রাখার জন্য, যখন মিয়ানমার দাম বৃদ্ধির কারণে গত বছর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউরোপের ব্যাপক পরিবর্তন ভারত এবং ঘানার মতো অন্যান্য দেশগুলিকে অতি-ঠাণ্ডা জ্বালানির উপর নির্ভরতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে প্ররোচিত করতে পারে। একটি সাম্প্রতিক নোটে, শিল্প পরামর্শক এফজিই-এর চেয়ারম্যান ফেরিদুন ফেশারকি বিশ্বজুড়ে ‘উচ্চ মূল্য, অর্থনৈতিক ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা’ তৈরি করার জন্য ইউরোপীয় শক্তি নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘ইউরোপের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক যে তারা তাদের সীমানার মধ্যে কী চায়,’ তিনি লিখেছেন, ‘কিন্তু বিদেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বে জগাখিচুড়ি রপ্তানি করা অন্যায্য এবং অযৌক্তিক।’ সূত্র : দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ব্লুমবার্গ, দ্য ইকোনমিস্ট, ওয়াশিংটন পোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।