পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আজকের পশ্চিমা বিশ্ব যে যুগকে নিজেদের জন্য মধ্যযুগ বা অন্ধকার যুগ বলে ঘোষণা করে সে যুগটি ছিল ইসলামের স্বর্ণযুগ। প্রচীন গ্রীক ও রোমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের আলোকচ্ছটা থেকে তখন পশ্চিমারা ছিল বিচ্ছিন্ন। ইসলামের দিগি¦জয়ী যোদ্ধারা মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও আন্দালুসিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর দেশে দেশে জ্ঞানবিজ্ঞানের যে বিকাশ ঘটেছিল তাতে ইউরোপের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক দর্শন ও মহাকাব্যগুলো পুনরুজ্জীবন লাভ করেছিল। মুসলমান বাইতুল হিকমা ও মুসলমান জ্ঞান-সাধক ও অনুবাদকরা প্রাচীন গ্রীসের প্রায় হারিয়ে যাওয়া সৃষ্টিকর্মগুলোকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করে আরব বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তা ইংরেজিতে অনুদিত হয়ে সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টেটলকে নতুনভাবে চিনতে ও বুঝতে শিখেছিল ইউরোপ। একইভাবে মুসলমানদের ভারত বিজয়ের আগে ইউরোপে ভারত সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। বিশেষত খাওয়ারিজমের গণিতবিদ, লেখক আবু রায়হান আল বেরুনির লেখা কিতাবুল হিন্দ বা ভারতততত্ত¡ লেখার আগে ভারত নিয়ে এমন প্রামাণ্য অ্যাকাডেমিক গ্রন্থ আর কেউ লেখেননি। হাজার বছর আগে লেখা আল বেরুনির ইন্ডোলজি বা ভারতত্ত¡ এখনো বিশ্বের দেশে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য ও এ বিষয়ে ও গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাচীনতম আকরগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত। ভারতের অধিবাসিদের সম্পর্কে নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে সঠিক চিত্র তুলে ধরতে তিনি অনেক বছর ধরে ভারতে বসবাস করে ভারতের নানা স্থানে ঘুরে বেরিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ও ভুয়োদর্শনের আলোকে এই গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। একারণেই হাজার বছর পরেও ভারত মানস সম্পর্কে লিখতে গেলে আল বেরুনির ভারততত্ত¡ প্রাসঙ্গিক। আল বেরুনির লেখা মুসলমান শাসকদের জন্য ভারতকে শত শত বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে শাসন করতে নি:সন্দেহে সহায়ক হয়েছিল। যদিও আলবেবেরুনি যে ভারতের কথা লিখেছেন, তা হিন্দু-মুসলমানের খÐিত ভারত নয়। তখনো ভারত একক বৃহত্তম ভারতবর্ষ হয়ে উঠেনি। সেই মহাভারতের মিথ বাদ দিলে প্রামান্য ইতিহাসে মুসলমানরাই ঐক্যবদ্ধ ভারত সা¤্রাজ্যের জন্মদাতা। অতএব প্রাচ্য ও প্রাতিচ্যের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি গত তিন হাজার বছরের ইতিহাসে ইহুদিদের স্বর্ণযুগ বলে কথিত সময়টিও ছিল ইউরোপে মুসলমানদের শাসনামলে। খ্রষ্টীয় দশম শতাব্দীতে স্পেনে মুসলমান শাসনামলে আইবেরিয়ান পেনিনসুলায় সেখানকার ইহুদিরা সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ভোগ করেছিল। এর আগে গ্রীক, রোমান ক্যাথলিকসহ প্রায় প্রতিটি সা¤্রাজ্য ও রাজনৈতিক শক্তির ইহুদিরা দ্বারা চরম নির্যাতন ও বহিষ্কারের শিকার হয়েছিল। নাৎসি জার্মানিতে ইহুদি নিবর্তন তারই সাম্প্রতিক উদাহরণ।
কোনো সা¤্রাজ্যবাদী রাজশক্তির পক্ষে মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাসকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এ কারণে ধণতান্ত্রিক জায়নবাদী সা¤্রাজ্যবাদের নীল নকশায় ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতি একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে বাস্তবায়ন চলছে। পশ্চিমা জায়নবাদী থিঙ্কট্যাঙ্ক ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সদাতৎপর রয়েছে। মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করে ইরাক-আফগানিস্তানে সামরিক আগ্রাসন, দখলবাজি, দেশে দেশে প্রক্সি ওয়ার, মার্সেনারি যুদ্ধ এবং ফল্স ফ্লাগ অপারেশন চালিয়ে তার দায় মুসলমান চরমপন্থীদের উপর চাপিয়ে ইসলামোফোবিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনো তা চলছে। কিন্তু এতে তেমন কোনো লাভ হয়নি। সবখানেই পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদ এবং তাদের তল্পিবাহক পরাজিত হচ্ছে। ইসলামের গৌরবময় ঐতিহ্যকে কূটচালে কালিমালিপ্ত করার মিশন ব্যর্থ হলেও ভারতে ইসলাম নির্মূলের সবচেয়ে ঘৃণ্য তৎপরতা চলছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির কখনোই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল না। বৃটিশ আমলে এবং স্বাধীন ভারতেও প্রিন্সলি স্টেট কাশ্মিরের স্বাধীন সত্তা ও স্বাতন্ত্র্যের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার শর্তেই ভারতীয় ইউনিয়নের অধীনে সহাবস্থানে কাশ্মিরিরা রাজি হয়েছিল। শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে ভারতের বিজেপি সরকার ভারতের সংবিধানের কয়েকটি ধারা পরিবর্তন করে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা রহিত করে কেন্দ্রীয় শাসনের নামে মূলত সেখানে সামরিক শাসন চালানো হচ্ছে। ভারতের মুসলমানরা শুধু কাশ্মিরের গÐিতেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্তত ২৫ কোটি মুসলমান নাগরিক রয়েছে। যারা শত শত বছরের ভারতীয় উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। প্রাচীন যুগের ইহুদি এক্সোডাস, ভারত থেকে বৌদ্ধদের বিতাড়নের যে ইতিহাস রয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় এখন মুসলমানদের ভারত থেকে বিতাড়িত করার এজেন্ডা নিয়ে হিন্দুত্ববাদী মহাভারত গড়ার রাজনৈতিক আস্ফালন দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া তারই টেস্ট কেস কিনা তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের অবকাশ আছে।
নির্যাতিত রোহিঙ্গারা গত ৬০ বছর ধরে বিশ্বের অনেক দেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও সাগর পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়াবা সউদি আরবে যেমন লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে, কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান ভারতেও আশ্রয় নিয়েছিল। দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভারে ন্যুজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের অনন্য উচ্চতার দাবিদার ভারতীয়রা ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা শত শত বছর ধরে আরাকান বা রাখাইনে বসবাস করলেও বার্মিজ সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের বার্মিজ নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে চায়নি। অথচ স্বাধীনত্তোর বার্মার রাজনীতিতে রাখাইনের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। তারা নির্বাচন করে পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রেখেছে। ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টার মধ্য দিয়ে তারা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দাবির প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। সে সময় বিশ্বসম্প্রদায়ের আহŸানে সাড়া দিয়ে মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার নিয়ে যে সব আন্তর্জাতিক কনভেনশন হয়েছে সেখানে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে ভারত। ইতিমধ্যে ভারতের বিজেপি সরকারও মিয়ানমারের সামরিক সরকারের অনুকরণে নতুন নাগরিকত্ব আইন পাশ করেছে। ভারতের কোটি কোটি মুসলমানকে নাগরিকত্বহীন অথবা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিনত করা এবং বাংলাদেশকে চাপে রাখাই সম্ভবত এই আইনের মূল লক্ষ্য। আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষি মুসলমানদের নিয়ে বিজেপি নেতাদের নানা কথাবার্তা থেকে সে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। একদিকে তারা বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্য বৈষম্য ও অবৈধ কর্মসংস্থানসহ নানাভাবে প্রতিবছর শত শত কোটি ডলার ভারতে নিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিজেপি নেতারা প্রায়শ বাংলাদেশ নিয়ে উস্কানিমূলক ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে চলেছে। এসব নিয়ে আমাদের সরকার বা রাজনৈতিক নেতাদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা কখনো বিজেপি নেতাদের অশালীন-ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্যের জোরালো প্রতিবাদ করেনি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকেও তেমন কোনো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। তবে বাংলাদেশের নদনদী ও পানি সম্পদের উপর ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদ করে ফেইজবুকে একটি স্টাটাস লেখার জেরে বুয়েটের মেধাবি শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রাতের বেলা নিজ কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হওয়ার সত্বেও ভারতের মুসলিম বিদ্বেষী ভ’মিকায় বাংলাদেশের নিরবতা বিশ্বের কাছে দেশের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিভিন্ন সময়ে ভারতে বিজেপি সরকারের মুসলিম বিদ্বেষী তৎপরতায় ভারতীয় সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বসম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা রাখতে না পারলেও সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল ও নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ক্ষীনস্বরে উদ্বেগ-নিন্দা করতে দেখা গেছে। রামমন্দির বিতর্কে ৫শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে দেয়া, গরুর গোশত খাওয়ার অভিযোগে নির্বিচার পিটিয়ে মুসলমানদের হত্যা করা, করোনা পেন্ডেমিক ছড়ানোর মিথ্যা অভিযোগ তুলে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিল্লীতে শত শত মানুষ হত্যা ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার মত ঘটনার সাথে বিজেপি ও সংঘ পরিবারের রাজনৈতিক মদত ছিল দৃশ্যমান। সে সব ঘটনায় ভারতের প্রগতিশীল নাগরিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসি রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন ও ভারতীয় আদালত যথাযথ ভূমিকা পালন করলে আজকে ভারতের বিজেপি নেতারা এতটা বেপরোয় ইসলাম বিদ্বেষী হওয়ার ঔদ্ধত্য দেখাতেন না। ইসলাম বিদ্বেষী কার্টুন বা মন্তব্যের জেরে শুধু ডেনমার্ক বা ফ্রান্সে নয়, পুরো ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে যে তোলপাড় হয়েছিল সে অভিজ্ঞতা খুব বেশিদিনের পুরোনো নয়। রামমন্দির ভাঙ্গা বা কাশ্মিরিদের অধিকার হরণের পরও যখন মুসলমানরা চুপ থেকেছে, তখন রাসুলের শানে কুটুক্তি করতেও বিজেপি নেতাদের বিবেকে বাঁধেনি। তারা এবার সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও মুসলমানদের বিশ্বাসের ভিত্তির উপর আঘাত দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি। এর মাশুল শুধু বিজেপিকে নয়, ভারত রাষ্ট্রকেই গুণতে হবে। বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালরা ভারতীয় মুসলমানদের মনোজগতে আঘাত হানতে গিয়ে বিশ্ব মুসলমানের অন্তরে কুঠারাঘাত করেছে। এর প্রতিক্রিয়া ভারতসহ সারাবিশ্বেই দেখা দিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) শানে ঔদ্ধত্যপূর্ণ অশালীন মন্তব্যের জেরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেও দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়া না দেখানো বিস্ময়কর, দু:খজনক। জনগণের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও আত্মমর্যাদাকে অবমূল্যায়িত করে প্রতিবেশি দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অসম্ভব। বিজেপির হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিম বিদ্বেষের প্রতিবাদ ভারত বিরোধিতা নয়। ভারতের বেশিরভাগ নাগরিক হিন্দুত্ববাদী হিংসা-বিভাজন সমর্থন করেনা। ভারতের আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা, অখÐতা, আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক স্বার্থেই হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে সকল গণতন্ত্রকামী ভারতীয় হিন্দু-মুসলমানের সোচ্চার হওয়া জরুরী।
ভারতে হিন্দুদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখতে গিয়ে হাজার বছর আগে আবু রায়হান আল বেরুনি এ দেশের মানুষের পরদেশ ও পরধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও তীব্র বিদ্বেষের ঐতিহাসিক কারণ উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিদেশি আক্রমণের শিকার হওয়ার অভীজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আসা ভারতীয় হিন্দুরা ইসলামপূর্ব যুগে জরাথ্রুস্ত, সামানি বা শ্রমণ সম্প্রদায়ের আক্রমন ও ধর্ম প্রচারের কারণে ব্রাহ্মণদের সাথে শত্রæতার উল্লেখ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আরব উপদ্বীপ, তুরস্ক, আফগানিস্তান ও পারস্য থেকে বীরযোদ্ধারা অতি সহজেই ভারতের শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল বেরুনি ভারতীয়দের পরধর্ম বিদ্বেষ সম্পর্কে লিখলেও মুসলমান সুলতান ও মুঘলদের ৮শ’ বছরের ভারত শাসনের শুরুতেই তার জীবৎকাল শেষ হয়েছিল। তবে ভারতীয়দের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, মুসলমান ও বৃটিশদের সম্মিলিত হাজার বছরেও তা খুব বেশি বদলায়নি। আমরা বিংশ শতকে এসে নাৎসীবাদ বা ফ্যাসিজমের মধ্যে যে রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য দেখি, হাজার বছর আগে আল বেরুনি ভারতের হিন্দুদের মধ্যে সে বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ‘এরা বিশ্বাস করে যে, পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র তাদের দেশই শ্রেষ্ঠ, মানব জাতির মধ্যে একমাত্র তারাই সর্বোত্তম, রাজাদের মধ্যে একমাত্র তাদের রাজারাই সর্বশ্রেষ্ঠ, ধর্মের মধ্যে তাদের ধর্মই শ্রেষ্ঠ এবং তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানই একমাত্র জ্ঞান। মূর্খের মতো নিজেকে বড় ঘোষণা করে নিজেকে জাহির করে ওরা পরম পরিতৃপ্ত। জ্ঞান বিতরণে কার্পণ্য করা ওদের স্বভাব।’ আজকের হিন্দুত্ববাদিদের আচরণ থেকে দেখা যায়, হাজার বছরেও তাদের সেই কূপমন্ডুক দৃষ্টিভঙ্গি এতটুকুও বদলায়নি। যদিও এখন আর এটিকে অধিকাংশ ভারতীয়র সাধারণ বৈশিষ্ট্য বলা যাবে না। ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাতের সংস্কার পেরিয়ে রুটি-রুজির উদ্দেশ্যে ভারতীয়রা এখন বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সুযোগ পেলে অধিকাংশ ভারতীয় তরুন এখন ইউরোপ-আমেরিকায় নির্দ্বিধায় পাড়ি জমাবে, এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। শতকোটি মানুষের দেশ ভারত আজ ইউরোপ-আমেরিকা বা চীনের সাথে কতটুকু তুল্যমূল্য বিচারে টিকে আছে? হিন্দুত্ববাদের খড়গের নিচে ভারত নিজের অবস্থানকে কোথায় নিয়ে যাবে, সে বিচার সর্বাগ্রে ভারতের সাধারণ জনগণকেই করতে হবে। নাৎসীবাদ, জায়নবাদ, হিন্দুত্ববাদ মানব সভ্যতার পিঠে বিংশ শতকের বিষফোঁড়া। এদের অবারিত রেখে কোনো সভ্যতা সামনে এগিয়ে যেতে পারে না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।