দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মহানবী। সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব এবং স্রষ্টার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যিনি আকৃতিতে ও সুন্দরে যেমন ছিলেন অতুলনীয় ঠিক তেমনি চরিত্রেও ছিলেন অনুপম ও অনুকরণীয়। যার শান মান মহান রাব্বুল আলামীন নিজেই বাড়িয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি আপনার (মর্যাদা বৃদ্ধির) জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি’ -সুরা আল ইনশিরাহ, আয়াত: ৪। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সৃষ্টির সেরা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আমি আদম সন্তানের সাইয়্যিদ’ -ইবনে মাজাহ্, হাদিস নং ৪৩০৮। সেই প্রিয় নবীর সম্পর্কে সংক্ষেপে কবির ভাষায় বলা যায়, ‘লা য়ুমকিনু সানাউহু কামা কানা হাক্কুহু/বা’দ আয খোদা বুযুর্গ তুয়ি কিসসা মুখতাসার’।
সেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যুগে যুগে সৃষ্টির নিকৃষ্ট দুপায়ী কিছু কুলাঙ্গার প্রাণী অপমান ও অবমাননা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাজে মন্তব্য করেছে, করছে ভবিষ্যতেও হয়তোবা করবে। প্রিয় নবীর যুগে যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপমান বা কটু কথা বলে কষ্ঠ দিতে অপচেষ্ঠা করেছে মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীবের পক্ষ হতে ওদেরকে যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছেন, লাঞ্চিত অপদস্ত করেছেন আর তাদের জন্য পরকালে রেখেছেন সীমাহীন শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আমরা বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে আপনার জন্য যথেষ্ট’ -সূরা আল হিজর, আয়াত :৯৫।
আবু লাহাব প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কটুক্তি করেছিলো। মহান রব তাকে যথোপযুক্ত জবাব দিয়ে অবতীর্ণ করেন, ‘ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দু’হাত এবং ধ্বংস হয়েছে সে নিজেও। তার ধন সম্পদ ও তার উপার্জন কোন কাজে আসে নি। অচিরেই সে দগ্ধ হবে লেলিহান আগুনে, আর তার স্ত্রীও’ -সুরা লাহাব। মহান আল্লাহ তাআলা আবু লাহাবকে দুনিয়া আখিরাতে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রিয় হাবীবের সম্মান।
কাফির মুশরিকরা মহানবীকে গণক, পাগল বলে বলে বেড়াত। ‘আর তারা বলে, হে ঐ ব্যক্তি যার প্রতি যিকর নাযিল হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ’ -সুরা আল হিজর, আয়াত: ৬। আল্লাহ তাঁর জবাবে এরশাদ করেন, ‘আপনার রবের অনুগ্রহে আপনি গণক নন, পাগলও নন’ -সুরা আত ত্বুর, আয়াত: ২৯। তারা প্রিয় নবীকে নির্বংশ বা লেজ কাটা বলে কষ্ট দিতে চাইলে মহান আল্লাহ তাদের জবাবে নবীকে কাওসার দান করার ঘোষণা দিয়ে তাদেরকে উল্টা বংশহীন এবং আবতার বলে তাদের যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। ‘নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নির্বংশ’ -সুরা আল কাওসার, আয়াত: ৩।
সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম যখনই দেখতেন কোন মুনাফিক বা মুশরিক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কথা বা আচরণের মাধ্যমে কষ্ঠ দিতে অপচেষ্ঠা করত তখনই জান প্রাণ বাজি রেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য উৎসর্গিত হয়ে সর্বদা সীসাঢালা প্রাচীরের মতো থাকতেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কিছু বন্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে আব্দুল্লাহ বিন যুল খুওয়ায়সিরা আত তামীমী এলো এবং বললো, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনসাফ করুন। তিনি এরশাদ করলেন, আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তা হলে আর কে ইনসাফ করবে? হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমাকে অনুমতি দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই’ -সহীহুল বোখারী, হাদিস নং: ৬৯৩৩।
সময়ের আবর্তনে আমরা লক্ষ্য করেছি যে বা যারা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপমান করা বা হেয় করার চেষ্ঠা করেছে তারাই ইতিহাসের নিকৃষ্ট হয়েছে। তাদের খ্যাতি, পদ, মর্যাদা, ধন, সম্পদ সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেও তার প্রমাণ রয়েছে। কুলাঙ্গার আঃ লতিফ নামে এক মন্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিল। ইতিহাসের পাতায় তার নাম নিকৃষ্ট হয়েই থাকবে। পদ, মর্যাদা, সম্মান সব হারিয়ে জেলের ভাত খেতে হয়েছে। ইতিহাস তাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। আমরা দেখেছি পবিত্র ধর্ম ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করার কারণে সরকারের আরেক মন্ত্রী কিভাবে অপমান আর অসম্মানে আত্নগোপনে থাকতে হয়েছে। পৃথিবীর কোথায়ও তার ঠাঁই হয় নি।
সম্প্রতি ভারতে দুই কুলাঙ্গার আমাদের কলিজা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মুমিনীন সাইয়্যিদাহ হযরত আয়িশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছে। যার কারণে সারা বিশ্বের ২বিলিয়ন মুসলমানের হৃদয়ে রক্তকরণ হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সুস্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, একজন মুমিন মুসলমান বেচেঁ থাকা অবধি আমাদের প্রিয় নবী, উম্মাহাতুল মুমিনীন ও ইসলাম সম্পর্কে কোন ধরণের অপমানজনক মন্তব্য সহ্য করবো না। কেননা, ‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্টতর’ -সুরা আল আহযাব, আয়াত: ৬। আর এটাই হলো ঈমান। আর ঈমান পরিপূর্ণ হয় না মহানবীর প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা ছাড়া।
সবশেষে বলতে চাই, তোমরা যারা আমাদের প্রিয় নবীকে অপমান করে কষ্ট দিতে চাও জেনে নাও মহান রবের বানী, ‘আর যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ -সুরা আত তাওবাহ, আয়াত: ৬১। শুধু তাই নয় মহান আল্লাহ তাআলা সাড়ে ১৪০০বছর আগে তাদের প্রতিবাদ করেই ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি’ -সুরা আল আহযাব, আয়াত: ৫৭।
অন্য ধর্মে আঘাত দিয়ে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি ও অপমানজনক কথা বলা বাকস্বাধীনতা নয় বরং উসকে দেয়ার নামান্তর। কোন মুসলমান প্রাণ থাকা অবধি তা মেনে নিবে না, নিতে পারে না। নবীর অপমান কারীরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হবে। মহান রব তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন যেভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন আবু লাহাব সহ সমগোত্রীয়দের।
লিখকঃ প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট পরিচালক, খিদমাতুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।