মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পশ্চিমারা যদি ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা বন্ধ না করে, তাহলে নিশানা বদল করবে মস্কো- এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তার কথায়, ‘সংঘর্ষ আরো বাড়াতেই এভাবে অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে কিয়েভে।’ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও গতকাল বলেছেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যত বেশি অস্ত্র সরবরাহ করবে, মস্কো ততই তার ভূখণ্ড থেকে হুমকির রেখা সরিয়ে নেবে।’
রুশ সংবাদ সংস্থাকে পুতিন বলেছেন, কিয়েভকে যদি এভাবে একের পর এক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় পশ্চিমা শক্তিরা, আমরা যথার্থভাবেই তা শেষ করব... আমরা আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করব। এখনও যেসব জায়গায় হামলা করিনি, এবার সেখানে আঘাত হানব।’ রুশ টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে এ সাক্ষাৎকার। তবে রাশিয়া কোথায় হামলা করার কথা ভাবছে, সে বিষয়ে পুতিন খোলাসা করে কিছু না বললেও স্টেট ডুমা (রাশিয়ার সংসদের নিম্নকক্ষ) প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান আন্দ্রে কার্তাপোলভ স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের পরিবহন অবকাঠামো সুবিধা এবং সরকারি ভবন লক্ষ্য করে একাধিক রকেট এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে রাশিয়া।
‘আমাদের প্রেসিডেন্ট এবং সর্বোচ্চ কমান্ডার-ইন-চিফ (ভøাদিমির পুতিন) যেমন বলেছেন, রাশিয়া সেই লক্ষ্যগুলোতে আক্রমণ পরিচালনা করে প্রতিক্রিয়া জানাবে যা আমরা এখনও আঘাত করিনি,’ তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন। ‘কিয়েভের বিমানবন্দর চালু রয়েছে, রেল টার্মিনাল এবং প্রধান রেললাইনগুলোও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, সেইসাথে হাইওয়ে ব্রিজ এবং অন্যান্য অনেক সুবিধা, সরকারি সংস্থাগুলোও কাজ করছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, জেনারেল স্টাফ, (ভারখোভনা) রাদা (সংসদ) এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয় যেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় তাও চলছে, কারণ ভবনগুলোতে একবারও হামলা করা হয়নি,’ কার্তাপোলভ উল্লেখ করেছেন।
পুতিন অবশ্য বলেছেন, ‘আমেরিকা এমন কোনো নতুন অস্ত্র দিচ্ছে না ইউক্রেনকে। সোভিয়েত যুগে তৈরি ওই ধরনের অস্ত্র ইউক্রেনের কাছে ছিল।’ তাছাড়া, মিসাইল লঞ্চার সিস্টেমের থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমেরিকা যে সিস্টেমটি পাঠাচ্ছে, ওতে ৪৫-৭০ কিলোমিটার দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ওসব কিছুই না। ওদের আসল উদ্দেশ্য, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা।’
প্রসঙ্গত, সদ্যই আমেরিকা ঘোষণা করেছে, তারা মধ্যমপাল্লার মাল্টিপল রকেট লঞ্চ সিস্টেম পাঠাবে। ৮০ কিলোমিটার দূরের নিশানায় আঘাত করতে পারে এটি। এছাড়াও কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র সাহায্য করছে আমেরিকা। এতে ক্ষুব্ধ রাশিয়া। এর অর্থ, এবার কিয়েভের বাহিনীও ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় হামলা চালাতে পারবে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য দাবি করেছেন, তারা এমন কোনো অস্ত্র ইউক্রেনকে দেবেন না, যাতে রাশিয়ার জমিতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে যুদ্ধে কোনো পক্ষই কাউকে বিশ্বাস করে না।
দুই প্রণালি বন্ধ করছে তুরস্ক, চলবে শুধু রুশ যুদ্ধজাহাজ : তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু শুক্রবার বলেছেন, আঙ্কারা বসফরাস এবং দারদানেলেস প্রণালি দিয়ে যুদ্ধজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে। তবে রাশিয়া তাদের নৌবহরকে নিজেদের ঘাঁটিতে ফেরত নেয়ার জন্য প্রণালি দুইটি ব্যবহার করতে পারবে।
হুররিয়াত সংবাদপত্র কাভুসোগলুকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘ইউক্রেন আমাদেরকে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠিয়েছে (রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজের জন্য প্রণালি বন্ধ করে দেয়ার জন্য)। মন্ট্রেক্স কনভেনশনের বিধানগুলো খুবই স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট। আজ অবধি, তুরস্ক নিঃসঙ্কোচে মন্ট্রেক্স কনভেনশন মেনে চলছে। যে যুদ্ধে তুরস্ক জড়িত নয় তার পক্ষের প্রতি তুরস্ক প্রণালী দিয়ে যুদ্ধজাহাজ চলাচল সীমিত করতে পারে। তবে মন্ট্রেক্স কনভেনশন এও বলে যে, যুদ্ধে জড়িত দেশগুলোর জাহাজের তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং করা উচিত। এটি করার অনুমতি দেয়া হবে’।
শীর্ষ কূটনীতিকের মতে, তুর্কি বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি অধ্যয়ন করছেন এবং ‘যদি একটি যুদ্ধকালীন তুরস্কে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি বোডনার বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় তুর্কি-নিয়ন্ত্রিত প্রণালী দিয়ে রুশ যুদ্ধজাহাজ চলাচল সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিস্থিতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় তবে প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ ‘স্পষ্টতই, রাশিয়ার আক্রমণকে যুদ্ধ হিসাবে বর্ণনা করতে তুরস্কের এগুলো প্রয়োজন,’ কাভুসোলগু ব্যাখ্যা করেছেন।
ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানিতে একমত তুরস্ক, রাশিয়া : রাশিয়ান সরকার শস্য সরবরাহ বহনকারী জাহাজগুলোকে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার পরিকল্পনা করছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ব্যাপক ঘাটতি এবং ক্ষুধার আশঙ্কা মোকাবেলা করতে তারা অবরোধ শিথিল করতে চাচ্ছে। গতকাল রাশিয়ার সরকারপন্থী দৈনিক পত্রিকা ইজভেস্টিয়া সরকারি সূত্রগুলোকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, রাশিয়ান নেতৃত্ব কিয়েভ এবং আঙ্কারার সাথে ওডেসা থেকে শস্যের চালান ছেড়ে দেয়ার একটি পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে, যা অবরোধের মধ্যে ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেশী ইউক্রেনের আঞ্চলিক জলসীমায়, তুরস্কের সামরিক বাহিনী মাইন নিশ্চিহ্নকরণের দায়িত্ব নেবে এবং তারা নিরপেক্ষ পানিসীমা পর্যন্ত জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দেবে।’
রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ তখন শস্য বহনকারী জাহাজগুলোকে বসফরাসে নিয়ে যাবে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মস্কোর যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে ব্যাপক অস্থিরতার কারণে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শস্য রপ্তানিকারক দেশ এবং রাশিয়ার অভিযানের পর এর সরবরাহে পতন আফ্রিকার দেশগুলোকে কঠিনভাবে আঘাত করেছে। মরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সম্প্রতি সেনেগাল এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সালকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য স্বাগত জানিয়েছেন। যদিও পুতিন উচ্চ মূল্যের জন্য রাশিয়া দায়ী নয় বলে জানিয়েছেন, তিনি বলেছিলেন যে, তিনি শস্য সরবরাহের সুবিধা দিতে ইচ্ছুক। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এই বিষয়ে আলোচনার জন্য বুধবার আঙ্কারায় যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আলোচনার পরে, ওডেসা থেকে শস্য ছাড়ার পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, সংবাদপত্রটি বলেছে।
ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করছে রাশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকা : রাশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সাথে পারস্পরিক ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কাজ করছে। রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ল্যাটিন আমেরিকা বিভাগের দায়িত্বে থাকা আলেকজান্ডার শচেটিনিন এর সাথে একটি সাক্ষাতকারে এ তথ্য জানিয়েছেন। ‘রাশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি কমানোর জন্য, আমরা ধারাবাহিকভাবে আর্থিক ব্যবস্থা চালু করার জন্য কাজ করছি যা পশ্চিমাদের বিকল্প হিসাবে কাজ করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারিং এবং সংবাদদাতা ব্যাংকিং সম্পর্ক,’ রাশিয়ান কূটনীতিক বলেছেন। পাশাপাশি অন্যান্য পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি সহযোগিতার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে মস্কো তার আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক আলোচনা করছে, শচেটিনিন জোর দিয়ে বলেছিলেন।
ফের রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামে হামলা ইউক্রেনের : রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের টিয়োটকিনো গ্রামে আবারও হামলা করেছে ইউক্রেনের সেনারা। ওই গ্রামে কোন সেনা স্থাপণা নেই, শুধুমাত্র সাধারণ মানুষই বসবাস করে। ইউক্রেনের সেনাদের হামলায় ওই গ্রামে আগুন লেগে যায় বলে জানিয়েছেন সে অঞ্চলের গভর্নর রোমান স্টারভয়েট। গতকাল তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে স্টারভয়েট বলেছেন, ‘টিয়োটকিনো গ্রাম আজ ভোরে আবার আগুনের কবলে পড়ে। সেতু এবং স্থানীয় গাছপালা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।’ তিনি লিখেছেন যে, ক্ষয়ক্ষতি এবং সম্ভাব্য হতাহতের তথ্য এখনও যাচাই করা হয়নি। গত ২১ মে ইউক্রেনীয়দের দ্বারা ওই গ্রামে সর্বশেষ হামলা হয়েছিল।
মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ অসম্ভব : মস্কো এবং ওয়াশিংটন সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে না, রাশিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন সুলিভান বার্তা সংস্থা তাসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ মন্তব্য করেছেন। সুলিভান বলেন, ‘আমরা কখনোই সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন নই। আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ককে সত্যিকার অর্থে ছিন্ন করতে পারি না, এবং শুধু কথা বলতে পারি না। সর্বপরিভাবে, আমরা প্রতিদিন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একে অপরের কাছাকাছি বসে থাকি। যাই হোক না কেন, আমরা জাতিসংঘে, নিরাপত্তা পরিষদে একে অপরের সাথে কথা বলা ভালো। এবং আমাদের দূতাবাস থাকা উচিত। এটি ন্যূনতম এবং মৌলিক বিষয়।’
আকাশসীমা বন্ধ, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সার্বিয়া সফর বাতিল : পূর্বনির্ধারিত সার্বিয়া সফর বাতিল করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। সার্বিয়ার আশপাশের দেশগুলো আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়ায় এ সফর বাতিল করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। এ ঘটনায় মস্কো বুলগেরিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া এবং মন্টিনিগ্রোকে ‘প্রতিকূল পদক্ষেপ’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছে ও নিন্দা জানিয়েছে।
আগামী তিন বছরের জন্য গ্যাস রফতানির চুক্তি সম্পাদনের জন্য রোববার দুই দিনের সফরে সার্বিয়া যাওয়ার কথা ছিল রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। কিন্তু উত্তর মেসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া এবং মন্টিনিগ্রো সের্গেই ল্যাভরভকে বহনকারী বিমানকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। ফলে সফরটি বাতিল করে দেয়ার কোনও বিকল্প ছিল না।
রাশিয়ার গ্যাসের বিল রুবলে পরিশোধ করতে রাজি না হওয়ায় মস্কো অনেক দেশে সরবরাহ বন্ধ করে দিলেও সার্বিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুচিক একমত হয়েছিলেন। সূত্র : দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, তাস, ডেইলি সাবাহ, বিবিসি নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।