মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমান হামলায় সমর্থিত শক্তিশালী রাশিয়ান সৈন্যরা গতকাল পূর্ব ইউক্রেনের একটি অংশে আঘাত করেছে, সেতু উড়িয়ে দিয়েছে এবং অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলোতে গোলাগুলি করেছে। আর তারা মস্কোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় দুটি শহর দখল করতে লড়াই করে। আঞ্চলিক গভর্নর সের্হি হাইদাই বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় বাহিনী সিভিয়েরোডোনেটস্ক এবং প্রতিবেশী লিসিচানস্কে রাস্তায় রাস্তায় লড়াই করেছে। হাইদাই জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলায় নিকটবর্তী গ্রাম হিরস্কে মা ও শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছে। শহরগুলো হল লুহানস্ক প্রদেশের শেষ প্রধান এলাকা যা এখনও ইউক্রেনের দখলে রয়েছে। রাশিয়ান আক্রমণগুলো সমগ্র ডনবাস অঞ্চল দখল করার ক্রেমলিনের হ্রাসকৃত যুদ্ধকালীন লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে মস্কো-সমর্থিত স্বাধীনতাকামীরা আট বছর ধরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সাথে লড়াই করেছে এবং স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী বলেছে যে, যুদ্ধের ১০১তম দিনে পৌঁছেছে বলে রাশিয়াও ডোনেস্কটের একটি শহর বাখমুতের আশেপাশে আক্রমণ বাড়িয়েছে, অন্য প্রদেশ যা ডনবাসকে তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, রাশিয়ানরা সিভিয়ারোডোনেটস্ককে দখলের দিকে মনোনিবেশ করে, যেটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ। এক পর্যায়ে, তারা শহরের ৯০ শতাংশ দখল করেছিল, কিন্তু ইউক্রেনীয় সৈন্যরা কিছু স্থলে প্রতিরোধ করেছিল, হাইদাই শুক্রবার জানিয়েছেন।
পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ডনবাসে ‘হাতানো অগ্রগতি’ হিসাবে বর্ণনা করার জন্য রাশিয়া উল্লেখযোগ্য সৈন্য শক্তি এবং ফায়ার পাওয়ার নিবেদন করছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবারের একটি মূল্যায়নে বলেছে, ‘বিমান এবং কামান হামলার সম্মিলিত ব্যবহার এ অঞ্চলে রাশিয়ার সাম্প্রতিক কৌশলগত সাফল্যের একটি মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’। ব্রিটিশ মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে যে, এতগুলো গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর রাশিয়া আনগাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে যেগুলো ‘প্রায় নিশ্চিতভাবেই যথেষ্ট সমান্তরাল ক্ষতি এবং বেসামরিক হতাহতের কারণ হয়েছে’।
ইউক্রেনের আর্টিলারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দিল রাশিয়া : মিসাইল হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলের একটি আর্টিলারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংসের দাবি করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এক আপডেটে জানায় বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া রুশ বাহিনী আরেকটি হামলা চালিয়ে ওডেসা অঞ্চলে একটি ‘বিদেশি ভাড়াটে সৈন্যদের’ ফাঁড়ি ধ্বংস করেছে বলেও ওই আপডেটে দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে রুশ বাহিনী ওডেসার কৃষ্ণ সাগর বন্দরের কাছে ইউক্রেনের একটি সামরিক পরিবহন বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলেও দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সামরিক পরিবহন বিমানটি অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার কাজে নিয়োজিত ছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর কিছু দিন পর নিজেদের লক্ষ্য পরিবর্তন করে মস্কো। ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলকে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানানোর পর থেকে ডনবাস অঞ্চলে হামলা জোরদার করেন রুশ সেনারা। এরপর গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী মারিউপোলের দখলে নেয় রাশিয়া। এখন তারা ডনবাস অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে।
সৈন্য হারিয়ে কতক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে ইউক্রেন? : রাশিয়ান গোলায় নিহত একজন প্রবীণ কর্নেলকে সমাহিত করা শেষ করে তাড়াতাড়ি কবরস্থানের কর্মীরা পরবর্তী গর্তটি প্রস্তুত করে। অনিবার্যভাবে, মৃত্যু কত দ্রুত সামনের সারিতে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের পতন ঘটাচ্ছে, খালি কবরটি সেভাবে বেশিক্ষণ থাকবে না।
কর্নেল ওলেক্সান্ডার মাখাচেক বিধবা এলেনা এবং তাদের কন্যা ওলেনা এবং মাইরোসøাভা-ওলেক্সান্দ্রাকে রেখে গেছেন। যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে, রাজধানী কিয়েভ থেকে ৯০ মাইল (১৪০ কিলোমিটার) পশ্চিমে জাইটোমিরের সামরিক কবরস্থানে তার কবরটি ৪০তম হিসেবে খনন করা হয়েছিল। তিনি ৩০ মে পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলে নিহত হন যেখানে যুদ্ধ চলছে। কাছাকাছি, ভায়াচেসøাভ ডভোরনিটস্কির সদ্য খনন করা কবরের দাফন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, তিনি ২৭ মে মারা গেছেন। অন্যান্য কবরেও দেখা গেছে, সৈন্যরা একে অপরের কয়েক দিনের মধ্যে মারা গেছে - ১০, ৯, ৭ ও ৫ মে এবং এটি কেবল একটি কবরস্থান। ইউক্রেনের অন্যান্য শহরেও সৈন্যদের লাশ কবরস্থ করা হয়েছে।
ইউক্রেন থেকে গম রফতানিতে বাধা নেই : পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন থেকে গম রফতানিতে কোনো ‘সমস্যা নেই’। ইউক্রেনে মস্কোর অভিযানে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরির পর এমন মন্তব্য করলেন পুতিন। শুক্রবার একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে গম রফতানি হতে পারে। রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য বন্দর দিয়েও হতে পারে। এমনকি মধ্য ইউরোপ দিয়েও গম রফতানি হতে পারে। সাক্ষাৎকারে পুতিন অভিযোগ করেন, ইউক্রেন থেকে শস্য রফতানিতে মস্কো বাধা দিচ্ছে বলে পশ্চিমারা দাবি করছে এবং হুঙ্কার দিচ্ছে।
এ সময় পুতিন বলেন, আজভ সাগরস্থ ইউক্রেনের মারিউপোল এবং বারদিয়ানস্ক বন্দরগুলো ব্যবহার করেও পণ্য রফতানি করা যেতে পারে। আজভ সাগরের এ পথ দিয়েই কৃষ্ণ সাগরে প্রবেশ করা যাবে। যদিও উভয় দিকই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দর, বিশেষ করে ওডেসাও ব্যবহার হতে পারে। তবে তিনি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দরগুলোর আশপাশ থেকে দেশটিকে মাইন সরাতে বলেছেন। এর বিনিময়ে রাশিয়া জাহাজগুলোকে নিরাপদে যেতে দেবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, রোমানিয়া, হাঙেরি বা পোল্যান্ড হয়ে দানিউব নদীপথও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বেলারুশ হয়ে যাওয়া পথটি সবচেয়ে সাধারণ, সহজ এবং সুলভ হবে। ওই পথ দিয়ে বাল্টিক বন্দরগুলোতে যাওয়া যাবে। সেখান থেকে বাল্টিক সাগর এবং তারপর পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যাওয়া যাবে।
তবে পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার মিত্র বেলারুশ হয়ে যাওয়া পথটা শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহার করা যাবে। এই পথটি ব্যবহার করতে হলে বেলারুশের ওপর দেওয়া পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
পুতিনের সাথে আলাপচারিতায় ৬ মাসে ১০০ ঘণ্টা ব্যয় করেছেন ম্যাখোঁ : গত শুক্রবার আঞ্চলিক মিডিয়া আউটলেটগুলোর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, গত ছয় মাসে ফ্রান্স এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদের ফোনে আলোচনা করতে ১০০ ঘণ্টা লেগেছে। ম্যাখোঁ বলেন, ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি সত্যিই কণ্টকাকীর্ণ, তাই আমি এতে অনেক সময় এবং শক্তি ব্যয় করেছি’। প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে কত কথোপকথন হয়েছে তা গণনা করা ইতোমধ্যেই কঠিন’। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা অন্তত একশ ঘণ্টা কথা বলেছি’।
ম্যাখোঁ যোগ করেছেন যে, তিনি এ আলোচনা গোপন করেননি এবং তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কির অনুরোধে সেগুলো করেছেন।
ম্যাখোঁ জোর দিয়ে বলেন, ‘রাশিয়াকে অপমান করা উচিত নয়’। ‘একদিন শত্রুতা শেষ হলে, আমরা কূটনীতির মাধ্যমে সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার পথ প্রশস্ত করতে সক্ষম হব’। ‘আমি নিশ্চিত যে, ফ্রান্সের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করা উচিত’ -তিনি বলেন।
খনিজ পদার্থ সরিয়ে নিতে মারিউপোলে ফের রুশ জাহাজ : ইউক্রেনের অবরুদ্ধ মারিউপোলে থেকে আরো খনিজ পদার্থ সরিয়ে নিতে দ্বিতীয় জাহাজ পাঠিয়েছে রাশিয়া। বন্দর কর্তৃপক্ষের বরাতে তাস নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিশাল একটি কার্গো জাহাজ মারিউপোল বন্দর পৌঁছেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর কাছ থেকে রাশিয়া মারিউপোল দখলে নেওয়ার পর এটি রাশিয়ার পাঠানো দ্বিতীয় জাহাজ। ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণের আগে মারিউপোল বন্দরে ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রায় ২ লাখ টন মূল্যের খনিজ ও ঢালাই লোহা ছিল।
মার্কিন রকেট ব্যবহার করলে ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন্দ্রে’ হামলার হুমকি রাশিয়ার : প্রাক্তন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপতি এবং রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান উপ-প্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করেছেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন্দ্রে’ আঘাত করা ছাড়া মস্কোর ‘কোন বিকল্প’ থাকবে না - যার অর্থ ইউক্রেনের বাইরে হতে পারে - যদি কিয়েভ রাশিয়ার ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। শুক্রবার কাতারি টিভি চ্যানেল আল জাজিরাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেছেন, যেখানে তিনি ‘অ্যাপোক্যালিপসের ঘোড়া’কেও আহ্বান জানিয়েছেন। ‘যদি এ ধরনের অস্ত্র রাশিয়ান অঞ্চলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রগুলোকে পরাস্ত করার জন্য কাজ করা ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না’। মেদভেদেভের সতর্কবার্তাটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মঙ্গলবারের ঘোষণার প্রেক্ষিতে এসেছে যে, আমেরিকা ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা প্রদান করবে, মাত্র একদিন আগে থেকে গতিপথ উল্টে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ লেখায় বাইডেন বলেছিলেন যে, তিনি ‘ইউক্রেনীয়দের আরো উন্নত রকেট সিস্টেম এবং যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করবেন যা তাদের ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে মূল লক্ষ্যগুলোকে আরো সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত করতে সক্ষম করবে’।
এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল নিশ্চিত করেছে যে, তিনি মাল্টিপল-লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) এর কথা উল্লেখ করছেন, যা কর্মকর্তারা বলেছেন যে, রাশিয়া পৌঁছাতে সক্ষম, তবে সেটা উদ্দেশ্য ছিল না।
পেন্টাগনের মুখপাত্র আউটলেটকে বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ায় রকেট ছোড়ার জন্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার রেঞ্জের অস্ত্র ব্যবহার না করতে সম্মত হয়েছে। সূত্র : আল-জাজিরা, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, তাস ও এনজেড হেরাল্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।