পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আজ দেশের সাধারণ নাগরিকের কোনো অধিকার নেই, কোনো সম্মান নেই। সব অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। আওয়ামী লীগের সবাই দুর্নীতিবাজ নয়, বিএনপির মধ্যেও ভালো মানুষ আছে। আমরা দেশের সকল নীতিবান, ভালো মানুষ ও আদর্শ নাগরিকদের নিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সংঘাতের নোংরা রাজনীতির অবসান চাই। তাই আগামী নির্বাচন দলের জন্য নয়; সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর দেশের জন্য হোক। আমরা স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আউটার স্টেডিয়ামে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশের রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে অনতিবিলম্বে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরী করতে হবে। ক্ষমতাসীনরা আগামীতেও জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না বরং আবারও ২০১৪ ও ২০১৮-এর মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে। আমরা বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের চলমান সঙ্কট দূর হবে।
সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল স্বাধীন দেশে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাবে, সম্মান পাবে। বাকস্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার পাবে। জান-মাল, ইজ্জত-আবরু এবং জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ সঙ্কটাপন্ন, জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা এবং তাঁবেদার শক্তি দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যে সকল সুনাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
দেশে সর্বস্তরের ওলামা-মাশায়েখ, অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলামী সংগঠন এবং সব মতের ইসলামপন্থির প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আসুন আমরা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি না করে ইসলামকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য একটি কার্যকর ও টেকসই ঐক্য গড়ে তুলি। আমরা যদি কার্যকর এবং ফলপ্রসূ ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে ঐক্যবদ্ধ ইসলামী শক্তিই হবে এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। আর আল্লাহ যদি আমাদের কবুল করেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারি, তাহলে দেশে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা হবে। দুর্নীতি উৎখাত করা হবে। প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার পরিবর্তে সমঝোতা ও সহনশীলতার রাজনীতির বিকাশ ঘটবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা হবে। সুদ, ঘুষ ও অপচয় বন্ধ করা হবে। মাদক, চাঁদাবাজি উৎখাত করব। নারী নির্যাতন ও মানব পাচার প্রতিরোধ করব। দ্রব্যমূল্য মানুষের সামর্থের মধ্যে রাখতে সিন্ডিকেটবাজি বন্ধ করা হবে। সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। দলীয়করণ বন্ধ করা হবে। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতি গ্রহণ করা হবে। সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমাব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করব। বেকারত্ব দূর করব এবং কৃষক-শ্রমিকসহ সব শ্রমজীবী ও পেশাজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, প্রাচ্যের রাণী নামে খ্যাত সমুদ্র ও পাহাড়বেষ্টিত এই বন্দরনগরী নানা সমস্যায় জর্জরিত। কোনো কোনো সড়ক প্রশস্ত করা হলেও কাজ অসমাপ্ত। ঢাকায় যেখানে এক ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হয় না, সেখানে চট্টগ্রামে চার-পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং চলে। এই হলো দেশের প্রধান বন্দর ও শিল্পনগরীর হাল। জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে যায়, মেরামতের অভাবে রাস্তাঘাটগুলো যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। শহরের ড্রেনেজব্যবস্থা খুবই নাজুক। যানজটেও নগরবাসীকে প্রায়ই নাকাল হতে হয়। যানজট, পানিবদ্ধতা, বিদ্যুৎবিভ্রাট ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের অপর নাম বাণিজ্যিক রাজধানী। তাই চট্টগ্রামের কার্যকর উন্নয়নে সরকারকে অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই বলেন, দেশকে ভালোবাসি। দেশে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে চাই। মানুষকে স্বস্তি ও নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষের মানবীয় ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, প্রতিহিংসা, জিঘাংসা আর ধ্বংসের রাজনীতির চির-অবসান চাই। দেশের সব নাগরিকের শান্তিপূর্ণ ভ্রাতৃপ্রতিম সহাবস্থান, দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে চাই। আর এজন্য আমরা কালজয়ী আদর্শ ইসলামের আলোকে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই।
বিভাগীয় সমাবেশে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। সমাবেশকে ঘিরে নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। কর্দমাক্ত আউটার স্টেডিয়ামে বসে এবং দাঁড়িয়ে লোকজন নেতাদের বক্তব্য শোনেন। দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেনে সভাপতিত্বে বিভাগীয় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর আশরাফ আলী আকন, প্রফেসর মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা খলিলুর রহমান, সহ প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, কৃষি ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহমান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, কেন্দ্রীয় সদস্য সেলিম মাহমুদ, যুব আন্দোলন সেক্রেটারী জেনারেল আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল করীম আকরাম, নগর সহ সভাপতি আবুল কাশেম মাতবর, নগর সেক্রেটারী আল মুহাম্মদ ইকবালসহ চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন জেলা নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে ১৫ দফা দাবি পেশ
সমাবেশে ১৫ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, যেকোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশে মদ ও সকল ধরণের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিকক্যবাদী সকল ধর্মবিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপঁচা ডারউইনের থিউরী বাদ দিতে হবে। কারান্তরীণ সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। নির্বাচনে সকল দলের জন্যে সমান সুযোগ তৈরী করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারী বেসরকারী গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিল করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচী ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।