শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ব্রিটিশ আমলে আমাদের দেশে অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড়ের উত্থান ঘটেছিল- গোষ্ঠ পাল, শিশির ঘোষ, শৈলেন মান্না, ফুটবল জাদুকর সামাদ, আব্বাস মির্জা, মোস্তফা, নূর মোহাম্মদ, তাজ মোহাম্মদ, হাফেজ রশীদ, মোহিনী ব্যানার্জী, জুম্মাখান, তসলীম সে’কালের বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার ছিলেন।
নজরুল যখন রানীগঞ্জের সিয়ারশোল হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন তিনি পড়াশোনায়, বির্তক সভায়, রচনা প্রতিযোগীতায়, ফুটবল খেলায় তিনি তখন সমগ্র তল্লাটের সেরা ও নামকরা ছাত্র। ১৯১৬ সালে এক রচনা প্রতিযোগীতায় নজরুল সে সময় ৪ টাকা “এজলী পুরষ্কার” পেয়েছিলেন। নজরুলের সে সময় ছিল চারটি নেশা- আমপাড়া, নদীতে সাঁতার কাটা, ফুটবল খেলা ও মাছ ধরা। পরবর্তীতে তিনি কখনও কখনও দাবা খেলায়ও মেতে উঠতেন।
কুমিল্লার দৌলতপুরে আলী আকবর খানের মেজো বোন নার্গিসের খালাআম্মা এখতারুন্নেসা খানম নজরুলকে পুত্রবৎ স্নেহ করতেন। নজরুল তাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন। নজরুল নার্গিসের বিয়ের ব্যাপারে যখন খাঁ পরিবারের সকলেই ছিলেন গররাজি তখন এই এখতারুন্নেসাই সকলের উপরে প্রভাব বিস্তার করে সেই বিয়েকে সম্ভব করে তুলেছিলেন। নজরুল যখন খাঁ বাড়ীর পুকুরে ঘন্টার পর ঘন্টা সাঁতার কাটতেন (নজরুলের সাঁতারের ছিল তীব্র নেশা) ও সাবান মেখে পুকুরের পানিকে ফেনায় সাদা করে তুলতেন। পুকুর থেকে উঠতেই চাইতেন না। সে সময় একমাত্র এখতারুন্নেসা তাড়া খেয়ে নজরুল পুকুর থেকে সাঁতরে উঠে পড়তেন। এখতারুন্নেসা খানম মায়ের মতই নজরুলের সকল আবদার পূরণ করতেন। এই এখতারুন্নেসা ছাড়া আর কাউকেই কবি পাত্তা দিতেন না। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান।
নজরুলের প্রিয় খেলার ভেতর একটা হলো ফুটবল। ফুটবল উপভোগ করার নেশা নজরুলের কম নয়। এমন কি নজরুলের দল প্রীতির কথাও জানা যায়। নজরুল মোহামেডান স্পোটিংকে সমর্থন করে তার লীগ চ্যাম্পিয়ন শীপ প্রাপ্তিতে খুশী হতেন। এক পর্যায়ে তিনি তা’ নিয়ে একটা কবিতা ও লেখেন।
এই ভারতের অবনত শিরে তোমরা পরালে তাজ,
সুযোগ পাইলে শক্তিতে মোরা অজেও দেখালে আজ।
ফুটবলের পাশাপাশি নজরুল ছিলেন দাবার প্রতি আসক্ত। প্রচন্ড ঝোঁক ছিল বলেই তিনি দাবা প্রতিযোগীতায় নামেন। ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেনের কথায় জানা যায় যে, নজরুল ইসলাম দাবা খেলতেন, দাবা খেলা জানতেন, দাবা খেলার নেশা ছিল তার, কিন্তু তিনি প্রথম শ্রেণীর দাবা খেলোয়াড় ছিলেন না। তিনি আরো বলেন নজরুল ছিলেন কল্পনা শক্তি সম্পন্ন আক্রমণ প্রিয় দাবাড়ু। দারুণ রকম কুশলী খেলোয়াড় যদিও তিনি ছিলেন না। তবুও মধ্যম শ্রেণীর খেলোয়াড় হিসেবে তিনি মাঝে মাঝে বিস্ময়ের সৃষ্টি করতেন। ১৯২৫ সালের কথা, কলকাতায় ভারত ব্যাপি প্রতিযোগীতা শুরু হয়। কবি নজরুল তাতে অংশ নেন। জানা যায় নির্ধারিত একজন খেলোয়াড় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর জায়গায় নজরুলের নাম লেখানো হয়। এতে অনেকে অবাক হন। তার কারণ তাঁদের ধারণা ছিল নজরুল কতই বা আর ভাল খেলবেন। কিন্তু তিনি খুব একটা ভাল না খেললেও বিজয়ীেেদর তালিকায় তাঁর নাম দেখা যায়। তিন শেষ বিজয়ী হন।
জানা যায় বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন দাবা প্রিয় মানুষ। দাবা ছিল তাঁর খুব পছন্দের খেলা। তিনি তাঁর বাড়িতে কলকতার চ্যাম্পিয়ান এস.সি. আড্ডি, কাজী মোতাহার হোসেন এবং নজরুল ইসলাম কে দাবা খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রণ পেয়ে তিনজনই সময় মতো তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হন। রাত ১ টা পর্যন্ত দাবা খেলা চলে। নজরুল ও শরৎচন্দ্র দু’জন মিলে খেলা উপভোগ করেন। দাবা খেলার অভিজ্ঞতাকে নজরুল তাঁর সাহিত্য রচনার কাজে লাগান, এ খেলাকে কেন্দ্র করে তিনি তাঁর বিখ্যাত প্রেমের গল্প “শিউলী মালা”র প্লট তৈরী করেন। সত্যিকার অর্থে এ থেকে নজরুলের দাবার জ্ঞান সম্পর্কে জানতে পারা যায়। এ গল্পে নজরুল গল্পের নায়ক আজহারের মুখ দিয়ে দাবার কথা বলান। দাবার জ্ঞান থাকায় নজরুল পরবর্তীতে সুন্দরভাবে “রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম” অনুবাদ করতে পেরেছিলেন। নজরুলের ফুটবল ও দাবা প্রিতী ও সাহিত্য প্রতিভার মতোই সে সময় সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছিল।
কাজী নজরুল ইসলামের আরেকটি বিশেষ গুণ ছিল তিনি অন্ধকারে দেখতে পেতেন। এটার মানে হলো উনাকে যে ঘরে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল সেটা অন্ধকার থাকতো। সেই অন্ধকারে বসেই তিনি জেলে অনেক কবিতা ও জ্বালাময়ী গান লিখেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।