Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনবল সঙ্কটের নদী ড্রেজিং কার্যক্রম স্থবির

বিআইডব্লিউটিএ’র ৬৭৭টি পদ সৃজনের প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে চিঠি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

সারা দেশে নদী খননে ড্রেজারে যে পরিমাণ জনবল ছিল এখনো তা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জনবল বৃদ্ধি হচ্ছে না। অথচ নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, অবৈধ দখল ও দূষণ রোধ এবং নদীনালা খালগুলো পুনরুদ্ধার অত্যাধুনিক নদীবন্দর স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু ড্রেজিং জনবল সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিস্ময়কর তথ্য হলো, প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম জনবল নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। দ্রুত ও স্বল্প সময়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজারগুলো মেরামত, সংরক্ষণ ও অপারেশনে সহায়তার লক্ষ্যে সরকার দেশে পাঁচটি ড্রেজার বেইজ স্থাপন করছে। এ সংস্থার জনবল সঙ্কটের বিষয়টি নতুন নয়। জনবল সঙ্কটের কারণে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজার ও সহায়ক জলযান পরিচালনা এবং ড্রেজিং বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৬৭৭টি পদ সৃজনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে চিঠি দিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। ড্রেজিং বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৬৭৭টি পদ সৃজনে অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, নৌপথ খননের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ৪৫টি ড্রেজার সংগ্রহ করেছে আরো ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের কার্যকম চলমান রয়েছে। দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ড্রেজারের সংখ্যা বাড়লেও আগে ৭/৮টি ড্রেজারে আমাদের যে পরিমাণ জনবল ছিল এখনও তা রয়ে গেছে। ফলে জনবলের অভাবে আমাদের দ্রুত কাজ করতে অনেক সমস্যা হয়। ড্রেজার ও সহায়ক জলযান এবং ড্রেজিং বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৬৭৭টি পদ সৃজনের নিমিত্ত প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হলে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। তখন কাজ করতে সমস্যা হবে না।
এবিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নৌপথে যে পরিমান উন্নয়ন হয়েছে তা বলার ভাষা নেই। আমাদের ড্রেজিং বিভাগের ড্রেজার ও সহায়ক জলযান পরিচালনা এবং ড্রেজিং বিভাগের কার্যক্রমের জন্য জনবল সংকট রয়েছে সে কারণে ৬৭৭টি পদ সৃজনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়েছে। ড্রেজিং বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৬৭৭টি পদ সৃজনে অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন হলে এ সমস্যা থাকছে না।
বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. আবদুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, আগে আমাদের ৭টি ড্রেজার ছিল তখন জনবল ছিল প্রায় সাড়ে তিন শত। বর্তমানে ৪৫টি ড্রেজার রয়েছে। নতুন করে আগামী বছর আরো ৩৫টি ড্রেজার যুক্ত হবে। তিনি বলেন, আমাদের ড্রেজারের সংখ্যা বাড়লেও আগে ৭/৮টি ড্রেজারে আমাদের যে পরিমাণ জনবল ছিল এখনও তা রয়ে গেছে। এখন আমি যে ড্রেজারগুলো মেরামত, সংরক্ষণ ও অপারেশনে যাবো, তার লোক আমার অধিদফতরে নেই। ফলে জনবলের অভাবে আমাদের দ্রত কাজ করতে অনেক সমস্যা হয়।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহা: আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর অধীনের ২০টি ড্রেজারসহ সহায়ক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং ১০টি ড্রেজারসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প দুইটির অধিনে সংগৃহীত-সংগীতব্য ড্রেজার ও সহায়ক জলযান এবং ড্রেজিং বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৬৭৭টি পদ সৃজনের নিমিত্ত প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিদেশ ক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের (পরিকল্পনা) উন্নয়ন শাখর চিঠিতে বলা হয়, দেশের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথের নাব্য বাড়ানোর মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ১৭৮টি নদী খননের (ড্রেজিং) কাজ শেষ করতে চায় সংস্থাটি। এতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, হাওর, পার্বত্য ও দক্ষিণাঞ্চলের ৮০টি নদনদী। এর মধ্যে বরিশাল ও খুলনা বিভাগে রয়েছে অর্ধশত নদী খনন। এ কর্মযজ্ঞে মোট ব্যয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। যদিও এত বিশাল নৌপথ খনন করার মতো সক্ষমতা ও জনবল এই মুহূর্তে সংস্থাটির নেই। এদিকে ড্রেজিং কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে তদারকিও বাড়িয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। নদী খননের আগে ও পরে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করে রেকর্ড রাখা বাধ্যতামূলক করে একটি পরিপত্র জারি করেছে। এ পরিপত্রে নদী খননে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ১৬ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশে যেভাবে রেল ও সড়কপথের উন্নয়ন হয়েছে সেইভাবে নৌপথের উন্নয়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নৌপথ উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় হাওরের নদীগুলো খনন করা হবে। ফলে হাওরের সঙ্গে ঢাকার নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে কিছু নদী খনন করা হবে। নৌপথগুলো ড্রেজিং করা হলে গভীরতা বাড়বে। ফলে সারাবছর নৌযান চলাচল, বন্যার প্রবণতা হ্রাস, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষি ও সেচ কাজে সহায়ক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে জনবল নিয়োগ দিতে চায় সংস্থাটি।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) মো. ছাইদুর রহমান বলেন, মূলত বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে আমাদের দেশের নদ-নদীর প্রচুর বালু বা পলিমাটি বঙ্গোপসাগরে যায়। হিসাব অনুযায়ী ৭০ শতাংশ বালু বঙ্গোপসাগরে যায়। বাকি ৩০ শতাংশ বালু আমাদের অভ্যন্তরীণ নদনদীতে থেকে যায়। যাওয়া ৩০ শতাংশের কারণে প্রতিবছর নৌরুট রক্ষায় মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। কিন্তু জনবল সঙ্কটে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিআইডব্লিউটিএ

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ