Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একদিকে উচ্ছেদ অন্যদিকে দখল

নদ-নদীর তীর রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএ’র অভিযান

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:১৯ এএম

এ যেন উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা চলছে। একদিকে দখলমুক্তকরণে ঢাক ঢোল পিটিয়ে উচ্ছেদ, অন্যদিকে আবার দখল। নদী তীর, ভূমি দখলে সর্বত্রই অভিন্ন চিত্র। বারবার উচ্ছেদের পরেও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না নদ-নদীর অবৈধ দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। এমন কি উচ্ছেদের পরেও আবার দখলের কারণে একই স্থানে বারবার অভিযান চালাতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। আর এতে অর্থ খরচের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে সময় এবং জনবল। বারবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও নদী হারায় তার স্বাভাবিক গতিপথ ও সৌন্দর্য। সেগুলো আবারও বেদখলে চলে যায়। এজন্য প্রভাবশালী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করছে বিআইডবিøউটিএ।

জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এরই মাঝে নদীগুলোর ব্যাপারে সরকার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে। নদী দখলের খবর পেলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। অন্যদিকে সরকার আন্তরিক হলে ঢাকার চার নদীর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য অবশ্যই ফেরানো সম্ভব।
পরিবেশবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্ছেদের পর তা রক্ষণাবেক্ষণে গঠন করতে হবে আলাদা কমিটি। কমিটিকে এ গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দেখভাল করতে হবে। মাত্র ছয় মাস আগেই উত্তরার ধৌড় এলাকায় তুরাগ নদের এই অংশটিতে অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করে বিআইডবিøউটিএ। কিছুদিনের মধ্যেই বিশাল এই এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে আবারো গড়ে উঠে কাঁচা বাজার। এমনকি ছয় মাস পরে এখানে আবারো অভিযান চালিয়ে প্রায় আড়াই একর জমি দখলমুক্ত করে বিআইডবিøউটিএ। আর গুঁড়িয়ে দেয়া হয় প্রায় দুইশোটি কাঁচা স্থাপনা।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, নদ-নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে সরকার যতটা উদ্যোগী ঠিক তেমনিভাবে নদীর দূষণ রোধে সরকারের ততটা কর্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। ওদিকে টঙ্গি কাঁচাবারের ভবনটি এর আগেও ভাঙ্গা হয়েছিল দুইবার। কিন্তু দুই মাস আগে প্রথমবার ভবনটির একপাশ ভেঙ্গেছিল বিআইডবিøটিএ। তার কিছুদিন পর অন্য এক অংশ ভাঙে জেলা প্রশাসন। সময় চেয়েও নিজ দায়িত্বে না সরানোয় ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয় বিআইডবিøউটিএ।

জানা গেছে, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নদী দখলের মহোৎসব চলছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে। নদীর তীরভ‚মি দখল করে নানা স্থাপনা গড়ে তুলেছিল প্রভাবশালীরা। ফলে নদী হারায় তার স্বাভাবিক গতিপথ ও সৌন্দর্য। নদীর হারানো রূপ ফিরিয়ে আনতে গত বছরের ২৯ জানুয়ারি আটঘাঁট বেঁধে নামে বিআইডবিøউটিএ)। ঢাকা নদীবন্দর থেকে শুরু হয় নদী উদ্ধারের কর্মযজ্ঞ। নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। উচ্ছেদে ভাঙা পড়ে প্রভাবশালী সাংসদ, দুদক কর্মকর্তাসহ নানা প্রভাবশালী ব্যক্তির আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। ভাঙা পড়ে সরকারি সেবা সংস্থা বিটিসিএলের ভবন। আমিন- মোমিন হাউজিং নামের হাউজিং কোম্পানি তুরাগ নদের একটি চ্যানেল দখল করে সেখানে বিশাল হাউজিং গড়ে তুলেছিল। সেটি উচ্ছেদের পর পুরো হাউজিংটি খনন করে পুনরায় পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনে বিআইডবিøউটিএ। এছাড়াও দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন হাউজিং প্রতিষ্ঠানের গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ২০১৯ সাল ঢাকা নদী বন্দরের জন্য সর্বজনীন প্রত্যয়ের বছর বলে দাবি করেছে বিআইডবিøউটিএ। গত এক বছরে চার পর্বে পরিচালিত ৫০ দিনের উচ্ছেদ অভিযানে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট চার হাজার ৭৭২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে উদ্ধার হয় তীরভ‚মির ১২১ একর জায়গা। এসময় উচ্ছেদের পাশাপাশি দখলদারদের জরিমানাও করা হয়েছে। উচ্ছেদকৃত মালামাল উচ্ছেদস্থলেই নিলামে বিক্রি করা হয়।

উচ্ছেদের পর পুনরায় দখল হয়ে যায় তুরাগ তীর। সে অংশটি উদ্ধারে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আরও একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিআইডবিøউটিএ। বাকি অংশগুলোতেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো শুরু হয়েছে বলে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন বিআইডবিøউটিএ›র যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন।
পরিচালিত অভিযানে একাধিকবার বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে সংস্থাটিকে। দখলদারদের হামলায় আহত হয়েছেন বিআইডবিøউটিএ›র বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। বুড়িগঙ্গার তীরে উচ্ছেদ অভিযানকালে দখলদারদের হামলায় আহত হয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান। হামলা হয়েছে উচ্ছেদে নেতৃত্বদানকারী সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিনের ওপর। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। উচ্ছেদের পাশাপাশি নদীকে তার হারানো রূপ ফিরিয়ে দিতে কাজ করছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে নদীতীরে সীমানা খুঁটি সংস্থানের কাজ শেষের পথে। এরপর তীরভ‚মিতে হাঁটার রাস্তা তৈরি, সবুজায়ন, লাইটিং, ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণসহ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদী ও শীতলক্ষ্যা নদীকে বিনোদনের স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

আরিফ উদ্দিন বলেন, দখলে-দূষণে ঢাকার চারপাশের মুমূর্ষু নদীগুলোকে উদ্ধারে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ববধায়নে বিআইডবিøউটিএ’র নেতৃত্বে গত বছর ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল নদী-মুক্তযুদ্ধ। আমরা এখনো মাঝ দরিয়ায়। যুদ্ধ এখনো চলছে। দরিয়া পাড়ি দিয়ে তীরে পৌঁছাতেই হবে আমাদের। এর কোনো বিকল্প নেই। পিছু হটার সুযোগ নেই। দেশপ্রেম, সাহস, সততা, উদ্যম আর আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে এ যুদ্ধে জিততেই হবে আমাদের। নইলে যে ক্ষমা করবে না বাংলাদেশ। ক্ষমা করবে না দুগ্ধদায়িনী মা-রূপী আমাদের এই নদীগুলো। তিনি বলেন, নর্দমায় পরিণত হয়ে যাওয়া ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল-দূষণমুক্ত করে পরিচ্ছন্ন প্রবহমান নদীতে পরিণত করে নদীর পাড়ে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলে ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ইনকিলাবকে বলেন, সর্বত্রই দখলদাররা নদ-নদী দখলের সময় ধর্মানুভূতিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে। ২০০৯ সালে রাজধানীসহ আশপাশের চারটি নদী অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে উদ্ধার করতে নির্দেশনা দেন হাইকোট। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই নিত্য নতুন নামে দখল হচ্ছে নদীর জায়গা।

এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে উপজেলা নদী রক্ষা কমিটি আয়োজিত এক বিশেষ সভায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। প্রবহমান রাখতে হবে নদীগুলোকে। এরই মাঝে নদী দখলকারীদের তালিকা সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সরকার এটি নিয়ে কাজ করছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। ফলে নদীগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এরই মাঝে নদীগুলোর ব্যাপারে সরকার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি নদী রক্ষায় কাজ করছে। নদী দখলের খবর পেলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।



 

Show all comments
  • Abu Baker Siddiqui ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
    Walk way should be made to avoid recapture of the land again by the public.The Authority should be prompt in this regard.
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Hasnat Md. Rafee ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
    ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আগরতলা সড়কের আখাউড়া বাইপাস মোড় কেন অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে পারে না? সেখানে দিনের পর দিন অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়ে চললেও তা যেন দেখার কেউ নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Akib Rahman ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
    তাহলে প্রশাসন কি করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mubarak Hossian ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
    সব কিছু দেখতে নেই তাহলে বদলী হয়রানির ভয় আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Syed Ershad ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৭ এএম says : 0
    সহমত । সার্বজনীন স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৭ এএম says : 0
    সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ভূমিদস্যুরা পিছু হঠতে বাধ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Elias ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৭ এএম says : 0
    উচ্ছেদ করতেই হবে! তাদের সাহস কেমন করে হয় বুঝি না!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিআইডব্লিউটিএ

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ