পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দল হিসাবে আমাদের বিশ্বাস স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া দেশ অগ্রসর হতে পারে না। তাই আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করার জন্য করা সকল ধরনের নিবর্তনমূলক আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গতকাল বিএনপি আয়োজিত ‘গণতন্ত্র হত্যায় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও প্রচার সেলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির যে রাজনৈতিক দর্শন বা আদর্শ তার অন্যতম প্রধান বিষয় হলো বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অবারিত করেছিলেন। আজকে আমাদের পরিষ্কার ঘোষণা, বিএনপি সরকার গঠন করলে মুক্ত গণমাধ্যমের অন্তরায় ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’সহ সকল ধরনের নিবর্তনমূলক আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করব। গণমাধ্যমে প্রকাশিত যেকোনো বিষয় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা সংস্থা প্রেস কাউন্সিলে ফয়সালা না করে কোনোভাবেই যেন আদালতে মামলা দায়ের করতে না পারেন সেটা নিশ্চিত করা হবে। সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড সকল গণমাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি যে, গণমাধ্যমকে স্বাবলম্বী করার জন্য বিএনপি বিজ্ঞাপনের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট সংখ্যক প্রকাশনা, প্রচারণা কিংবা টিআরপির ভিত্তিতে গণমাধ্যমগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার চিন্তাও বিএনপির রয়েছে। দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে দেশীয় গণমাধ্যমগুলোকে অগ্রাধিকার দেয় সেটি নিশ্চিত করার পরিকল্পনাও বিএনপি রয়েছে।
তিনি বলেন, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে দেশে স্বৈরশাসন চলছে। যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তাকে শুধু স্বৈরশাসন বললে কম কলা হবে। এটা চরম ফ্যাসিবাদ। এই ফ্যাসিবাদী শাসনে আজকে গোটা জাতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে, বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নানা আইন করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় শেষ পেরেক টুকে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ অবস্থায় এই জাতি বা রাষ্ট্রকে উদ্ধার করতে হলে একটা ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য সকল জনগণের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। তা যদি আমরা না পারি তাহলে এখান থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো পথ নেই। সেজন্য আমাদের সকলের দায়িত্ব, সাংবাদিকরা তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, রাজনীতিবিদরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, এর মধ্যে একটা ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা যেন দেশে গণতন্ত্রকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারি সেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা খুব আশাবাদী। বাংলাদেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয়নি। টানেলের শেষ প্রান্তে আলো দেখছি বলেই পুনরায় আমরা উৎসাহিত বা উৎফুল্ল হচ্ছি তাই নয়। আমরা সব সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবার জন্য কাজ করেছি, কাজ করে যাচ্ছি। সরকারে যখন ছিলাম তখনও করেছি, সরকারে নেই এখনও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ব্যর্থ হতে পারে না। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল হবেই।
দৈনিক দিনকালের সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী বলেন, সরকারের নিপিড়ন নির্যাতন আজ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সিলেটে বন্যার্ত মানুষ ত্রাণ নিতে গেলে তাদের উপরেও পুলিশ লাঠি চার্জ করেছে। এটা অমানবিক। ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধাওয়া দিত তাহলে তাদের উপর লাঠি চার্জ করতে পারতো না। উল্টো ত্রাণ ফেলে পালাতো। তাই এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধাওয়া দেওয়ার। তা না হলে মুক্তির আর কোন উপায় নেই।
মতবিনিময় সভায় প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে একটা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়েছে। তাতে কিছু অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাদের অঙ্গীকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে পারি, আশ্বস্ত হওয়ারও চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আমাদের অতীত আশ্বস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়, বর্তমান তো নয়ই। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমবান্ধব ছিল না, এখনো নেই। স্বাধীনতার পরে যারাই সরকারে এসেছে- প্রথমে আওয়ামী লীগ সরকার, পরবর্তীকালে বিএনপি, এরপর হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অথবা জাতীয় পার্টি, পরে আবার বিএনপি, আবার আওয়ামী লীগ, আবার বিএনপি এবং এখন আওয়ামী লীগ। সব সরকারই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কম বেশি দলন করেছে। তারপরও বিএনপি আজকে যে অঙ্গীকার করেছে তা তারা পূরণ করবে এমনটাই আশা করি।
যুগান্তরের সিনিয়র সহকারি সম্পাদক মাহবুব কামাল বলেন, বাংলাদেশের প্রেসের অবস্থা খুবই খারাপ। এর কারণটা হচ্ছে উইপেন অব ’ল অর্থাৎ আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। বাংলাদেশে অসংখ্য আইন আছে যা আমাদের দেশে স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি, প্রত্যেকটি আইন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের জন্য পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে হুমকি স্বরূপ। রিপোর্টার্স ইউদাউট বর্ডারের জরিপে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অবস্থান যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেরও নিচে। বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম। এ থেকেই বাংলাদেশের সংবাদ পত্রের বর্তমান অবস্থা স্পষ্ট হয়ে যায়।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কামাল উদ্দিন সবুজ, কবি আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, নুরুল আমিন রোকন, মো. বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, শহীদুল ইসলাম, সরদার ফরিদ আহমদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, মুরসালিন নোমানী, প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।