Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে পানিবন্দি মানুষের কাছে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দিন

খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই

ডি এম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দুর্গত এলাকার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। পীর সাহেব বন্যা দুর্গত এলাকার দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য দলের নেতা কর্মী এবং বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানান। পীর সাহেব প্রয়োজনে হেলিকপ্টার যোগে সিলেট অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের কাছে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, একটি অপশক্তি ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে, তারা সাম্প্রদায়িকতাকে কৃত্রিমভাবে উপস্থাপন করে বৈশ্বিক হানাদার শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরণের দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকান্ড রুখে দিতে হবে। জনগণ আজ ভালো নেই, সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছে না। কারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, গ্যাসসহ সকল নির্মাণসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার এ ব্যপারে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে কিন্তু প্রতিবাদও করতে পারছে না হামলা-মামলা ও হয়রানির ভয়ে।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করেছে। সবাই জনগণের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণ-মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশ শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করেছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং সুদ ও ঘুষকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শাসক শ্রেণীর এহেন কর্মকান্ডের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। জাতিকে নেশাগ্রস্থ করতে মদের বিধিমালা প্রণয়ন করতে সরকার ও তাদের দোসররা মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশ আর এভাবে চলতে পারে না।

গতকাল শনিবার দুপুরে খুলনা রেলষ্টেশন সংলগ্ন কদমতলা রোডে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন। কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের নায়েবে আমীর প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সরকারীদলের সমর্থনপুষ্ট মধ্যস্বত্বভোগীরা স্তরে স্তরে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করে। পথে-ঘাটে পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানরা চাঁদাবাজি করে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী করার ক্ষেত্রে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের কারসাজী করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। তিনি বলেন সিন্ডিকেটবাজি বন্ধ করতে আইন শৃংখলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবসায়ীদের দৌরত্ব কমাতে হবে। যেকোন মূল্যে খাদ্যদ্রব্যের দাম সহনীয় করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ আতঙ্কিত। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরাও আজ চিন্তিত। দেশময় সংঘাত আর সহিংসতার অশনি সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদে একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করার পর থেকেই রাজনৈতিক সঙ্কটে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে ফেলেছে। বিগত ১৩ বছরে দেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। ক্ষমতাসীনরা তাদের দলীয় লোকদেরকে নির্বাচিত করার জন্যে এহেন কাজ নেই যা করেনি। নির্লজ্জভাবে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন কেউই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। ফলে নির্বাচনকে মানুষ এখন প্রহসন এবং তামাশা মনে করে। আগামীতে মানুষ আর তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। রাতের ভোটে নির্বাচিত বর্তমান সংসদের কোন নৈতিক বৈধতা নেই। এই অবৈধ সংসদ বহাল রেখে কোন নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আমরা দেশে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা, জনমনে উদ্বেগ উৎকন্ঠা দূর, মানুষকে স্বস্তি ও নিরাপত্তা দিতে চাই। ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মানবীয় ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চাই। প্রতিহিংসা জিঘাংসা আর ধ্বংসের রাজনীতির চির অবসান চাই। এ জন্যে আমরা কালজয়ী আদর্শ ইসলামের আলোকে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই।

তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন আপনারা অন্যায়-অবিচার আর জুলুমকারীদেরকে বর্জন করুন। দুর্নীতিবাজদেরকে চিরতরে প্রত্যাখ্যান করুন। ন্যায়ের পক্ষে এবং কল্যাণের পক্ষে অবস্থান নিন।
দেশের সকল স্তরের ওলামা মাশায়েখ, অপরাপর ভাতৃপ্রতিম ইসলামী সংগঠন এবং সকল মতের ইসলামপন্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইসলামকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেয়ার জন্যে একটি কার্যকর ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, রাষ্ট্রের রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি। বিদেশে টাকা পাচারকারীদের ব্যাপারে কোন বক্তব্য নেই। অথচ একটি পক্ষ দেশকে অস্থিতিশীল করতে মাঠে নেমেছে। সরকার যদি ভোটের অধিকার বারংবার কেড়ে নিতে চান তাহলে বাংলার মানুষ আপনাদেরও উৎখাত করে ছাড়বে। আমরা কোন হামলা, মামলা বা বুলেটের ভয় করি না। বাংলার মানুষ আইয়ুব খানের বুলেটের ভয় পায় নাই, আপনাদের এসব জুলুম নির্যাতনকেও ভয় পায় না। তিনি বলেন, দেশে কোথাও মদের দোকান খোলা হলে বাংলাদেশের জনতা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, মদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কঠোর অবস্থান ছিলো। তাঁর কণ্যার সময় মদের আইন পাশ হতে পারে না। তিনি কারাবন্দি সকল আলেমের মুক্তি চান। বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাদের, অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন,মাওলানা শোয়াইব হোসেন দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মুফতী মোস্তফা কামাল, ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ, মুফতী আমানুল্লাহ, অধ্যাপক মাওলনা আব্দুল্লাহ ইমরান, অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম, মাওলানা তাসনীম, ডা. কাজী ওয়ায়েস কুরনী, মনিরুজ্জামান, মুহা. আইউব আলী মিয়া, হাসানুজ্জামান সজিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমাদ আলী, ডা. এইচ এম মোমতাজুল করিম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, আল: আব্দুল হালীম, শামসুদ্দিন মোল্লা, মুফতী মাহবুবুর রহমান মাওলনা আবু সাইদ শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, মাওলানা দ্বীন ইসলাম, মুফতী রবিউল ইসলাম রাফে, মাওলানা শাইখুল ইসলাম বিন হাসান, আবুল কালাম আজাদ, জাহিদুল ইসলাম, মুহা. মেহেদী হাসান, আলহাজ্ব আবুল কাশেম, মুহা.সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী, মুফতি আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ নোমান, গাজী ফেরদাউস সুমন, মাওলানা হারুন অর রশিদ, মাওলানা এস.কে নাজমুল হাসান, মুফতি শেখ আমীরুল ইসলাম, এইচ এম খালিদ সাইফুল্লাহ, মুহা. মইনুদ্দিন, ইনামুল হাসান সাইদ, আমজাদ হোসেন, হাফেজ আ: লতিফ, আবু তাহের, মাল্লা রবিউল ইসলাম তুষার, ফরহাদ মোল্লা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মাওলানা হাফিজুর রহমান, হায়দার আলী, মুহা. ইমরান হোসেন মিয়া গাজী মুরাদ হোসেন মুফতী হেলাল উদ্দিন শিকারী মাওলানা মাহবুবুর রহমান মুফতী ফজলুল হক। সমাবেশ পরিচালনা করেন শেখ মো. নাসির উদ্দিন, হাফেজ আসাদুল্লাহ গালীব ও মুফতী ইমরান হোসাইন। সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই কতিপয় দাবি পেশ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পীর সাহেব চরমোনাই


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ