Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশজুড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

ঢাকা বিশ্বের অন্যতম সমস্যাজর্জরিত মহানগরী। এ পরিচিতি গর্বের নয়, স্বস্তির তো নয়ই। বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য ১৪০টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। ভয়াবহ বায়ুদূষণের নগরী হিসেবে ঢাকা পাকাপোক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। বায়ুদূষণ কেড়ে নিচ্ছে মানুষের আয়ু। শব্দদূষণ এ মহানগরীর হাজার হাজার মানুষের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে দারুণভাবে।

ঢাকা মহানগরী আজ থেকে ৫০ বছর আগেও ছিল সবুজসমৃদ্ধ এক জনপদ। সে নগরী ক্রমেই ইট-কংক্রিটের স্তূপে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম নোংরা নগরী হিসেবে ঢাকার পরিচিতি কিছুতেই হটানো যাচ্ছে না। একসময় ঢাকায় ‘রাতে মশা দিনে মাছি, এ নিয়ে ঢাকায় আছি’ কথাটি প্রবাদবাক্য হয়ে উঠেছিল। মাছি উৎপাদনের উৎসগুলো বন্ধ হওয়ায় রাজধানীর কোথাও মাছির উপদ্রব নেই, এটি সত্যি। তবে মশার উপদ্রব সেই সাত দশক আগের মতোই প্রকট। রাজধানী ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ যানজটের নগরীগুলোর একটি। ফুটপাথেও নেই হাঁটার পরিবেশ। দূষণ ও অস্বস্তিকর জীবনের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। বসবাসের অযোগ্য নগরী, ইট-কংক্রিটের বস্তি ইত্যাদি নানা অভিধা সত্ত্বেও ঢাকার জনসংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। কিছুতে ঠেকানো যাচ্ছে না ঢাকামুখী জন¯্রােত। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এখন শহরবাসী। এ সংখ্যার ৬০ ভাগ আবার বাস করছে চারটি বড় শহরে। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে শহর এলাকার জনসংখ্যা। এ হার অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকার জনসংখ্যা ২ কোটি ৮০ লাখে পৌঁছাবে। বসবাসের অযোগ্য নগরী হওয়া সত্ত্বেও মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে পেটের দায়ে। কর্মসংস্থানের সিংহভাগ সুযোগ ঢাকায় হওয়ায় বাধ্য হয়ে আসছে তারা। এ প্রবণতা ঠেকাতে রাজধানীর বাইরে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। ছোট ছোট শহরগুলোতেও নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির নিতে হবে উদ্যোগ।
আসলে পরিকল্পিত নগর বলতে বুঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি, যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। কোথায় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল হবে, অফিস-আদালত কোথায়, কোথায় বসবাসের জায়গা সবকিছুই হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হলে প্রত্যেক নগরেই মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ, গ্রাম কিংবা মফঃস্বলের তুলনায় উন্নততর, স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এই নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে উঠলে তাতে নাগরিকদের জীবন অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। জনজীবনকে তা বিপর্যস্ত করে ফেলে। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না।

আমাদের রাজধানী শহর বসবাসের অনুপযোগী- এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! একটি শহরের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে নিয়ামকগুলো কাজ করে এরমধ্যে রয়েছে, নগরীতে বসবাসের সুযোগ সুবিধা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা, অপরাধের হার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোর গুণগতমান, পানি সরবরাহের মান, খাদ্য, পানীয়, ভোক্তাপণ্য এবং সেবা, সরকারি বাসগৃহের প্রাপ্যতা ইত্যাদি। এসব দিক থেকে ঢাকাসহ আমাদের নগরগুলোর কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আন্তর্জাতিক অনেক জরিপে রাজধানী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাই, এখানে বসবাসের মতো অবস্থা নেই। তারপর হচ্ছে যানজটের মতো একটা বড় সমস্যা। এই সমস্যাগুলো দূর করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাই। অনেকগুলো ফ্লাইওভার করা হয়েছে, ইউলুপ করা হয়েছে। এখন আবার মেট্রো রেলের কাজ হচ্ছে, হয়তো দ্রুতই কাজ শেষ হবে। কিন্তু ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে শুধু বিল্ডিং করলে হবে না। একে বাসযোগ্য করতে অবশ্যই সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার আয়তন বাড়ছে।

পরিকল্পনা না থাকলে কিছু করা সম্ভব হবে না। রাজধানীতে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। শুধু রমনা পার্কের গাছ দেখে, গাছ আছে বলে সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। রাস্তার পাশেও বড় বড় গাছ থাকতে হবে। বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে অবশ্যই রাজউকের দেওয়া প্ল্যান বা নকশা অনুসারে। ভবনের পাশে খালি স্থান না রেখে ইচ্ছামতো ভবন করা যাবে না।

সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। নাগরিক সুযোগ সুবিধার অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত। এছাড়া ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিপূর্বে অন্য জরিপে প্রকাশ পেয়েছে ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থায়ই এই জরিপের সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট। এছাড়া যানজট, যানবাহন এবং কলকারখানার কালো ধোঁয়া, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিম্নমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যূজ্ব এই শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুতেই পরিকল্পনাহীনতার ছাপ। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের প্রাণকেন্দ্র। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এই শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বিশিষ্টতা হারাচ্ছে। এক জগাখিচুড়ি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য শহরকেও পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুলতে হবে। সুষম উন্নয়ন করতে হবে গ্রামেও। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কর্মসংস্থান


আরও
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->