শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
পূর্ব প্রকাশিতের পর
কারা কবে এ প্রথা শুরু করেন তার কোন লিখিত দলিল আজও জানা যায়নি। ‘নব-বিবাহিতা বধূ বাবার বাড়িতে নাইওর যাবে।’ এই বাক্যটি শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহ হতেই নব-বিবাহিত পরিবারের সবার মুখে মুখে থাকে। জানা যায়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে এবং ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিনাজপুর মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের কোনো কোনো অংশে এই প্রথা চালু আছে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি জেলার কোনো কোনো অংশে এই প্রথা বাঙালি সমাজে চালু রয়েছে বলে জানা যায়। আধুনিক যুগে ‘ভাদর কাটানি’র পক্ষে নিরপেক্ষ যুক্তি-তর্ক যদিও নাই, তবুও ভাদর কাটানি উৎসব থেমে নেই। এ প্রথা থেকেই নাইওর শব্দের উৎপত্তি বলে অনেকে বলে থাকেন।
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক আমিনুল ইসলামকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ভাদর কাটানি মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো ধর্মীয় বিষয় না হলেও এ অঞ্চলে প্রথাটি মুসলিম সমাজেও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। একসময় সম্ভ্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায় এ উৎসবকে জাঁকজমকভাবে পালন করত। তাদের এ রেওয়াজ ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে প্রভাবিত করে বলে তিনি লেখককে জানান।
একসময় নববধূরা গরু-মহিষের গাড়িতে করে বাবার বাড়িতে নাইওর যেতেন। এখন তাঁরা মাইক্রোবাস, ইজিবাইকে করে বাবার বাড়ি যান। আমার পরিস্কার মনে আছে আমি যখন নাইওর আনতে যেতাম আমরা খুবই আনন্দের সাথে গরুর গাড়িতে টোপর সাজিয়ে যেতাম, কখনো কখনো অবশ্য মহিষের গাড়ীও ব্যবহার করা হতো। ফলে এলাকায় মোটামুটি সরগরম পড়ে যেতো যে অমুকের বউ বা বেটির নাইওর নিতে আসছে। ফলে নাইওর এর সঙ্গে সামাজিক সম্মান ও প্রতিপত্তির যোগসাজেশ আছে বলে মনে করা হয়। এটি গেরস্তের সম্মানকেও বাড়িয়ে দিতো বলে এলাকার মরুব্বিরা লেখককে বলেন।
এই উৎসব পালনকারী বেশকি’জন নারীর সাথে আমি কথা বলেছিলাম। সেই সব নারী’রা জানান, শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহে নববধূকে আনতে তাঁর ছোট ভাই-বোন (কখনো কখনো ভাতিজা-ভাতিজি কিংবা ভাগ্নে-ভাগনি), বান্ধবী, নানি, চাচি, ফুফু ও প্রতিবেশীরা বরের বাড়িতে যান, অবশ্য এটাই রীতি। এ সময় তাঁরা সামর্থ্য অনুযায়ী মুড়ি, পায়েস, নানা রকম ফলসহ মিষ্টি সঙ্গে নেন। ওই দিন বরপক্ষ তাদের সাধ্যমতো অতিথিদের আপ্যায়ন করে নববধূকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। নববধূ মা-বাবার বাড়িতে তিন দিন অথবা সাত দিন থাকেন। এরপর বরপক্ষের লোকজনও বিভিন্ন পদের খাবার নিয়ে নববধূকে আনতে যায়। সাধারণত, বিয়ের পর প্রথম ভাদ্র মাসে এই উৎসব পালন করেন নববধূরা বলে এটি ভাদর কাটানি বলে পরিচিত।
জরিপ কালীণ সময়ে কথা হয় পঞ্চগড় শহরের কায়েত পাড়া এলাকার তরুণী সিভানা নাসরিনের সাথে, সে জানায় দেড় মাস আগে বিয়ে হয় তার। নাসরিন বলেন, ভাদর কাটানি সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না তিনি। তাঁর মা-বাবা, দাদা-দাদিরাও এই রীতি পালন করেছেন। সেই হিসেবে তাঁকেও বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাদর কাটানি উৎসব চালু আছে, থাকবে হয়তো আরও বহুদিন। যদিও এর ব্যাপ্তি ও দীপ্তি দুটোই কমেছে এবং কমছে দিনকে দিন। বৈচিত্র্যময় বাঙালির জীবন ধরায় ভাদর কাটানি এক অন্যরকম সাংস্কৃতিক উপাদান। (সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।