Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনের অবস্থা ধারণার থেকেও সঙ্গিন

টাইম | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøলোদিমির জেলেনস্কির সফল আবেদন এবং আন্তর্জাতিক সামরিক ও মানবিক সহায়তায় ভরপুর দেশটির অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পতন দুর্ভাগ্যবশত ঠেকাতে পারেনি। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে, কিন্তু তাতে দেশটির কোনো সামরিক অগ্রগতি হয়নি। রামিয়ান বাহিনী খেরসন, মারিউপোল এবং প্রায় পুরো ডনবাস অঞ্চল ধরে রেখেছে। জাপোরিঝিয়ে অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশও তাদের দখলে রয়েছে। ইউক্রেনকে অনেকেই এই বলে যুদ্ধে উৎসাহ দিচ্ছেন যে, হেরে না যাওয়াটা জয়ী হওয়ার শামিল। তবে দেশটির সামগ্রিক পরিস্থিতি বলছে যে, এই তথাকথিত ‘হেরে না যাওয়া’র প্রবোধ ইউক্রেনের হার ঠেকাতে পারছে না।

আড়াই মাসেরও বেশি সময়ের যুদ্ধে ইউক্রেন তার অন্তত ১০ শতায়শ সেনা হারিয়েছে। যদিও দেশটিকে অন্তত ৩১টি পশ্চিমা সরকার অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরবরাহ দিয়ে সর্বাত্মক সহযোহিতা করেছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, কর্মকর্তাগণ এবং স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধারা নীরবে স্বীকার করেছেন যে, তাদের এত সাহায্য উপলব্ধ করার ক্ষমতা নেই। কারণ, বেশিরভাগ সরঞ্জাম এবং অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য নতুন প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। একইভাবে, ১৬ হাজার বা তার বেশি বিদেশী স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধার অংশগ্রহনকে আপাত দৃষ্টিতে আশীর্বাদ মনে হলেও, বাস্তবে তাদের প্রায় কারোরই সামরিক অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ নেই। ফলে তাদের বেশিরভাগই খাবার জন্য অতিরিক্ত মুখের চেয়ে বেশিকিছু হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে ইউক্রেন টিকে আছে। কিন্তু রাশিয়ার উপর যে নিষেধাজ্ঞাগুলি জিডিপির ৭ শতাংশের এর কম সম্ভাব্য সংকোচন বলে বিবেচিত হতে পারে, তা ইউক্রেনকে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জিডিপি পতনের সম্মুখীন করেছে। ইউক্রেনের কমপক্ষে ১৭ শতাংশ ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের মারিউপোল, ওডেসা, খেরসন এবং অন্যান্য বন্দরগুলিতে অবরোধ দেশটির অর্থনীতিতে প্রতিদিন ১ শ’ ৭০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করছে। ইউক্রেনের সরবরাহ ব্যবস্থা এবং শক্তি খাতও এখন ধ্বংসের সম্মুখীন। গ্যাসের বাজারের মন্দা এবং বিনা তহবিলে দেশটি কীভাবে প্রস্তুতি নেবে, স্পষ্ট নয় যেখানে তাপমাত্রা ২০ ফারেনহাইটের নিচে নেমে যেতে পারে।
এর মধ্যে, ৬ লাখেরও বেশি নারী ও শিশু ইউক্রেন থেকে পালিয়েছে। যদি পুরুষদের যাওয়ার দেশত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে। ইউরোপের দরিদ্রতম এই দেশটি যুদ্ধের বহু আগেই মেধাহীনতার সম্মুখীন ছিল। বহু নাগরিক উন্নত জীবনের খোঁজে দেশ ছেড়ে গেছে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার এজেন্সি অনুমান, ইউক্রেনে ৪.৮ মিলিয়ন লোক চাকরি হারিয়েছে, যুদ্ধ চলতে থাকলে যা ৭ মিলিয়নে উন্নীত হবে। এবং বহু মাস যুদ্ধের পর শিশুরা বিদেশে নতুন স্কুলে মনযোগ স্থাপন করবে, মায়েরা তাদের নতুন জগতে থিতু হবে এবং তারা তাদের স্বামী এবং পিতার সাথে যোগ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। কেউ কেউ অবশ্যই ইউক্রেনে ফিরে আসবে, কিন্তু অনেকেই দেশপ্রেমের আহ্বানের চেয়ে তাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য এবং শিশুদের সুযোগকে অগ্রাধিকার দেবে।

যুদ্ধ সমাজের বুনন ছিঁড়ে দিয়েছে। রাশিয়ান ভাষার স্থানীয় ইউক্রেনীয় ভাষাভাষী, যারা জনসংখ্যার অন্তত এক তৃতীয়াংশ, তারা তাদের মাতৃভাষা ব্যবহার করতে অস্বস্তি বোধ করে, এমনকি ভয় পায়। জাতীয়তাবাদকে সামনে রাখা হলেও তাদের পারস্পারিক আস্থা ভেঙে গেছে। এখন অনেক ইউক্রেনীয়রা ভাবতে শুরু করেছে যে, দেশটি কীভাবে নিজেকে পুনর্র্নিমাণ করবে। রাশিয়া যত দ্রুতই পিছিয়ে পড়ুক না কেন, ইউক্রেনের সম্প্রদায়িক পুনর্গঠন একটি চ্যালেঞ্জ হবে। মার্কিন সরকার মে মাসে তার কিছু কূটনৈতিক কর্মীদের প্রতীকীভাবে কিয়েভে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু গুরুতর ও বিপজ্জনকভাবে দুর্বল দেশটির এখন প্রতীক এবং অস্ত্রের চেয়েও বেশি কিছু প্রয়োজন। পরাজিত না হওয়া মানে জয়ী হওয়া নয়। তাই ইউক্রেনকে প্রথমে জয়ী এবং তারপর পুনগর্ঠিত করতে সাহায্য করার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে একটি সুদীর্ঘ এবং গভীর প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন।



 

Show all comments
  • আকিব ১৬ মে, ২০২২, ১২:৪৭ এএম says : 0
    এ যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয় হবে
    Total Reply(0) Reply
  • আহমদ ১৬ মে, ২০২২, ১২:৪৯ এএম says : 0
    যুদ্ধ কারো কাম্য নয়, আমরা চাই দ্রুত তাদের এ যুদ্ধ যেন অবসান হয়
    Total Reply(0) Reply
  • আলিফ ১৬ মে, ২০২২, ১:০৬ এএম says : 0
    এ যুদ্ধের সব কিছু বিবেচনা করলে দেখা যায়, ইউক্রেনওই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাই এখনই কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা না করে যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত। নয়তো ইউক্রেনবাসীর আরো ক্ষতি হতে পারে। সাথে সাথে বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার আরো সঙ্কটে পড়তে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • আহমদ ১৬ মে, ২০২২, ১২:৫৪ এএম says : 0
    বিশ্বের মোড়লরা চায় না যে যুদ্ধ থামুক, বরং তারা অশান্তি চায় বিধায় এখনো যুদ্ধ চলছে। পশ্চিমারা ইউক্রেনের পাশে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আমার মতে এ যুদ্ধে রাশিয়ার জয় হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আনিছ ১৬ মে, ২০২২, ১২:৫৭ এএম says : 0
    রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো যাচ্ছে না,
    Total Reply(0) Reply
  • Mohmmed Dolilur ১৬ মে, ২০২২, ২:১৯ এএম says : 0
    ইউক্রেনের জেলেনসকি পাগল নাট্যকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Nasir uddin Chowdhury ১৬ মে, ২০২২, ৫:৫৬ এএম says : 0
    ন্যাটো আমেরিকা বৃটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জার্মান ও অন্যান্ন সাদা চামড়ার সরকার প্রধানগুলো ইউক্রেনের উপর একটি অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। গর্ধভ জেলনস্কি হিরো হওয়ার জন্য এই ফাঁদে পা দিয়েছে। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। মুসলিম নিধন করে যে কি কস্ট দিয়েছে সেই স্বাধ ইহুদিদের বুঝতে পারা উচিৎ। মুসলমানরা জেগে উঠবে ইনশাআল্লাহ। ইসরায়েলের পতন অবশ্যসম্ভাবী।
    Total Reply(0) Reply
  • রেজাউল করিম ১৬ মে, ২০২২, ৪:০৬ পিএম says : 0
    এ সবই আমেরিকার খেলা করা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হচ্ছে আমেরিকার পাপেট।
    Total Reply(0) Reply
  • Sheikh Shafik ১৬ মে, ২০২২, ৬:৩৯ এএম says : 0
    পশ্চিমা ঘেসা নিউজের বাইরে প্রথম কোন সত্য নিউজ পড়ে ভালো লাগলো।
    Total Reply(0) Reply
  • Mominul Hoque ১৬ মে, ২০২২, ৮:৫১ এএম says : 0
    এই যুদ্ধের মূল হোতাই হচ্ছে পশ্চিমা আর মার্কিনিরা। তারা যদি চায় যে কোন মূহুর্তে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে, কিন্তু তারা তা চায় না। এই যুদ্ধ মূলত মার্কিন-পশ্চিমাদের সাথে রাশিয়ার ‍যুদ্ধ পশ্চিমারা শুধু ইউক্রেনকে ব্যবহার করছে। “শীল পাটার ঘষা-ঘষিতে মরিচের জাত শেষ” অবস্থায় আছে ইউক্রেন। কিন্তু ইউক্রেনের কমেডিয়ানটি সেটি বুঝেনা যে একটি জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে সে কমেডি করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Monjur Hossain ১৭ মে, ২০২২, ১২:৩৭ এএম says : 0
    ১ম সারির কিছু দৈনিক পশ্চিমাদের সাথে সুর মিলিয়ে খবর পাকায়, যেটা দুঃখ্যজনক। পশ্চিমারা বাস্তবতায় শিহরিত। তারা যে অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দোকান খুলে বসেছে। ইউক্রেন এখন ৫০ বছরের বেশি সময় তাদের দাসত্ব সহ্য করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Monjur Hossain ১৭ মে, ২০২২, ১২:৩৭ এএম says : 0
    ১ম সারির কিছু দৈনিক পশ্চিমাদের সাথে সুর মিলিয়ে খবর পাকায়, যেটা দুঃখ্যজনক। পশ্চিমারা বাস্তবতায় শিহরিত। তারা যে অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দোকান খুলে বসেছে। ইউক্রেন এখন ৫০ বছরের বেশি সময় তাদের দাসত্ব সহ্য করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Masud Rana ১৭ মে, ২০২২, ৭:২৭ এএম says : 0
    আমার মনে হয় দৈনিক ইনকিলাব সত্য খবর প্রকাশ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sohel Khan ১৭ মে, ২০২২, ১০:৫০ পিএম says : 0
    একটি সুন্দর দেশ কিভাবে ধ্বংস করতে হয় তা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট থেকে শিখতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Asaduzzaman Bhuiyan ২১ মে, ২০২২, ২:০১ এএম says : 0
    আমেরিকার মত বন্ধু পেলে শত্রুর প্রয়োজন হয় না
    Total Reply(0) Reply
  • Asaduzzaman Bhuiyan ২১ মে, ২০২২, ২:০১ এএম says : 0
    আমেরিকার মত বন্ধু পেলে শত্রুর প্রয়োজন হয় না
    Total Reply(0) Reply
  • খাঁন রশ্মি পাঠান শাহ ২১ মে, ২০২২, ৫:০৭ পিএম says : 0
    যে জাতি যুদ্ধে যতোটা পারদর্শি এবং গুনবান সে জাতি টিকে থাকার ক্ষেত্রে ততোটাই যোগ্যতা সম্পন্ন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেনের রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ