মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøলোদিমির জেলেনস্কির সফল আবেদন এবং আন্তর্জাতিক সামরিক ও মানবিক সহায়তায় ভরপুর দেশটির অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পতন দুর্ভাগ্যবশত ঠেকাতে পারেনি। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে, কিন্তু তাতে দেশটির কোনো সামরিক অগ্রগতি হয়নি। রামিয়ান বাহিনী খেরসন, মারিউপোল এবং প্রায় পুরো ডনবাস অঞ্চল ধরে রেখেছে। জাপোরিঝিয়ে অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশও তাদের দখলে রয়েছে। ইউক্রেনকে অনেকেই এই বলে যুদ্ধে উৎসাহ দিচ্ছেন যে, হেরে না যাওয়াটা জয়ী হওয়ার শামিল। তবে দেশটির সামগ্রিক পরিস্থিতি বলছে যে, এই তথাকথিত ‘হেরে না যাওয়া’র প্রবোধ ইউক্রেনের হার ঠেকাতে পারছে না।
আড়াই মাসেরও বেশি সময়ের যুদ্ধে ইউক্রেন তার অন্তত ১০ শতায়শ সেনা হারিয়েছে। যদিও দেশটিকে অন্তত ৩১টি পশ্চিমা সরকার অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরবরাহ দিয়ে সর্বাত্মক সহযোহিতা করেছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, কর্মকর্তাগণ এবং স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধারা নীরবে স্বীকার করেছেন যে, তাদের এত সাহায্য উপলব্ধ করার ক্ষমতা নেই। কারণ, বেশিরভাগ সরঞ্জাম এবং অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য নতুন প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। একইভাবে, ১৬ হাজার বা তার বেশি বিদেশী স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধার অংশগ্রহনকে আপাত দৃষ্টিতে আশীর্বাদ মনে হলেও, বাস্তবে তাদের প্রায় কারোরই সামরিক অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ নেই। ফলে তাদের বেশিরভাগই খাবার জন্য অতিরিক্ত মুখের চেয়ে বেশিকিছু হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে ইউক্রেন টিকে আছে। কিন্তু রাশিয়ার উপর যে নিষেধাজ্ঞাগুলি জিডিপির ৭ শতাংশের এর কম সম্ভাব্য সংকোচন বলে বিবেচিত হতে পারে, তা ইউক্রেনকে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জিডিপি পতনের সম্মুখীন করেছে। ইউক্রেনের কমপক্ষে ১৭ শতাংশ ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের মারিউপোল, ওডেসা, খেরসন এবং অন্যান্য বন্দরগুলিতে অবরোধ দেশটির অর্থনীতিতে প্রতিদিন ১ শ’ ৭০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করছে। ইউক্রেনের সরবরাহ ব্যবস্থা এবং শক্তি খাতও এখন ধ্বংসের সম্মুখীন। গ্যাসের বাজারের মন্দা এবং বিনা তহবিলে দেশটি কীভাবে প্রস্তুতি নেবে, স্পষ্ট নয় যেখানে তাপমাত্রা ২০ ফারেনহাইটের নিচে নেমে যেতে পারে।
এর মধ্যে, ৬ লাখেরও বেশি নারী ও শিশু ইউক্রেন থেকে পালিয়েছে। যদি পুরুষদের যাওয়ার দেশত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে। ইউরোপের দরিদ্রতম এই দেশটি যুদ্ধের বহু আগেই মেধাহীনতার সম্মুখীন ছিল। বহু নাগরিক উন্নত জীবনের খোঁজে দেশ ছেড়ে গেছে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার এজেন্সি অনুমান, ইউক্রেনে ৪.৮ মিলিয়ন লোক চাকরি হারিয়েছে, যুদ্ধ চলতে থাকলে যা ৭ মিলিয়নে উন্নীত হবে। এবং বহু মাস যুদ্ধের পর শিশুরা বিদেশে নতুন স্কুলে মনযোগ স্থাপন করবে, মায়েরা তাদের নতুন জগতে থিতু হবে এবং তারা তাদের স্বামী এবং পিতার সাথে যোগ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। কেউ কেউ অবশ্যই ইউক্রেনে ফিরে আসবে, কিন্তু অনেকেই দেশপ্রেমের আহ্বানের চেয়ে তাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য এবং শিশুদের সুযোগকে অগ্রাধিকার দেবে।
যুদ্ধ সমাজের বুনন ছিঁড়ে দিয়েছে। রাশিয়ান ভাষার স্থানীয় ইউক্রেনীয় ভাষাভাষী, যারা জনসংখ্যার অন্তত এক তৃতীয়াংশ, তারা তাদের মাতৃভাষা ব্যবহার করতে অস্বস্তি বোধ করে, এমনকি ভয় পায়। জাতীয়তাবাদকে সামনে রাখা হলেও তাদের পারস্পারিক আস্থা ভেঙে গেছে। এখন অনেক ইউক্রেনীয়রা ভাবতে শুরু করেছে যে, দেশটি কীভাবে নিজেকে পুনর্র্নিমাণ করবে। রাশিয়া যত দ্রুতই পিছিয়ে পড়ুক না কেন, ইউক্রেনের সম্প্রদায়িক পুনর্গঠন একটি চ্যালেঞ্জ হবে। মার্কিন সরকার মে মাসে তার কিছু কূটনৈতিক কর্মীদের প্রতীকীভাবে কিয়েভে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু গুরুতর ও বিপজ্জনকভাবে দুর্বল দেশটির এখন প্রতীক এবং অস্ত্রের চেয়েও বেশি কিছু প্রয়োজন। পরাজিত না হওয়া মানে জয়ী হওয়া নয়। তাই ইউক্রেনকে প্রথমে জয়ী এবং তারপর পুনগর্ঠিত করতে সাহায্য করার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে একটি সুদীর্ঘ এবং গভীর প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।