Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিষেধাজ্ঞায় মার্কিন ডলার থেকে সরে যাবে রাশিয়া

ওয়াশিংটন চায় ইউক্রেনের শেষ ব্যক্তি জীবিত থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ থাকুক : চীন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার শান্তি আলোচনার অংশ : লাভরভ আহত ব্রিটিশ বন্দির প্যারেড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বরাত দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় প্রধান প্রযুক্তিতে তার স্বাধীনতা জোরদার করার সময় রাশিয়া মার্কিন ডলার থেকে দূরে সরে যেতে এবং আমদানির উপর কম নির্ভর করতে চাইছে।

ল্যাভরভ সিনহুয়া নিউজ এজেন্সির সাথে একটি লিখিত সাক্ষাৎকারে বিশদ বিবরণ ছাড়াই বলেছেন, ‘আমরা রাশিয়ার অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক কর্মসূচি জোরদার অব্যাহত রাখব’।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ মাসের শুরুতে বলেছিল যে, নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধুমাত্র ইউয়ান এবং সোনার দখলে রেখে যাওয়ার পরে এটি বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রাগুলোর কোনো স্পষ্ট বিকল্প খুঁজে পায়নি।

ইতোমধ্যে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে। দুই দেশের প্রতিনিধিদল সম্ভাব্য চুক্তির খসড়ার দিকে কাজ করছে। ল্যাভরভ বলেছেন, চীনা কূটনীতিকদের আলোচনার বিষয়ে ব্রিফ করা হয়েছে। তাকে উদ্ধৃত করে সিনহুয়া বলেছে, ‘আমরা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে, যদিও অগ্রগতি সহজ ছিল না’।

আহত ব্রিটিশ বন্দীর প্যারেড : ইউক্রেনে রুশ সেনাদের হাতে যুদ্ধরত অবস্থায় তিন ব্রিটিশ নাগরিক আটক হয়েছে। একজন আহত ব্রিটিশ ব্যক্তিকে ইউক্রেনে আটক করা হয়েছে এবং রুশবাহিনী টেলিভিশনে প্যারেড করিয়েছে। ভিডিওতে তিনি নিজেকে অ্যান্ড্রু হিল হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন এবং ইউক্রেনের বিদেশী সৈন্যদলের অংশ ছিলেন। তার পদমর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: ‘আমার কোনো পদ নেই। আমি শুধু জানি বিদেশী সৈন্যদল বলেছে, আমি সাহায্য করতে পারি’। ভিডিও চলাকালে তার বাম হাতে এবং তার মাথায় একটি ব্যান্ডেজ দেখা যায়। সে তখন বলে যে, তার বাবা নববর্ষের প্রাক্কালে মারা গেছেন এবং তার মায়ের সাথে তার সম্পর্ক নেই।

মি. হিল যোগ করেছেন যে, তার চার সন্তান এবং একজন সঙ্গী রয়েছে। তিনি বলেছেন যে, তার পাসপোর্ট রাশিয়ান সৈন্যরা নিয়ে গেছে। মি. হিল এখন ইউক্রেনে রুশ সেনাদের হাতে আটক তৃতীয় ব্যক্তি। ইউক্রেনের সহকর্মী ইউকে নাগরিক স্কট সিবিলি (৩৬) ইউক্রেনে যুদ্ধে নিহত হওয়ার পরে এ গ্রেফতার প্রকাশ্যে আসে।
পররাষ্ট্র, উন্নয়ন এবং কমনওয়েলথ অফিস নিশ্চিত করেছে যে, একজন দ্বিতীয় ব্যক্তিও নিখোঁজ হয়েছে, একটি বিবৃতিতে যোগ করেছে: ‘আমরা একজন ব্রিটিশ নাগরিক সম্পর্কে সচেতন, যে ইউক্রেনে নিখোঁজ এবং তাদের পরিবারকে সমর্থন করছে। আমরা জরুরিভাবে আরো তথ্য খুঁজছি’।

ব্রিটিশ নাগরিক এইডেন অ্যাসলিন (২৮) এবং শন পিনার (৪৮) এ মাসের শুরুতে রাশিয়ান বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর দুই ব্রিটিশ ত্রাণকর্মীও নিখোঁজ হয়েছেন। একটি অলাভজনক সংস্থা প্রেসিডিয়াম নেটওয়ার্ক বলেছে যে, দুই কর্মীকে জাপোরিঝিয়া শহরের দক্ষিণে একটি চেকপয়েন্টে আটক করা হয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তর জরুরিভাবে দাবির বিষয়ে আরো তথ্য চাইছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান স্কাই নিউজকে বলেছেন, ‘পররাষ্ট্র দপ্তর এ দুই ব্যক্তিকে সমর্থন ও সনাক্ত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে’।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার শান্তি আলোচনার অংশ : রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা মস্কো এবং ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনার অংশ, যা ‘কঠিন’ কিন্তু প্রতিদিন চলতে থাকে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গতকাল প্রথম দিকে প্রকাশিত মন্তব্যে একথা বলেছেন। কিয়েভ শুক্রবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল যে, রাশিয়ার আগ্রাসন শেষ করার বিষয়ে তৃতীয় মাসে আলোচনা এখন পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
‘বর্তমানে, রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল আসলে একটি সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া ভিডিও-কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতিদিনের ভিত্তিতে আলোচনা করছে’।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো জোরদার করা দরকার এবং আলোচনার অংশ হতে পারে না। ইউক্রেন এবং রাশিয়া ২৯ মার্চ থেকে মুখোমুখি শান্তি আলোচনা করেনি এবং ইউক্রেনের অভিযোগে পরিবেশটি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে, রাশিয়ান সৈন্যরা কিয়েভের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে প্রত্যাহার করার সাথে সাথে নৃশংসতা চালিয়েছিল। মস্কো দাবি অস্বীকার করেছে।

মস্কো ইউক্রেনে তাদের কর্মকাণ্ডকে তার প্রতিবেশীকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ‘নাজিমুক্ত’ করার জন্য একটি ‘বিশেষ অভিযান’ বলে অভিহিত করেছে। ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা বলছে, রাশিয়া বিনা প্ররোচনায় আগ্রাসন শুরু করেছে।
লাভরভ বিশদ বিবরণ ছাড়াই বলেন, ‘আলোচ্যসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে, ন্যাজিফিকেশন, নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার স্বীকৃতি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, রুশ ভাষার মর্যাদা’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে’।

লাভরভ আরো বলেন, ‘আমরা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে, যদিও সেগুলো কঠিন’।
ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা মস্কোর ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় স্বর্ণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রায় অর্ধেক ফ্রিজ করেছে এবং রাশিয়ার অর্থনীতিকে আঘাত করেছে।


ওয়াশিংটন চায় ইউক্রেনের শেষ ব্যক্তি জীবিত থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ থাকুক : চীন
আমেরিকা ইউক্রেন যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে রাশিয়াকে দুর্বল করে ফেলতে চায় বলে অভিযোগ করেছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান গত শুক্রবার বেইজিং-এ সাংবাদিকদের ডেইলি ব্রিফিং-এর সময় এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, যখন ইউরোপসহ বিশ্ব সমাজ এ যুদ্ধ বন্ধ করতে আগ্রহী তখন আমেরিকা এ যুদ্ধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। ওয়াশিংটন চায় ইউক্রেনের শেষ ব্যক্তি জীবিত থাকা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলতে থাকুক। ঝাও বলেন, মার্কিন সরকার ইউক্রেনে অর্থ ও অস্ত্র পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। আমেরিকা নিজেই বলেছে, সে রাশিয়াকে দুর্বল করে ফেলতে চায়। আমেরিকা সমরাস্ত্র ও নানা ধরনের অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে ইউক্রেনকে সহযোগতা করে যাচ্ছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে একথা উপলব্ধি করতে হবে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যকার কোনো সমস্যা নয় বরং এই যুদ্ধ ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে চলছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাটো জোট। রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তের কাছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর উস্কানিমূলক তৎপরতার জবাব দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকা এ যুদ্ধ বন্ধ করতে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র প্রদান করে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করার নীতি গ্রহণ করেছে। এর ফলে ইউক্রেন সংকট জটিলতর হচ্ছে। সূত্র : ব্লুমবার্গ, দি গ্লোব অ্যান্ড মেইল, স্ট্যান্ডার্ড ইউকে, সিনহুয়া।



 

Show all comments
  • Shaheenur Rashid ১ মে, ২০২২, ৪:৪৬ এএম says : 0
    একদম বিনা কারণে,ন্যাটোর মাধ্যমে রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার একটি ঘৃণ্য অপচেষ্টা থেকে আজকে পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।হ্যাঁ,ইতিহাসে একথাই লেখা থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sakhawat Hossain ১ মে, ২০২২, ৪:৪৭ এএম says : 0
    পশ্চিমা দেশগুলো যুক্ত রাস্ট্র তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে চাইতেছে যুদ্ধ করতে করতে রাশিয়া তার পাওয়ার হারিয়ে ফেলুক যাতে করে তারা সারা বিশ্বে টেরোরিস্টের মাধ্যমে বিশ্বের মোড়ল হিসেবে থাকতে পারে। অার তাদের অারো একটা চাওয়া তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ যাতে ইউরোপ তার অর্থ নীতি হারিয়ে ফেলুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Alamgir ১ মে, ২০২২, ৪:৪৭ এএম says : 0
    খেলোয়াড় তো ইউক্রেনে না যুদ্ধ টা আমেরিকা vs রাশিয়া। তাই আমেরিকা পরাজিত না হলে পৃথিবীতে অশান্তি নয়াদিগন্তের সূচনা হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • M.A. Wahed Mridha ১ মে, ২০২২, ৪:৪৮ এএম says : 0
    নয়া সাম্রাজ্য বাদী রাশিয়া। ভবিষ্যৎ না ভেবে যুদ্ধ শুরু করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sakibul Hasan ১ মে, ২০২২, ৪:৪৮ এএম says : 0
    এ যুদ্ধে ইউক্রেনের পরাজয় ঘটলেও রাশিয়া তার সামরিক শক্তি আর বিশ্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা অনেকাংশেই হারাবে। আর এটাই চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর তার পশ্চিমা মিত্ররা। কারন এটি ঘটলেই কেবল তারা নিশ্চিন্তে চীনের আধিপত্য রুখে দিতে পারবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed B ১ মে, ২০২২, ৯:১৮ এএম says : 0
    USA and UK যুদ্ধ শেষ চায় না । ওদের ভু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া-ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ